ঢাকা, সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাসভর্তি দর্শক নিয়ে বিশ্বকাপ মাঠে প্রবাসী বাংলাদেশি

বাসভর্তি দর্শক নিয়ে বিশ্বকাপ মাঠে প্রবাসী বাংলাদেশি
বাস ভর্তি সমর্থকদের সঙ্গে নাশিত রহমান

এই বিশ্বকাপে টাইগারদের প্রতিটি ম্যাচেই প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি সমর্থককে স্টেডিয়ামে হৈ হল্লা করতে দেখা যায়। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে দিয়ে তারা নিজ দলের ক্রিকেটারদের উৎসাহ দেন। এদের মধ্যে আবার এমন কিছু দর্শক আছেন যারা একা খেলা দেখে মজা পান না, তাদের চাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অনেক সমর্থক। এরকমই একজন ভক্ত হচ্ছেন লন্ডনের বাসিন্দা ও আইনজীবী নাশিত রহমান। তিনি মাঠে টাইগার দলের সমর্থক বাড়াতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি বাস ভাড়া করে লোকজন নিয়ে খেলা দেখতে যান। এভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচেই তিনি ৩০/৪০ জনেরও বেশি ক্রিকেট প্রেমীকে লন্ডন থেকে খেলার মাঠে নিয়ে যান।

আজও তিনি টাইগার সমর্থকদের একটি দল নিয়ে নিজ উদ্যোগে যাচ্ছেন বার্মিংহামে, বাংলাদেশ-ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি উপভোগের জন্য।

বিবিসি বাংলাকে নাশিত রহমান বলছেন, ‘দলকে সমর্থন যোগানো কিংবা প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের পাল্টা নানা কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা স্টেডিয়ামকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।’

এখন প্রশ্ন হলো এই উদ্যোগ কেন নিলেন নাশিত রহমান। এ ব্যাপারে নাশিত রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে যে ম্যাচে বাংলাদেশ হারিয়েছিল সেই ম্যাচেও তিনি বাংলাদেশি দর্শকদের নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন।

‘তবে আমরা যারা বিদেশে থাকি আমাদের দুটি পরিচয়। প্রথমত আমরা বাংলাদেশি দ্বিতীয়ত আমরা হয়তো ব্রিটিশ, আমেরিকান কিংবা অন্য দেশের নাগরিক। যে কারণে আমরা অনেক সময় আত্মপরিচয় দ্বন্দ্বে ভুগি। তার বাংলাদেশের মানুষদের কাছে অনেক সময় আমরা যারা প্রবাসী আছি, তাদের দেশপ্রেম অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। এ দুটি বিষয়ের উত্তর দেয়া থেকেই বিষয়টি মাথায় আসে।’

তিনি বলেন, মূলত বিলেতের বুকে ছোট একখণ্ড বাংলাদেশ তৈরির চিন্তা থেকেই তাদের এ প্রয়াস।

এই সেই বাস

ভাবনাটা মাথায় এলো কিভাবে?

নাশিত রহমানের শৈশব কেটেছে ঢাকার ফুলার রোডে। শিক্ষাজীবনে ঢাকা কলেজ কিংবা ল্যাবরেটরি স্কুলে যখন পড়েছেন তখনই ক্রিকেট বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।

‘ফুটবলও আমাদের সময় জনপ্রিয় ছিলো। আবার ক্রিকেটও। কিন্তু পরে ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দুটি খেলাই খেলতাম ও ভালবাসতাম। এখন দেশের সুনাম ক্রিকেট যেভাবে আনতে পারে সেটা ফুটবলের দ্বারা সম্ভব নয়। তাই সেটাকেই কাজে লাগানোর চিন্তা করেছি।"।

তিনি বলেন, ‘বন্যা কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতার মতো নানা নেতিবাচক খবরের মধ্যে 'ক্রিকেট' বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক খবর দেয় এবং এটা প্রবাসীদের আন্দোলিত করে।’

নাশিত রহমান জানান কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো, ২০১০ সালে ইংল্যান্ডকে হারানোসহ অনেক খেলাই তারা এভাবে দেখতে গিয়েছিলেন স্টেডিয়ামে।

তিনি বলেন আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও খেলা হলে, তিনি অনেক আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করেন।

ব্যয় মেটান যেভাবে

নাশিত রহমান বলেন তাদের বাল্যবন্ধুর একটি বাস কোম্পানি আছে লন্ডনে। তিনি স্কুলের বাচ্চাদের সেবা দিয়ে থাকেন। আইনি নানা বিষয় আছে তাতে। সে কারণে তার কোম্পানির সহায়তা চাইলে তিনি খুব কম খরচে বাসটি দিতে রাজি হন। আধুনিক বাসটিতে চড়ে তারা মজা করতে করতে স্টেডিয়ামে যান। তাছাড়া যারা বাসে যান তারাও অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করে বলে জানান তিনি।

‘অনেক দর্শক আছে যারা সব খেলা দেখতে যান। অনেকে প্লাটিনাম টিকেট কিনেন। সবাই দল বেধে যেতে আসতে মজা পাচ্ছে। আবার মাঠে আলাদা আলাদা জায়গায় বসে অনেকে টিকেটের কারণে। কিন্তু বাসে এক সাথে মজা করতে করতে যাচ্ছে নিজেরা মিলে। বিষয়টি বেশ উপভোগ্য হয়।’

যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যায়

তিনি বলেন যারা বাসে করে খেলা দেখতে যান তাদের কাছ থেকে কিছু অর্থ নেয়া হয়, কারণ এটি না হলে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা থাকেনা।

‘প্রচুর দর্শক পাওয়া যায়। এমন অনেকেই আছেন যারা দেশের প্রতিটি খেলা দেখেন। সকাল ছয়টায় আমরা রওনা হয়ে যাই খেলার দিন। বাংলাদেশিরা খেলা দেখতে অনেক অর্থ ব্যয় করেন। আর এটা ট্রেনে যাওয়ার চাইতেও অনেক সাশ্রয়ী। সে কারণে সাড়া মেলে ভালো"।

নাশিত রহমান বলেন এখন যারা এই বাসে যাচ্ছেন তারা সবাই খুব সিরিয়াস সমর্থক।

‘দলের ভালো মন্দ সব কিছুতেই আমরা দলকে সাহস যোগানো বা পাশে থাকার জন্য যাই। আমাদের খেলোয়াড়দের অন্য দেশের সমর্থকরা বিদ্রূপ করে কিছু বললে আমরা তারা পাল্টা জবাব দেই। সবমিলিয়ে জমজমাট একটা পরিবেশ তৈরি হয় স্টেডিয়ামে। এটি দারুণ উপভোগ্য হয়।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • পঠিত