কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা বৃহস্পতিবার
যেসব ইস্যু নিয়ে বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১২ আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১৮
করোনার সংক্রমণ কমে আসায় আবারো সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে দীর্ঘ এক বছর পর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে সভাটি বিশেষ গুরুত্ববহ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
দলের একাধিক নেতার মতে, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে দল গোছানোর একটি সাংগঠনিক রোডম্যাপ তৈরি করা হতে পারে। বৈঠকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ করা, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ন্ত্রণ, দলীয় কোন্দল নিরসন, তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা দূর করার বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
এছাড়া আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ নিরসন, বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দলে অনুপ্রবেশকারী ও অনুপ্রবেশের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনসহ করোনা পরিস্থিতি এবং সমসাময়িক অন্যান্য ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে। এসব বিষয়ে সভানেত্রী প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। যেহেতু লম্বা বৈঠক হবে, অনেক বিষয় আলোচনায় থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সাধারণত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। চলমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বৈঠকের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এছাড়া দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি হবে, তা নিয়েও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন সভানেত্রী।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল গত বছর ৩ অক্টোবর। যদিও ওই বৈঠক করোনা কারণে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আট সাংগঠনিক বিভাগের জন্য আটটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। এছাড়া করোনার কারণে থেমে থাকা সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, সর্বশেষ বৈঠকের পর থেকে বিগত এক বছরের সাংগঠনিক কাজের সার্বিক বিষয় তথ্য তুলে ধরবেন কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা। এরপর সভানেত্রী পরবর্তী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন।
সূত্র মতে, করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রায় থমকে আছে। এই সময়ে কিছু কিছু সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ ৪২ জেলার। এছাড়া প্রায় সাড়ে ছয়শ’ উপজেলা ও থানা কমিটির অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। একই হাল পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোরও।
মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়। বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ ৪২ জেলার সম্মেলনের তারিখও চূড়ান্ত হতে পারে বলেও দলের একাধিক নেতা বলছেন।
একটি বিভাগের সাংগঠনিক জেলাগুলোর দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ইতিমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া আছে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এটি থেমে আছে। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেত্রীর কাছে সেটি তুলে ধরবো। নেত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করবো। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, করোনার কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড না থাকায় তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। আবার দীর্ঘ সময় অনেক জায়গায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কারণে দলীয় শৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। দলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাই বৈঠকে দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হবে। তবে অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর/কেআই