ঢাকা, শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

শঙ্কা কাটছে না বিএনপির

  আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:২৭

শঙ্কা কাটছে না বিএনপির
ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার সমাপ্তি ঘটে। শেখ হাসিনার পতনে স্বস্তি ফিরে বিএনপিতে। জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, নির্যাতন না থাকায় স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে দলটি। সুযোগে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে বহু বছর ধরে নির্যাতিত হওয়ার দলটি নেতাকর্মী। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের মধ্যে দিয়ে যে স্বস্তি ফিরেছিল তা ইতোমধ্যে ধোঁয়াশায় রূপ নিচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন শঙ্কা দেখছে বিএনপি।

সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার পতনে স্বস্তি ফিরেছে। যে কোনো ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেই জনমনে স্বস্তি আছে। স্বস্তির সঙ্গে নতুন শঙ্কাও আছে। মূল শঙ্কা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকাল কতদিন হবে সে বিষয়ে সরকারে মনোভব বোঝা যাচ্ছে না। তারা কী করতে চান, কত সময়ের মধ্যে করতে চান তা বিএনপির কাছে পরিষ্কার না। সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন দেখা যাচ্ছে। মাইনাস টু ফর্মুলা এখনো চলমান আছে। বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন থামিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বিএনপি বলছে, দেশের প্রধান ইস্যু নির্বাচন। ভোটের অধিকার আর গণতন্ত্রের পথকে আরো বিলম্বিত করতে একটার পর একটা ইস্যু সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংবিধান বাতিল, সংস্কার যাই হোক সিদ্ধান্ত হতে হবে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও সংসদের মাধ্যমে। এর বাইরে কোনো গোষ্ঠী, দল বা কোনো গ্রুপের কিছু করার সুযোগ নেই।

সম্প্রতি বৈষম্য-বিরোধী ছাত্রনেতাদের কর্মকাণ্ডে সতর্কভাবে দেখছে বিএনপি। তারা সংস্কারের নামে নির্বাচনকে দির্ঘায়ীত করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য মত দেন যে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে মুখোশ পরে রয়েছে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের একটি অংশ। এদের কেউ কেউ অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সুযোগ বুঝে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। এছাড়াও কেউ কেউ আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সমন্বয়ক হয়েছেন। তারা এখন ক্ষমতা উপভোগ করছে। এই গ্রুপটা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। সংস্কারের কথা বলে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিএনপির সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। পরিকল্পিতভাবে নানা জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কেউ কেউ ক্ষমতাকে উপভোগ করতে চায়। নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। অগণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতাবান হতে চায়। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের মাইনাস টু ফর্মুলা ব্যর্থ হয়েছে। এবারও যদি কেউ এই পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। অতীতের মত এবারও সেটাও ব্যর্থ হবে।

বিএনপির মনে করছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সংবিধান বাতিলের মধ্যে দিয়ে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি মহল। এটি সফল হলে দীর্ঘ সময়ের জন্য দেশের শাসন ক্ষমতায় অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে চলে যেতে পারে। ফলে সংবিধান সংকট সৃষ্টির ব্যাপারে অনড় অবস্থানে বিএনপি। সংবিধান সংশোধন বা সংস্কারের পক্ষে থাকলেও এটি বাতিল চায় না দলটি। বিএনপি মনে করছে যারা সংবিধানের বাতিলের কথা বলছে, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যুতে এই একই চক্র দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করেছিল।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বারবার বলছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে ৬ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, এখনো আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সেই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে। যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে 'সবার আগে বাংলাদেশ' সেই দলের নেতাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। ইতিহাসে এ ঘটনা বহুবার হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই চক্রান্তকে কখনো সমর্থন দিবে না। বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে, কখনোই ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি।

প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন নিয়ে বিরোধ

‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন’ নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় বিএনপির। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

জানা যায়, গত শনিবার কর্মসূচি ঘোষণা করে রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীরের সঙ্গে বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই নেতা তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এই বৈঠক স্পষ্টভাবে কর্মসূচির বিরোধী অবস্থানের কথা তাদেরকে জানিয়ে দেয় বিএনপি। এরপরই মূলত অন্তর্বর্তী সরকারই জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে বলে ঘোষণা দেয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তে খুশি হয় বিএনপি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বলে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত