ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ঢাবি ও জাবিতে বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি ছাত্রদলের

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৩০

ঢাবি ও জাবিতে বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি ছাত্রদলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছবি: প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

রাকিব বলেন, চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথি কক্ষে আটকে রেখে তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল (বুধবার) রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে একাধিকবার মারধরের কারণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, উক্ত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের আহবান জানাচ্ছি।

অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বরাতে কিছু গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি- তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেছেন ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগ করা উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদসহ একদল শিক্ষার্থী। নির্যাতন করা শিক্ষার্থীদের সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী।'

প্রশাসনকে ‘মব জাস্টিস’কে প্রশ্রয় না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কয়েক ঘণ্টা ধরে মারধর করে একজনকে হত্যা করার ঘটনাকে আমরা হল প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করছি। ছাত্রলীগের পদধারী কতিপয় সন্ত্রাসী বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে হলগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ‘মব জাস্টিস’ তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী নামে সক্রিয় এই ‘মব’ কে প্রশ্রয় না দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।

আমাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী সংগ্রাম, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এদেশে অন্যায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দুরীভূত করা। একজন ব্যক্তি অপরাধী হলেও তাকে কোনোভাবেই হত্যার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু জনতার বিজয়ের পর থেকে কিছু অতি উৎসাহীর কারণে গণমানুষের আকাঙ্খা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ভুল পদক্ষেপ উল্লেখ করে বলা হয়, একইসাথে গতকালের (বুধবার) এই দুটি ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি মূল সমস্যা নয়। গত কয়েক বছরের ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থার মাঝে তৈরি হওয়া সিস্টেমই এখানে খুনি মানসিকতা তৈরি করছে। তাই গোটা ব্যবস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন। কোন কিছু উপড়ে ফেলা সমাধান নয়। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। ছাত্র- জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল, আন্দোলনে অকাতরে নিজেদের জীবন দিয়েছে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের আলোচনাটি হঠাৎ সামনে আনা একটি ভুল পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতিতেই ক্যাম্পাসে মব কালচারের বিস্তৃতি ঘটছে। এর পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের হলে অবস্থান এবং নানান মোড়কে হল ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানার ব্যবহার করে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অশুভ উদ্বোধন ঘটানো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে। এই গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের উত্তরাধিকার বহন করা এই কথিত ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ মুখোশ খসে পড়েছে। ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামধারী এই মহলটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট ও অন্ধকার শক্তির গোপন তাঁবেদার। এদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, সিনিয়র সহ সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত