প্রেমিকের জন্য হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ছেড়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিন
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৮ আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৯
টলিউড থেকে হলিউড প্রায় সিনেমায় দেখা যায় প্রেমের টানে বিলাসী জীবনকে পিছনে ফেলে প্রেমিকের হাত ধরছে ধনকুবেরের কন্যা। হতদরিদ্র প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে বিপুল সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ার সুযোগ ঠেলে ফেলছে। বাস্তবেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে। ১৫ বছর আগে তেমনই করেছিলেন মালয়েশিয়ার ধনকুবের খু কায় পেং এর কন্যা অ্যাঞ্জেলিন ফ্রান্সিস খু। প্রেমিকের হাত ধরতে ২,৪৮৪ কোটি টাকার পারিবারিক সম্পত্তিকে না বলেছিলেন তিনি।
দেশবিদেশের নানা গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে অ্যাঞ্জেলিনের সে কাহিনি। বিয়ের পর যিনি জীবনসঙ্গীর পদবিকে নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছেন। আমেরিকার একটি পত্রিকার বিচারে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার প্রথম ৫০ জন ধনকুবেরের তালিকায় অন্যতম ছিলেন অ্যাঞ্জেলিনের বাবা পেং। তার পূর্বপুরুষেরা চীন ছেড়ে সে দেশে মালয়েশিয়া এসে জীবনযাপন করতে থাকে।
মালয়েশিয়ায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ‘লরা অ্যাশলি’ নামে ব্রিটেনের একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন, ফার্নিশিং এবং টেক্সটাইল ডিজাইন সংস্থায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন পেং। ২০১৫ সালে আমেরিকার পত্রিকাটি জানিয়েছিল, ওই ব্রিটিশ সংস্থায় ৪৪ শতাংশ শেয়ারও রয়েছে তার।
নিজের ব্যবসা বৃদ্ধি করতে মালায়ান ইউনাইটেড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমইউআই) গোষ্ঠীর ছাতার তলায় হোটেল, খুচরো পণ্য, পর্যটন, ফাইনান্সের ক্ষেত্র থেকে নানা ব্র্যান্ডের মাধ্যমে ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছেন ৮৩ বছরের পেং। ২০১৫ সালে আমেরিকার একটি জনপ্রিয় পত্রিকার দাবি ছিল, এমইউআই গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা পেং-এর সম্পত্তির পরিমাণ ২,৪৮৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তার ছেলে অ্যান্ড্রুর হাতে এমইউআইর দায়িত্ব ছেড়ে অবসর নেন তিনি।
অ্যাঞ্জেলিনের মা পলিন চাই ও কম খ্যাতনামী নন। অ্যাঞ্জেলিনের মা পলিন চাই ছিলেন সাবেক ‘মিস মালয়েশিয়া। তার তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে। ধনকুব কন্যার প্রেমকাহিনিও কিছুটা সিনেমার গল্পের মতো। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ক্যারিবীয় সহপাঠী জেডিডিয়া ফ্রান্সিসের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অ্যাঞ্জেলিনের। পড়াশোনার ফাকে প্রেম চলেছিল তাদের।
অক্সফোর্ডের সহপাঠীর সঙ্গে ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখতেন পেং-এর চতুর্থ সন্তান অ্যাঞ্জেলিন। তবে তাদের বিয়েতে রাজি ছিলেন না পেং। বাবার মতে বিয়ে না করলে তাকে বিপুল সম্পত্তি থেকে বেদখল করা হবে, তা ভাল করেই জানতেন অ্যাঞ্জেলিন। তবে কেন প্রেমিকের হাত ধরলেন তিনি? ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের একটি সাক্ষাৎকারে অ্যাঞ্জেলিন বলেন, আমার মনে হয়েছিল, আমাদের বিয়ে নিয়ে বাবার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তাই কোনটা ঠিক, তা বুঝতে কস্ট হয়নি।
বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার সুযোগ হারিয়ে আফসোস হয় না? অ্যাঞ্জেলিন বলেন, প্রভাবশালী হওয়াটা এক অর্থে আশীর্বাদ বটে। অর্থের বিনিময়ে অনেক কিছু করা যায়, বহু পথ খুলে যায়। তবে সেই সঙ্গে কিছু উপরি দিক থাকে। যেগুলোর মধ্যে একটি হল ক্ষমতার দখলদারি। আর্থিক ক্ষমতা থাকলে বহু ক্ষতিকারক বৈশিষ্ট্য ফুলেফেঁপে ওঠে। তাতে নানা সমস্যা শুরু হতে পারে। আমি সৌভাগ্যবতী যে আমার এ ধরনের মানসিকতা রয়েছে। আসলে সব ছেড়ে বেরিয়ে আসাটা খুবই সহজ। ওই সব নিয়ে কখনও বিশেষ চিন্তা-ভাবনা করিনি।
৩৪ বছরের অ্যাঞ্জেলিন পেশায় ফ্যাশন ডিজ়াইনার। অন্যদিক, ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসাবে কাজ করেন জেডিডিয়া। ২০০৮ সালে বিয়ে নিয়ে মতান্তর হওয়ায় মা-বাবার সংস্পর্শ ছাড়লে আবার তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার। এ বার অবশ্য আদালতে।
২০১৩ সালে পলিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল পেং-এর। সে সময় আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল অ্যাঞ্জেলিনকে। আদালতে মায়ের পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন পেং-কন্যা। সংবাদমাধ্যমের কাছে অ্যাঞ্জেলিন জানিয়েছিলেন, পাঁচ সন্তানের জন্য কখনও সময় ব্যয় করেননি তার বাবা। তাদের একার হাতেই মানুষ করেছেন মা।
৬ কোটি ৪ লক্ষ পাউন্ডের সেই আইনি লড়াইয়ে পর পেং এবং পলিনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে বাবার সম্পর্কে কটাক্ষ করে অ্যাঞ্জেলিন বলেছিলেন, বাবার কাছে সব ছিল। বিশ্বস্ত, সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী স্ত্রী, বাবাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে এমন পাঁচ সন্তান। তবে যখন আপনার কাছে বেঁচে থাকার জন্য বেশি দিন হাতে নেই, সে সময় শেষের কয়টা দিন রাগ বা ঘৃণা নিয়ে কাটানো উচিত নয়। সূত্র: আনন্দবাজার
বাংলাদেশ জার্নাল/এএ