আরাফাত রহমান কোকোর আজ দশম মৃত্যুবার্ষিকী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২১ আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৫
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি)। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ইন্তেকাল করেন ক্রীড়া সংগঠক কোকো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছোট ভাই বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবীর খান জানান, দোয়া মাহফিলে বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাসসহ দলটির কেন্দ্রীয়, মহানগর এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
শায়রুল কবির খান জানান, শুক্রবার সকাল ১০ টায় বনানী করবস্থানে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত শেষে কোরআন তেলাওয়াত করা হবে। এ সময় বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
শুক্রবার বাদ আসর রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আরাফাত রহমান কোকোর জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দোয়া মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিএনপিও আরাফাত রহমান কোকোর জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। লন্ডনের স্থানীয় সময় বাদ আসর ব্রিকলেন জামে মসজিদে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শায়রুল কবীর খান।
আরাফাত রহমান ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলেও তিনি রাজনীতিক হিসেবে নয়, একজন ব্যবসায়ী এবং ক্রীড়াবিদ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ব্যবসা, ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেই নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছিলেন কোকো। একজন প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হয়েও তার মধ্যে ছিল না কোনো অহংকার। জীবনযাপন করতেন সাধারণ মানুষের মতো। মিতব্যয়ী, সজ্জন এবং সাদাসিধে এ মানুষটির খুব ঘনিষ্ঠজনরা জানেন তার জীবন সম্পর্কে। এ ছাড়া তিনি মাঝেমধ্যেই খেলনা আর চকোলেট নিয়ে পথশিশুদের কাছে ‘সারপ্রাইজ’ হিসেবে হাজির হতেন। তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন।
আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালেও খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। একটি দুই বেডের ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। নিজেই প্রতিদিন দুই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। বিনয়ী ও প্রচারবিমুখ কোকোর চরম শত্রুরাও তার ব্যক্তি চরিত্রের কোনো ত্রুটির কথা বলতে পারবেন না।
ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন শহর থেকে গ্রামে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ২০০৩ সালে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে বিসিবির একজন সদস্যও ছিলেন তিনি। ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য যে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন তিনি, বর্তমানে তার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ক্রিকেটকে জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা-গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মোহামেডান ক্লাবের এক্সিকিউটিভ কমিটির কালচারাল সেক্রেটারি ছিলেন।
বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ক্রিকেটের অনেক উন্নয়ন করেছেন কোকো। তিনি ক্রীড়া সংগঠক ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। বিসিবি ছাড়াও তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও সিটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
দেশের মানুষ রাজনীতির কারণে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার বড় ছেলে তারেক রহমানের নাম জানলেও আরাফাত রহমান কোকোর নাম খুব বেশি জানত না। ১/১১-এর সেনাসমর্থিত মঈন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর থেকে তার সম্পর্কে মানুষ বেশি জানতে পারে।
রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড নির্যাতন করে কোকোকে পঙ্গু করা হয়। নির্যাতনের ফলে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সেই সময় থেকেই তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে থাইল্যান্ডে যান কোকো। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ মালয়েশিয়ায়ই অবস্থান করছিলেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরএইচ