ঢাকা, রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

কৌশলগত ঐক্যে বিএনপি-জামায়াত

  আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:১১

কৌশলগত ঐক্যে বিএনপি-জামায়াত
ফাইল ছবি

প্রায় দুই যুগ ধরে জোটে ছিল বিএনপি ও জামায়াত। বছর দুই আগে জোটের বিলুপ্ত হলেও আওয়ামী লীগ পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করেছে দল দুটি। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব বাড়তে থাকে। বাকবিতণ্ডায় জড়ান দুই দলের শীর্ষ নেতারা। তবে তা চরম আকারে পৌঁছানোর আগেই নিজেদের অবস্থা থেকে সরে আসে। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে পতিত আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে চায় না দল দুটি। দেশের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায় বিএনপি-জামায়াত। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও ভারত ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায়। দল দুটি মনে করছে বিএনপি ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধ থাকলে সকল ষড়যন্ত্র ভেস্তে দেয়া সম্ভব।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ও ভারতের আধিপত্যবাদ এক হয়ে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছিল। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে তার অবসান ঘটে। আওয়ামী লীগ এটা মেনে নিতে পারছে না। ভারতও মেনে নিতে পারছে না, তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তা ফুটে উঠছে। ফ্যাসিবাদের হর্তাকর্তারা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের বিষয়ে দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোও সতর্ক ও সচেতন আছে। ঐক্যবদ্ধভাবে সকলে মিলে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত প্রতিরোধ করবো।

বিএনপি সূত্র বলছে, ধারণা করা হচ্ছিল ৫ আগস্টে রাজনীতির সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। ক্ষমতার অংশীদার বিএনপি ও জামায়াত। রাজনীতিতেও প্রধান প্রতিপক্ষ এখন দল দুটি। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তা ফুটে ওঠে। কিন্তু সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ।

পার্শ্ববর্তী দেশ তাদের সব রকম সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এজেন্টরা এখনো দেশের মধ্যে সরব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হলে লাভবান হবে পতিত আওয়ামী লীগ। সেই সুযোগ দিতে চায় না দল দুটি।

জামায়াতের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনও রয়ে গেছেন। ওই দোসরদের রেখে দেশ এগুতে পারে না। ওরা ষড়যন্ত্র করছে। তবে জামায়াত ও বিএনপি একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আর আওয়ামী লীগ আসতে পারবে না। দেশের স্বার্থে দুই দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জামায়াত ও বিএনপি মিলে একসঙ্গে দেশ সাজাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, জামায়াতের সঙ্গে কৌশলগত জোট ছিল বিএনপির। জোট বিলুপ্ত হওয়ার পর সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে কিছু কর্মসূচি বিএনপির সঙ্গে পালন করে তারা। আমরা এক হয়েছিলাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে, হাসিনার পতনের লক্ষ্যে। হাসিনার পতন হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতি এক না। তাদের রাজনীতি আলাদা, আমাদের রাজনীতি আলাদা। এর মানে জামায়াত বিএনপির মধ্যে বিশাল ফাটল বিষয়টি তেমন না। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আরেকটা রাজনৈতিক দলের যে সম্পর্ক থাকে, তেমনি জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এ সম্পর্ক কৌশলগত।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সুসম্পর্ক রয়েছে। জামায়াতের প্রোগ্রামে বিএনপির নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তারা আসছেন, কথা বলছেন।

তিনি বলেন, জনগণের ঐক্য অটুট থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি জনতার ঐক্যের। ছাত্র-জনতার ঐক্যের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, ছাত্র-জনতার ঐক্যের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হবে।

তৃণমূলে বিভেদ

জামায়াত-বিএনপির শীর্ষ নেতারা ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দল দুটির ছাত্র সংগঠন। হামলা পাল্টা হামলারও ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার জন্য একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ না থাকায় মুখোমুখি ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল। অনলাইনেও সরব দুই দলের সমর্থকরা। একদল অপর দলের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি-দখল নিয়ে সবর জামায়াতের অ্যাক্টিভিস্টরা। অন্য দিকে বিগত দিনে জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান, সিদ্ধান্ত, কার্যকলাপ নিয়েও নানা বিশ্লেষণ হাজির করছেন বিএনপির অ্যাক্টিভিস্টরা।

জেলা পর্যায়ের জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, ৫ আগস্টের পর বিএনপির কার্যকলাপ প্রশ্নবিদ্ধ। তারা চাঁদাবাজি ও দখল চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যা করেছে বিএনপিও তাই করছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। বিএনপির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

ছাত্রদলের নেতারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে আধিপত্য বিস্তার শুরু করেছে শিবির। ছাত্রদলকে কোণঠাসা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নিজেদের ব্যানারের পাশাপাশি সাধারণ ছাত্রদের ব্যানার ব্যবহার করতো তারা। বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলাও চালিয়েছে শিবির।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত