সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাকে সিপিজের চিঠি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৪৯
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাকে সিপিজে চিঠি দিয়েছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা এক চিঠিতে এ আহ্বান জানিয়েছেন সিপিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জোডি গিনসবার্গ।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে যেসব মৌলিক অধিকার রয়েছে, সেগুলো রক্ষায় বাংলাদেশ যেন পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য আপনার নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে সিপিজে।
বাংলাদেশের সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় উল্লিখিত বাধ্যবাধকতাকে ক্ষুণ্ন করে, এমন সব আইন অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির আওতাধীন মানহানি–সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধ ও ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের যে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিজে।
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের কাজের জন্য তাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬–এর ৫৭ ধারা (ইতিমধ্যে বাতিল হওয়া) এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা এসব মামলার মধ্যে রয়েছে। ঢাকাভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান গভর্ন্যান্স স্টাডিজের তথ্যমতে, যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সাংবাদিকরা। এই আইনে সংবাদমাধ্যমের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৪০০–এর বেশি মামলা করা হয়েছে।
কারান্তরীণ আওয়ামী লীগ সমর্থক চার সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তের ক্ষেত্রে যেন যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তাঁরা যেন সুষ্ঠু বিচার পান, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সিপিজে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে কয়েক ডজন সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের অফিসগুলোয় যেসব হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর দ্রুত, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। এসব ঘটনার মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় প্রতিবেদক হাসান মেহেদী ও আবু তাহের মো. তুরাবের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। ২০১২ সালে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড ও ২০২৩ সালে গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যারও সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছে সিপিজে।
সংস্থাটি বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে অন্তত ১৪ জন সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী তাদের কাজের জন্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ২০২১ সালে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু, ২০২০ সালে আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলকে গুম ও পরে কারাবন্দী করা, ২০২৩ সালে নির্বাসিত সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাই মাহিনুর খানকে মারধরের ঘটনার পুনরায় তদন্ত চেয়েছে সিপিজে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলকে সংস্কার করে একটি স্বাধীন, স্বনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেন সাংবাদিকদের অপরাধী সাব্যস্ত না করে বা তাঁদের কাজে বিধিনিষেধ আরোপ না করে সাংবাদিকতার নৈতিকতা থেকে যেকোনো অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারে এই প্রতিষ্ঠান। এর মধ্য দিয়ে তারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে পারবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি