ঢাকা, শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

২০১৮ সালে প্রায় সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে: জিএম কাদের

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:১০

২০১৮ সালে প্রায় সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে: জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন জি এম কাদের। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, অনেকে বলে ১৫ বছরের অবৈধ শাসনকে আমরা নির্বাচন করে বৈধতা দিয়েছি। এখানে একটু কারেকশান আছে। ১৫ বছরের নয়, ১০ বছরের যদি অবৈধ বলেন, সেটি অবৈধ। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। কারণ ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বৈধ ছিল। সরকার হিসেবে খারাপ-ভালো আপনি বলতে পারেন।

বৈধতা শুধু জাতীয় নির্বাচনে গেলেই দেয়া হয় কি না এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ওই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে, ওই প্রধানমন্ত্রীর আমলে, ওই সরকারের সময় বিএনপি এবং প্রায় সব দল স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা বৈধতা দেয়নি? তারাতো সেই সরকারের ইলেকশান সিস্টেমকে মেনে নিয়েই নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে প্রায় সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ২০০৮ সালের নবম সংসদ থেকে ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির ভূমিকা তুলে ধরেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে প্রথমে হামলা ও পরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। জাতীয় পার্টি বলেছে, ওই সময় নেতা-কর্মীরা শনিবারের সমাবেশের প্রস্তুতি সভা করছিলেন।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দোসর’ বলে জাতীয় পার্টিকে সমালোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে আরো কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নিলেও শুধু জাতীয় পার্টির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।

এসময় জিএম কাদের বলেন, তাহলে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সেই শেখ হাসিনার নির্বচন পদ্ধতির আমলে সব দল বৈধতা দেয় নাই? সমস্ত রাজনৈতিক দল বৈধতা দেয় নাই? খালি জাতীয় পার্টি একাই দিয়েছে? বৈধতার প্রশ্ন যদি বলেন, আইনগতভাবে অবৈধ বলার সুযোগ নাই। আইনগতভাবে এটা বৈধ নির্বাচন হয়েছে। আমাদের দেশের কোনো আইনে নাই নির্বাচনে অংশ নেয়াটা অপরাধ। এটা অপরাধ কীভাবে আমি জানি না।

২০২৪ সালে জাতীয় পার্টিকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আনা হয়েছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, ২০১৪ এর পর থেকে দলটিকে ভাগ করা হয়েছে। একটা টিম করে সরকারি মদতে সব সুবিধা দিয়ে নিজেদের করে নিয়েছে, সে কারণেই জাতীয় পার্টি ভিকটিম। কিন্তু এর সঙ্গে শতকরা দলের ৯০-৯৫ ভাগই যুক্ত ছিলেন না।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলেও বিএনপির সঙ্গে কখনও জোট করেনি জাতীয় পার্টি’ এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০১ সালেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। বিপুল ভোটে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে পর পর চারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। তারা একটি ভবন গঠন করলেন প্যারালাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। র‌্যাবও ওনারা গঠন করেছেন, এরপর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল। ওয়ান ইলেভেনের পর তো আর বিএনপির সাথে যাওয়ার আর স্কোপ থাকে না।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জাতীয় পার্টির ‘সক্রিয় অংশগ্রহণ’ ছিল দাবি করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য নামাজ পড়েছি, দোয়া করেছি। সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করেছি আন্দোলনকে সফল করার জন্য। প্রতিদিন স্টেটমেন্ট দিয়েছি। একটা স্টেটমেন্টের জন্যই আমার অনেক ঝুঁকি হতে পারত।

আন্দোলনের সুফল সত্যিকার অর্থে পাওয়া যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন রেখে জিএম কাদের বলেন, এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি দুর্ভাগ্যজনক। দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে। কিছু লোক দেশটা দখল করে ফেলেছে। একটা পবিত্র গ্রুপ, আরেকটা অপবিত্র গ্রুপ সৃষ্টি করেছে। তারা সবাই পবিত্র, ওনারা ঠিক করবেন কে দোষী, কে দোষী না। এভাবে দেশকে বিভক্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা। আমার কি রিপিটেশন দেখতে পাচ্ছি?

“শাসক গোষ্ঠী বিচারের ঊর্ধ্বে থাকবেন, ওনারা ঠিক করবেন কার বিচার হবে। উনি আমার অফিস এসে ভেঙে দিবেন, আগুন জ্বালিয়ে দিবেন, কোনো বিচার হবে না। শেখ হাসিনার সেই বৈষম্যের শিকার যদি আবার হই তাহলে কীভাবে হবে।”

এদিকে, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসে জি এম কাদের শনিবারের পূর্বঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি বহাল রাখার কথাও বলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বিজয়নগরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই ফেইসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।

অগ্নিসংযোগ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে বানানীতে দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জি এম কাদের।

তিনি বলেন, ২ তারিখে যে প্রোগ্রাম দিয়েছি সেই প্রোগ্রাম চালু থাকবে। নেতাকর্মী ভাই বোনেরা যে যেখানে আছেন একটা কথা মনে রাখবেন, ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করো। হাত দিয়া যদি প্রতিবাদ করতে না পারে মুখ দিয়ে করো। মুখ দিয়ে যদি প্রতিবাদ করতে না পারো অন্তর দিয়ে ঘৃণা করো। আমাদের সেটা করতে হবে। তার জন্য যদি জীবন চলে যায়, আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, দেশের ভালোর জন্য আমরা জীবন দিব। আমরা কোনো অপরাধ করিনি। আমাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপরাধী করা হচ্ছে। কেন করা হচ্ছে আমরা জানি না। কার স্বার্থে আমরা জানি না।

সবাইকে শনিবারের সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে যেখানে আছেন, ভয় করবেন না। বেরিয়ে আসুন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত