ঢাকা, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

অলিম্পিকের সুইমিংপুলে ঝড় তোলা মারশাঁ

  ক্রীড়া ডেস্ক

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৩৫  
আপডেট :
 ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৩৯

অলিম্পিকের সুইমিংপুলে ঝড় তোলা মারশাঁ
২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক জয়ের পর বিজয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে মারশাঁ

সময়ের হিসেবে ব্যবধানটা ১০০ মিনিটের কিছু বেশি। প্রথম সোনা জয়ের পর আবারও লা ডিফেন্স অ্যারেনার পুলে হাজির হলেন লিওঁ মারশাঁ। ঘরের ছেলেকে বরণ করে নিতে দর্শকরা ছিলেন প্রস্তুত। লিওঁ মারশাঁ পুলে নামলেন। উজার করে দিলেন নিজের সবটাই। গড়লেন রেকর্ড। এক রাতেই জয় করলেন নিজের দ্বিতীয় সোনা। ঢুকলেন রেকর্ডবুকে। অলিম্পিকের ইতিহাসে এক রাতে দুই সোনা জয়ের কীর্তি ছিল না আর কারোরই।

মারশাঁ নামলেন, সাঁতরালেন, রেকর্ড গড়লেন, জয় করলেন! ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্ট পার হলো এভাবেই। টোকিও অলিম্পিকে হাঙ্গেরির ক্রিস্তভ মিলাক রেস শেষ করেছিলেন ১ মিনিট ৫১.২৫ সেকেন্ড। মারশাঁ তারই সামনে এই রেকর্ড ভাঙলেন। ১ মিনিট ৫১.২১ সেকেন্ড সময় নিয়ে শেষ করে জয়ে করেছেন স্বর্ণপদক। মারশাঁর চেয়ে ০.৫৪ সেকেন্ড পেছনে থেকে রুপা জিতেছেন মিলাক। ব্রোঞ্জ পেয়েছেন কানাডার ইলিয়া খারুন।

প্রথম সোনা জয় হয়ত উদযাপনই করা হয়নি তার। দেড়ঘণ্টা পর হাজির হয়েছেন আবারও। এবারের ইভেন্ট ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক। নতুন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে ব্রেস্টস্ট্রোক জিততে মারশাঁ সময় নিয়েছেন ২ মিনিট ৫.৮৫ সেকেন্ড। অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক স্টাবলেটি–ক্রুক ২ মিনিট ৬.৭৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতেছেন রুপা। ব্রোঞ্জ পেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের কাসপার কোরবু।

অলিম্পিক সাঁতারে একই দিনে দুটি ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিততে পারেননি রেকর্ড ২৩ সোনার মালিক ফেলপসও। এবারের অলিম্পিকে তৃতীয় সোনা নিজের ঝুলিতে পুরেছেন মারশাঁ। এর আগে ৪০০ মিটার মিডলেতে ভেঙেছেন মাইকেল ফেলপসের রেকর্ডটা। সাঁতারের জগতে তাকে নতুন রাজাও হয়ত বলা যায় অনায়াসে।

লিওঁ মারশাঁর এমন উত্থানের গল্পটা অবশ্য একদিনের না। নিজেকে সাঁতারের পুলে জানান দিয়েছেন বেশ কয়েকবছর ধরেই। ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার মিডলেতে সোনা এবং ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে পেয়েছিলেন রুপা। ২০২৩ সালে এসে ২০০ মিটার মিডলে, ৪০০ মিটার মিডলে ও ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে জিতেছেন সোনা। বর্তমানে ৪০০ মিটার মিডলেতে বিশ্ব রেকর্ডের মালিক মারশাঁ।

মারশাঁর এমন সাফল্যের পেছনে পরিবারের অবদান কম নয়। বাড়ির ছোট ছেলে মারশাঁ নিজের ঘরে চতুর্থ সাঁতারু। বাবা জেভিয়ার ১৯৯৬ সালে আটালান্টায় এবং ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে ফ্রান্সের প্রতিনিধি ছিলেন। জেভিয়ার অবশ্য বড় কিছু করতে পারেননি। ইন্ডিভিজুয়াল মেডলিতে তার সাফল্য ৭ম হওয়া।

মা সেলিন অংশ নিয়েছিলেন ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিকে। ৪ ইভেন্টে থেকেও বড় কিছু করা হয়নি তার। ২০০ মিটারে ছিলেন ১৪তম। চাচা ক্রিস্টোফার খেলেছিলেন ১৯৮৮ অলিম্পিকে। তিনি ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ছিলেন ১২তম। মা-বাবা আর চাচার না পারার আক্ষেপ যেন ঘোচালেন লিওঁ মারশাঁ। সেটাও করেছেন নিজের দেশ ফ্রান্সে।

বব বোম্যান নামটা হয়ত সাঁতারের অনেক অনুসারীর কাছেও অচেনা। খেলোয়াড়দের সাফল্যের ভিড়ে অনেক সময়ই চাপা পড়ে থাকে কোচ বা ট্রেনারের নাম। বব বোম্যানের নামটাও হয়ত এমনই। এর আগে মাইকেল ফেলপসের কোচ ছিলেন। বর্তমানে তিনি লিওঁ মারশাঁর গুরু!

৪০০ মিটার মিডলেতে যেদিন লিওঁ সোনা জয় করলেন, সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বোম্যান। ১৫ বছর আগে তারই শিষ্য ফেলপস এই ইভেন্টে করেছিলেন অলিম্পিক রেকর্ড। এবার আরেক শিষ্য লিওঁ মারশাঁ ভাঙলেন সেই রেকর্ড। এমন কান্না হয়ত বোম্যানের চোখেই সবচেয়ে বেশি মানায়।

সবশেষ তিন বছর মারশাঁ নিজের অনুশীলন চালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এরপর সেখান থেকে বোম্যানের সঙ্গে চলে যান ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে। যদিও খেলছেন অ্যারিজোনা স্টেড সান ডেভিলস টিমের হয়ে। তবে সব ছাপিয়ে লিওঁ মারশাঁ একান্তই ফ্রান্সের।

ইয়ান থর্প নামটা হয়ত এখনো নস্টালজিক করে তোলে একটা প্রজন্মকে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। অলিম্পিক তখনও বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতাই ছিল। তবে টিভি আর পত্রিকার প্রসার সেটাকে ছড়িয়ে দিলো আরও অনেকখানি। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ান এক সাঁতারুর নাম ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। নামটা ইয়ান থর্প।

খুব বেশি লম্বা ক্যারিয়ার হয়নি তার। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকের মাঝামাঝি… দশ থেকে বারো বছরের একটা ক্যারিয়ার। সাঁতারের সাপেক্ষে ক্যারিয়ার আরও লম্বা হতেই পারত। থর্প থামলেন আগেই। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য। তবু ২৩ বিশ্বরেকর্ড গড়ে থর্প ঠিকই নিজেকে সাঁতারের জগতে পুরোপুরি স্থায়ী করে নিলেন।

২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিক থেকে শুরু হয় আরেক তরুণের উত্থান। এরপর এথেন্স, বেইজিং, লন্ডন আর রিও অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন মার্কিন সাঁতারু মাইকেল ফেলপস। ৫ অলিম্পিকে ২৩ সোনা তার নামের পাশে। অলিম্পিকে সর্বোচ্চ স্বর্ণপদক অর্জনের রেকর্ড এখনো সঙ্গ দেয় ফেলপসকে। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে এই মার্কিন তারকাই ছিলেন বিশ্ব সাঁতারের পোস্টার বয়।

পুল থেকে ফেলপস সরে গিয়েছেন বছর আটেক আগে। মাঝে অনেক তারকাই এসেছেন। কিন্তু সেখান থেকে কাউকে ঠিক পোস্টার বয় বলা চলে না। গেল দুই বছর ধরে অবশ্য সেই আক্ষেপ মিটিয়েছেন ফ্রান্সের লিওঁ মারশাঁ। একের পর এক পদক জয় করেছেন গেল দুই বছর ধরে। তবে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে জানান দেয়ার বড় সুযোগ পেয়েছেন এই অলিম্পিকে।

রেকর্ডে আর মেডেলে ফেলপস যেন হয়ে উঠেছিলেন পুলের একক সম্রাট। তার আগে রেকর্ডের বরপুত্র হয়ে ছিলেন ইয়ান থর্প। দুই কিংবদন্তির পর এবার হয়ত সময়টা লিওঁ মারশাঁর। অস্ট্রেলিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের পর সাঁতারের মঞ্চে এবার হয়ত উড়বে ফ্রান্সের পতাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবিটি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত