এই নির্বাচনে পেশি শক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না: জামায়াত আমির
নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫১ আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:১৭
![এই নির্বাচনে পেশি শক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না: জামায়াত আমির](/assets/news_photos/2025/02/14/image-284423-1739541344bdjournal.jpg)
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে। তবে যেন-তেন মার্কা নির্বাচন আমরা চাই না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে পেশি শক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না। এটা সহজে আসবে না। আমরা বুঝতে পারছি। এর জন্য বড় একটা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
শুক্রবার বিকেলে সাঠির পাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী নরসিংদী জেলা শাখার উদ্যেগে বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়েতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট ’২৪ এই জাতিকে একাটা ধাক্কা দেয়া হয়েছে। আরেকটি ধাক্কা এই জাতিকে দিতে হবে। অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। মৃত ভোটারদের চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। যেসব লোকেরা ভোটার হয়েছে, কিন্তু নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। সেসব ভোটরদের তালিকাভুক্ত করতে হবে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন সফল করতে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের সাথে হাত মিলিয়ে একাকার ছিল।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার পতন আন্দোলন করতে গিয়ে বিদেশে আমাদের ভাইয়েরা জেলে গিয়েছেন। তারা একসাথে আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। রেমিটেন্স বন্ধ করে স্বৈরাচার সরকারকে লাল ফ্লাগ দেখিয়েছিল। তাদেরকে স্যালুট জানাই। আমরা চাই এই নির্বাচনে প্রত্যেকটা প্রবাসী ভাই বোনকে ভোটার হিসেবে নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, মাঠ প্রশাসনে যারা আছেন। যারা অতীতে দায়িত্বের পরিচয় দিতে পারেন নাই। দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যাদের হাত থেকে জনগণের কেনা পয়সার বুলেট জনগণের বুকে বিঁধেছে। আমরা আগামী নির্বাচনে তাদের কোন দায়িত্বে দেখতে চাই না। প্রশাসনের সৎ ও দেশ প্রেমিক যারা আছেন, তাদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশবাসী কাজ করবে ইনশাল্লাহ্। জুলাই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তাবায়নে জামায়াতের আপোসহীন লড়াই চলবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, খুনিদের বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে সংস্কার সাধন করতে হবে। তারপর একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই তিনটি জনগণের দাবি। ২৪ এর গণহত্যায় অনেক মানুষ জীবন দিল। অনেক লাশ গুম করে ফেলেছে। আমার সেসব লাশের সন্ধান এখনো পাই নাই। ৩/৪ আগস্ট দুইদিন ইন্টারনেট বন্ধ করে মানুষকে মেরে লাশগুলো গুম করে ফেলা হয়েছিল।
৫ তারিখের পর নরসিংদীতে এখন আর কেউ চাঁদাবাজি করে কিনা জানতে চায় জামায়েতে ইসলামীর আমীর। চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু একজন পানের দোকানদারকে বলা হয় সকালের খাজনা দিয়ে ব্যবসা করবা। অসহায় মানুষ ভিক্ষার বাটি হাতে নিয়ে বসে। তারা বলে এখানে ভিক্ষা করতে হলে খাজনা দিতে হবে। এভাবে ঘাটে ঘাটে চাঁদা। জনে জনে চাঁদা। অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। আপনি একটি বাড়ি বানাবেন, দেখবেন মানবরূপী দানবরা এসে হাজির হয়ে বলবেন, চাচা বা বড় ভাই বাড়ি বানান অসুবিধা নেই। আমাদের খেয়াল রাখবেন। আমাদের সন্তানেরা কি এই জন্য জীবন দিয়েছিল? তোমরা যারা শহীদ হয়ে জাতীকে ঋন করেছো। আমরা আল্লাহর নামে শপথ করে তোমাদের কথা দিচ্ছি তোমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার আমাদের আপোসহীন লড়াই চলবে। এই সমাজ থেকে চাঁদাবাজী দুর্নীতি দুঃশাসন যতক্ষণ পর্যন্ত বিদায় না নেবে, ততক্ষণ আমারদের লড়াই চলবে। জামায়াতের আমীর বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব কটি কার্যালয় কার্যত সীলগালা করে রাখা হয়েছিল। একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমরা নিবন্ধনটা এখনও ফিরে পাইনি। নিবন্ধনের জন্য এখনো আদালতে লড়াই করতে হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে। এছাড়া দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক জাল ফেলে ফিরিয়ে এনে সরকারি কোষাগারে জমা করার দাবি করেন জামায়াতের আমির।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নরসিংদী জেলা আমীর মাওলানা মো. মোছলেহুদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ.ফ.ম আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মাহানগর আমির আব্দুল জব্বার প্রমুখ।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি