আপাতত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হচ্ছে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৫
যুক্তরাজ্যের দ্য লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে লিভারের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সে জন্য তাকে হিউম্যান সিরাম অ্যালবুমিন দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক এই তথ্য জানান।
মেডিকেল বোর্ডের ওই চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার শরীরে নতুন যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটা কেটেছে। বলা যায়, পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তার শারীরিক এই অবস্থায় লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। এটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, স্থাস্থ্যের অনেক দিক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল থাকলেও অনেক জটিলতা রয়ে গেছে। বয়সও বড় ফ্যাক্টর। শারীরিক সক্ষমতা যখন ভালো ছিল, তখন বিদেশে নেয়া গেলে একটা সুযোগ থাকত। অর্থাৎ এভারকেয়ার হাসপাতালে যখন চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন মেডিকেল বোর্ড বারবার তাগাদা দিয়েছিল উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠাতে। সেটি সম্ভব হয়নি।
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, লিভার প্রতিস্থাপনের বিকল্প হিসেবে হিউম্যান সিরাম অ্যালবুমিন দেয়া হবে। এটি মানুষের রক্তের প্লাজমায় সর্বাধিক প্রোটিন গঠন করে। এটি দেয়ার পর লিভারের ওপর চাপ পড়বে না। মেডিকেল বোর্ড নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। রিপোর্ট অনুয়ায়ী চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আমেরিকার জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, লন্ডন ও বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত সকল পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেছেন। আরও দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আগামী দুই-একদিনের মধ্যে ওনাকে দেখবেন। ম্যাডামকে এখন ওষুধ দিয়ে লিভার, কিডনি, ডায়বেটিস, প্রেশার, আর্থরাইটিস ও হার্টের জন্য চিকিৎসা করা হচ্ছে। ওষুধের বাইরে বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আর কীভাবে একই ছাদের নিচে ওনার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা দেয়া যায়- সেটি করার ওনারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তার আগে মেডিক্যাল বোর্ডের কয়েকজন এক্সটেন্ডেড মেম্বার আছেন, তারাও মতামত দেবেন। সে অনুযায়ী ওনার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসা চলবে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক আরও বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বন্দি থাকার কারণে, সুচিকিৎসা কম পাওয়ার কারণে, বাইরে নিতে না পারার জন্য যা হয়েছে সবকিছু বিবেচনায় রেখেই চিকিৎসকরা পরিকল্পনা করছেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানান, খালেদা জিয়াকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে নাও নেয়া হতে পারে। লন্ডন ক্লিনিকেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। লন্ডনে প্রচণ্ড ঠান্ডা চলছে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সবারই একটু কষ্ট হচ্ছে। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও নাতনিরা নিয়মিত হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী বাসা থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তরফ থেকে বিভিন্ন মজসিদে দোয়ারও আয়োজন করা হচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি তাঁকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরএইচ