অভিযোগ বিএনপির
ইসি পার্বত্য জেলাকে বাংলাদেশের বাইরে রাখতে চায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০৮
প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইনে ইসি তিনটি পার্বত্য জেলাকে বাংলাদেশের সংজ্ঞার বাইরে রাখতে চায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
সোমবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।
এরআগে গতকাল রোববার প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন, ২০২০ এর বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করে নির্বাচন কমিশনে ৬৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি জমা দিয়েছে দলটি।
প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইনে বিষয়ে বিএনপির পরামর্শ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, পার্বত্য বান্দরবান জেলা পরিষদ আইন, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ আইন, পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ আইন এবং পার্বত্য জেলা আঞ্চলিক পরিষদ আইন এর আদৌ কোন উল্লেখ নেই। এতে প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচন কমিশন এইসব আইনের নির্বাচন পরিচালনা বিষয়ক বিধানাবলী পরিবর্তন না করেই তাদের উপর নতুন আইন চাপিয়ে দিতে চায় অথবা নির্বাচন কমিশন এই তিনটি পার্বত্য জেলাকে সমগ্র বাংলাদেশের সংজ্ঞার বাইরে রাখতে চায়। এর কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশের সংবিধান এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধিমালায় এসব শব্দ বহাল রেখে নতুন কোন আইনে একই পদের নতুন নাম দেয়া অযৌক্তিক বিধায় তা অগ্রহণযোগ্য ও পরিত্যাজ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিদ্যমান পৃথক পৃথক আইনের অধীনে পৃথক পৃথক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনায় গুরুতর কোন সমস্যা/সংকটের যেমন কোন প্রমাণ নেই তেমনি এসব আইন পরিবর্তনের কোন জনদাবিও নেই। ফলে চলমান করোনাকালে যখন সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত গ্রহণ দুষ্কর তখন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন প্রণয়ন/ পরিবর্তনের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দেয়া কেবল অযাচিতই নয়, বরঞ্চ অপ্রয়োজনীয়, অসঙ্গত ও পরিত্যাজ্য বলে আমরা মনে করি।
ফখরুল বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন পরিচালনার জন্য একক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব শীর্ষক ২ পৃষ্ঠার সংযুক্তিতে প্রাসঙ্গিক নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে যেসব যুক্তি দেয়া হয়েছে তা আমাদের বিবেচনায় সঠিক নয়, তথ্যনির্ভর নয় এবং অত্যাবশ্যকীয়ও নয়।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পরিচালনার জন্য আলাদা আইন নেই ইসির এই কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি স্তরের নির্বাচনের জন্য আলাদা আইন বিদ্যমান রয়েছে এবং সেই সব আইন অনুসারে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
‘প্রস্তাবিত নতুন আইনে সমুদয় ক্ষমতা কমিশন এমনভাবে নিজের হাতে নিতে চায় যা দিয়ে সরকারের ইচ্ছা অনুসারে, কিংবা রাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাগণ/ কমিশন যে কোন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার অবাধ ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা হাতে পাবে। এটা অস্বাভাবিক ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী বিধায় অগ্রহণযোগ্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রচলিত স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এবং উপজেলা পরিষদ আইন, ২০১৮-এই ২টি আইনে (ধারা ২(১) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় ‘প্রতিরক্ষা কর্ম-বিভাগসমূহ’ অন্তর্ভুক্ত থাকা স্বত্বেও প্রস্তাবিত নতুন আইনের সংজ্ঞায় ‘প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহ’ কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি ইতোমধ্যে গণ-দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা প্রস্তাবিত আইনের ধারা ২(১)’এ ‘প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহ’ সংযোজনের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের মত মারাত্মক কোনো অভিযোগ ছাড়া অন্য যে কোনো মামলায় ফেরারি আসামিদেরকেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা সরকারি দলের পক্ষে একটি অশুভ হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে এবং এর প্রচুর দৃষ্টান্ত থাকা স্বত্বেও নতুন প্রস্তাবিত আইনে তা বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়নি। কাজেই প্রস্তাবিত আইনে ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথে কোন বাধা থাকা উচিৎ হবে না বিধায় আমরা প্রস্তাবিত আইনে ১০(২)(দ) প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সুকৌশলে নতুন নতুন অযৌক্তিক বিধি-বিধান যুক্ত করে মৌলিক আইনের স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্যকে বিনষ্ট করে নির্বাচন কমিশনকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী করে তা অপপ্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রার্থী ও ভোটারই যে কোনো নির্বাচনে মূল পক্ষ; অথচ তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে প্রার্থী ও ভোটারদের মতামত গ্রহণ ও গুরুত্ব দেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তাই নির্বাচন কমিশন অনুভব করে না বিধায় নির্বাচন কমিশন করোনাকালের মতো অসময়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
অসঙ্গতিসমূহ দূরীকরণ, সংগত দাবীগুলো পূরণ এবং এ পত্রের সাথে সংযোজিত বিএনপির সংশোধনী প্রস্তাবসমূহ সংশ্লিষ্ট আইনে সন্নিবেশিত করার জোর দাবি জানান ফখরুল।
কেএস/এনএইচ