নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:২১
![নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর](/assets/news_photos/2025/02/14/image-284417-1739536418bdjournal.jpg)
আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সচেষ্ট না হলে জনগণের সামনে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগের প্রতি কোনো দয়া না দেখিয়ে তাদের সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বর্জন করতে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আলোচনা সভায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা বলেন।
স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি: জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা’ শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবির আন্দোলনে জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহা শহীদ হন। এরপর থেকে দিনটি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তি’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘এই মুজিববাদী সংবিধানকে নতুন করে না সাজাতে পারলে আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারব না। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক গণপরিষদ গঠন করা দরকার। সেই গণপরিষদে জনমানুষের সংবিধান প্রণয়নের মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারব।’
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গড়তে যাওয়া রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি ইত্যাদি মতাদর্শভিত্তিক রাজনীতি সমাজকে বিভাজিত করে রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির যে একটি দল আসছে, সেই দলটি হবে একটি মধ্যপন্থার দল। এই দলটি কোনো বাইনারি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে না। ছাত্র-জনতার যে রাজনৈতিক দলটি জনগণের সামনে আসতে যাচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক লড়াই হবে গণপরিষদ নির্বাচন ও একটি নতুন সংবিধান।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আশা করি, গণপরিষদের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন সংবিধান পাব।’
আওয়ামী লীগকে বিচারের জায়গায় নিয়ে আসা এবং সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে একটি গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে কীভাবে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলে দেশের মানুষ যদি সচেষ্ট না হয়, তাহলে জনগণের সামনে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে। এটি না করা হলে বাংলাদেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। এ জন্য সরকার, বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইন মন্ত্রণালয়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমরা বলব, যারা হামলা করে আমাদের ভাইদের শহীদ করেছে, কোনো দল বা পক্ষ-গোষ্ঠী তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন না। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাদের বর্জন করুন। বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন। আওয়ামী লীগকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগ যে ব্যানারটি রয়েছে, খুনের দায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্রুতগতিতে তাদের নিবন্ধন বাতিল করুন। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে খুনির কোনো ব্যানার যদি থাকে, খুনি হাসিনার বিচার ও আওয়ামী লীগের ব্যানারের বিষয়ে আগামী নির্বাচনের আগে যদি সমাধান না করা যায়, তাহলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ফেরার আর কোনো পথ থাকবে না।
সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তাজনূভা জাবীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য টিনা নন্দী, মুশফিকুর রহমান ও হুমায়রা নূর।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি