ঢাকা, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ৩৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

"প্রসিডিং।"

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৯

প্রতীকী ছবি

কেরাণি বশিরকে দিয়ে বস মফিজ আদনান চৌধুরী গুনে গুনে এক দুই তিন গুনে, কাজের বিনিময়ে ঘুষ নিচ্ছেন। সরকারি গাড়ি বসিয়ে রেখে ভাউচার বানিয়ে তেল বিক্রি করে সরকারি গাড়ি পেটে আহার না দিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছেন;

যত যত খাতের সরকারি বরাদ্দ টাকা

খরচ না করে একা নিজেই মেরে দিয়েছেন।

জাতীয় শুদ্ধাচার কনফারেন্স হলে বস মফিজ সাহেব বলে চলেছেন, -" সরকারি টাকা, সরকারের যত যত বরাদ্দ সবকিছু মেরে দেয়া দোষের কিছু না। দু'চার টাকা খাই যদিও; তা কেরাণি কিংবা অফিসার হাত বদল করে খাই। বড় বড় ডিল হলে বিদেশে করি। হাতে টাকা গুনতে হয়না। খাম প্যকেটজাত হয়ে আসেন। একেবারে জীবাণুমুক্ত। দূষিত করলে করেন,মাছি মারা কেরাণি কিংবা নীচের ডিল অফিসারগণ।

আমি ঘুষ নিতে আপনারা কেউ দেখেছেন।"

কেরাণি বশির মিয়া, মাঝারি মানের সৎ মানুষ। থাকা বাবদ ও সন্তানের পেট খরচ চিন্তা বাদে,তেমন করে কারোর ফাইল আটকে রেখে ধান্ধাবাজি করেন না বললেই চলে। দিনের পর দিন বসের মানসিক অত্যাচার সয়ে চলেছেন। কঞ্জুস জনগণের সামনে ,- সাভার লোকপ্রশাসন,মিলিটারী একাডেমী হয়ে হাতে কলমে শেখানো সরকারের নীতি নৈতিকতা সততা বেমালুম ভুলে বস মফিজ যেন তেন প্রকারে টাকা কামানো সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলে,কেরাণি বশিরের হাতে থাকা ফাইল মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।

বাপ মা তুলে নিজের স্যার বিশেষণ দায়িত্ব ভুলে জুনিয়র কর্মচারীদের গালমন্দ করেন। নিজের খাই খাই উদোম পেটে উদরাময় বেড়েই চলেছেন দেখে ত্যক্তবিরক্ত কেরাণি বশির একসময় বলেই বসলেন," স্যার। আপনি এভাবে করলে আমি চাকরি করতে পারব না। আমি এখান থেকে বদলীর দরখাস্ত করেছি। দয়া করে সুপারিশ বা বিনা সুপারিশে অগ্রগামী করে দিন। "

কেরাণি বশিরের প্রতিবাদ এ পর্যন্ত। বস

ক্ষেপে গেলেন,সেরে নিলেন তর্জন গর্জন।

আমার মুখে মুখে কথা? দেখাচ্ছি তোমায় মজা?

ব্যস! শুরু হয়ে গেল কেরাণি বশিরের বিরুদ্ধে প্রসিডিং। প্রসিডিং ভাষায়,সে নাকি বসের সাথে চরম ঔদ্ধর্ত্যপূর্ণ আচরণ করেছিলেন?। ঔদ্ধর্ত্যপূর্ণ আচরণের সংজ্ঞা ই বা কী? তবুও তার সিভিল ভাগ্য ভালো। সামরিক ছাউনীতে হলে এতোক্ষণ কিম জন উং কোর্ট মার্শাল বসিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে দিতে পারতেন।

সময় সরকারের দলে দলে তলে তলে বস মফিজ দল বসে আছেন, সরকারের নানান প্রতিষ্ঠান স্হানে। তাঁরা শিক্ষাজীবনে সাংখ্যিক সহগে থাকেন, নীতিহীন সশস্ত্র নিরস্ত্র ক্যাডার। চাকরি জীবনেও থাকেন, এক একজন সশস্ত্র নিরস্ত্র জাঁদরেল মাস্তান জেনারেল মনের ক্যাডার। তাঁরা বদলি ভয়, রেশন বেতন বন্ধ ভয়, কিংবা প্রসিডিং ভয়, চাকরি খাবার ভয় দেখিয়ে জুনিয়রদের শায়েস্তা করেন। সব সময়ই সবাইকে তটস্হ রাখেন। কর্মচারীদের সুন্দরী বউ পছন্দ হলে কিংবা সুন্দরী জুনিয়র হলে তাঁদের নির্দয় লোপুপ দৃষ্টি হতে রক্ষা পেয়েছেন বলে,তেমন করে কোনো ভালো নজির নাই।

মানুষ যা পায়,তা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। কোনোকিছু হারাতে চায় না। সামরিক ক্যান্টনমেন্ট পেরিয়ে ঘোষিত অঘোষিত সিভিল ক্যান্টনমেন্ট। সবখানে চলেছে বসদের ধান্ধাবাজি ধাপ্পাবাজি প্রহসন। শুধুমাত্র খেয়ে পরে বাঁচার তাগিদে মানুষ দিনের পর দিন বেছে নেন,নেড়ি কুকুর জীবন। সে নির্দয় নির্মম জীবনের কলম গল্প নিয়ে কোনো লেখক এখনো হয়ে কখনও এগিয়ে আসেননি।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা, নানান মতের থাকা নানান দেশের সামন্ত মনের বস প্রভুদের কাছে জনগণ কিংবা রাষ্ট্রের কর্মচারী এক সময় জিম্মি হয়ে পড়েন,হয়ে যান চরম অসহায়।

দিকে দিকে স্যার বসদের মুখে বলতে শোনা যায়," যান। আমার বিরুদ্ধে যা যা পারেন করেন। পারলে আমার কাঁচা পাকা দু'একটা.... ছিঁড়ে দেখান। "

কেরাণি বশীর ছুটে গেলেন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে। ঘর নাই, থাকার জায়গা নাই। সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ। সতের বছর পরে চাকরি ফেরত পেলেন।

- কে দেবে বশির কেরাণীর মানবাধিকার?

- কে ফিরায়ে দেবে, বশীরদের প্রতি করা অন্যায় তিরস্কারের মাসুল?

- কে এনে দেবে সন্তানদের গত সুখ?

কাঙ্খিত তথাগত সত্তা?

- কে ফিরায়ে দেবে গত কুকুর জীবনের এতোটা বছর কেটে চলা বছর?

সরকারের কর্মচারীরা বসদের জবাবদিহিতা চাইতে পারেন না। ঠিক্ হিসেবে স্বামী স্ত্রী সংসারের মতোন। তাহলে তারা কী সামন্ত সময় মাস্তান বসদের কাছে

জিম্মাদার থাকবে বছরের পর বছর?। সাংবাদিক সমাজ ভয়ে লিখতে পারেন না।

রাষ্ট্রযন্ত্রের নানান বস স্যারদের বিরুদ্ধে থেকে রক্ষা মেলেনি কারোর। বস শিক্ষক হয়ে পুলিশ আর্মি নেভী সীমান্ত পেরিয়ে বিচারক মানবাধিকার আন্তর্জাতিক আদালত জাতিসংঘ? সবখানেই বস নামে তথাগত ভদ্র বসে আছেন।

দিকে দিকে বসে থাকা বস নামের সবাই কী মনে প্রাণে কসাই চেঙিস হিটলার? না, তা ও না। হলেত কেরাণি গল্পে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বিচারক, আফসোস করে বলতেন না,- " বশির আপনিই সঠিক ছিলেন। "

মানুষের যাপিত, চলমান, আগামী জীবনে ঘটে চলবে, "প্রসিডিং "নামের বেদনা বিধুর

গল্পেভরা নানান আখ্যান উপখ্যান উপন্যাস। তাতে চরিত্রে থাকবে, কেরাণি বস সিপাহি দারোগা ক্যাপ্টেন কনস্টেবল হাবিলদার শিক্ষক হয়ে উকিল ডাক্তার জেনারেল মেজর জেনারেল কর্ণেল পেশকার নকলনবিশ বিচারক হয়ে মানবাধিকার। আমাদের দেশের বিভিন্ন আদালত কিংবা নানান কথিত ডিসিপ্লিন সেক্টর অফিসে ঝুলে আছে, নানান রকমারি কিসিমের কৈফিয়ত

প্রসিডিং। সেখানেও বসে আছেন,সারি সারি হিটলার বৃটিশ ও ওলন্দাজ বস কিংবা স্যার। সেখানেও চলে নানান দরদাম রকমের প্রসিডিং নিস্পত্তি পশু হাট বাজার। বিচারহীনতার নাই দেশে দেশে মানুষ কার কাছে বিচার চাইবে?

- কাকে বিশ্বাস করবে?

অমার্জিত অসুন্দর বিচারহীনতা বিশ্বাস নিয়ে কী মানুষ মরে যাবে? যুগ যুগান্তরে " প্রসিডিং " কথিত ভয়ঙ্কর বেধড়ক দুর্নীতিবাজ স্যার বসদের বেঁচে থাকার কাচের জার কেন হবে? দিকে দিকে জীবন্ত মানুষকে তিলে তিলে মেরে ফেলান মুক্তিহীন কংস প্রসিডিং কারাগার কেন? প্রসিডিং ফাইল কারাগার মানে,অন্যায়কারী তাদের অন্যায় লুকোতে কথিত নিয়ম শৃঙ্খলা নামে সত্য কথা বলা মানুষকে বেঁধে রাখার নানান অন্যায় নাভিরজ্জু শৃংখলা সংস্কার।

এক একটি অন্যায় "প্রসিডিং " চার্জ মানে বস স্যারদের যত্তসব মিথ্যা গোপন স্নাইপার বন্দুক মেশিনগান গ্রেনেড পিস্তল সামন্ত বুর্জোয়া হাতিয়ার।

বস মফিজ সাহেবের বয়স এখন ষাট। দেশের সমুদয় টাকা নিয়ে আমেরিকা চলে গেলেন। তাঁর বড় ছেলেটা সেখানে ক্যাসিনো চালায়। নিজেও সেখানে কেরাণি গিরি করে চলতে হয়। একদিন বাংলাদেশের সারি সারি প্রসিডিং সেখানে বেড়াতে গিয়ে হেসে হেসে বলেন," আমরা নিজেরাও জানতাম না,তুমি যে একজন ভয়ঙ্কর রকমের জাতীয় প্রতারক বদমাইশ বৃটিশ ওলন্দাজ বাংলার শিক্ষিত বস স্যার নামে, - মব জাতীয় বেঈমান বেদুঈন দ্বিচারি মনের কথিত শিক্ষিত মূর্খ। "

নেতা পাতি নেতা স্যার বস নিজেরা নিজেদের জবাবদিহি প্রসিডিং ভয়ে, স্বপ্নের গণতান্ত্রিক দেশে প্রসিডিং বেঁচে থাকতে পারেন না দেখে,- দেশের হাজার লক্ষ, বস স্যার প্রসিডিং স্যার সেখানে জীবন বাঁচাতে সুবোধ হয়ে যান,রাতারাতি কেরাণি সুইপারগিরি করে ড্রাইভার বনে যান। কেউ কেউ ঘন্টা চুক্তিতে বাসার কাজ সেরে বাটপারি মনে হাতে ব্যানার নিয়ে বুকে চিকা মেরে স্বপ্নের দেশে বলেনঃ

NO MORE PUNISHMENT PROCEEDING.

WE ARE EQUALITY HUMAN.

WE WANT PEACE FOR ALL.

লেখক: কথাসাহিত্যিক প্রাবন্ধিক ও কবি। mail: [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পঠিত