ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

‘জেনারেশন জেড’

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১৬:২৫

‘জেনারেশন জেড’
প্রতীকী ছবি

টিকটকার শেহজাদ আব্রাম। বয়স কতোইবা হবে এমন। আঠারো কোটা পেরোবে এমন। পড়ালেখায় নিয়মিত নন। প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিও করেন না। বাবা মা ছাড়া তার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের ডির্ভোসী নারীর প্রেমে পড়ে লিভ ইন সম্পর্কে ধানমন্ডি লেকপাড় এলাকায় বসবাস করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো চাকরির কথা ভাবতেই পারেন না। টিকটকার হিশেবে মান্থলি যা কামাই করেন; দরদামে লাখ টাকার উপরে মিনিমাম এমন।

পত্রিকা মিডিয়া খায় এমন নীতিতে সকাল সন্ধ্যে রাত নেই, যখনি সুযোগ পান, তখনি গোরস্থান শ্মশান হয়ে এখন ঘেরাও কনটেন্ট কভার করে চলেছেন। অবশ্য এ পেশায় শেহজাদ আব্রাম একা নন। দেশের হয়ে পৃথিবীর সিংহভাগ তরুণ নিত্য নতুন এডভেঞ্চার ইভেন্ট ক্রিয়েশন উপহার দেন। তারা জীবনকে বাজী হিশেবে ধরে নেন। তাদের নেই মৃত্যুচিন্তা, নেই সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রের প্রতি একান্ত অনুগত দায়বদ্ধতা। নেই ভয়ভীতি। তারা গা ছমছম গভীর রাতে ভূত খুঁজে বেড়ান। তারা কবি নজরুলের শক্তি বলের ছাত্রদল নন; তার চাইতেও অধিক কিছু বলের বলে নিজেদের জাহির করেন। ভার্চুয়াল জগতে তারা এক একজন হিরো রাজা সম্রাট এমন। তারা মুরুব্বীদের সামনে উড়াধুরা সং সেজে বলেন, আপনি কী বোঝেন? বেশি কথা কেন বলেন? কেউ কেউ তাদের বলেন, কিশোর গ্যাং। হ্যাঁ, এরা প্রজন্ম জেন -জি।

১৯৯০ - এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে এবং ২০২০ এর দশকের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণকারীদের বলা হয়- "জেনারেশন জেড" বা সংক্ষেপে "জেন জি "। আর ও সুস্পষ্ট করে বলতে গেলে ১৯৯৭ হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত যারা জন্মেছেন তারা এই প্রজন্মের অর্ন্তভুক্ত। ২০২৪ সালের হিশেবে সবচেয়ে বড় জেড সদস্যের বয়স সাতাশ, তার সর্বকনিষ্ঠজনের বয়স বারো বছর। প্রজন্ম জেডের আরও একটি নাম হচ্ছে "জুমার্স"।

এরা গৌরবের ছাত্র বলে নিজেদের পরিচয় দিতে ইতস্ততঃ বোধ করেন। তারা তাদের মা খালা বড় বোন বয়সী স্কুল কলেজ ম্যাডামদের পড়ার ছলে গোলাপ হাতে হঠাৎ হঠাৎ প্রেম নিবেদন করে বসেন। গায়ে হাতে উল্কি আঁকেন। সহপাঠী কিংবা সিনিয়র দিদি আপুদের হঠাৎ জড়িয়ে ধরেন। হাঁটু গেড়ে বসে প্রেমের প্রস্তাব দেন। এসবের বিরুদ্ধে থাকা অভিভাবক সুলভ নীতিবান টিচারদের হায়েনা স্টাইলে এটা সেটার দোষ ধরে ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে বদলির আল্টিমেটাম কিংবা প্যাদানি দিয়ে ছেড়ে দেন। তারপরে ওরা ছাত্রীদের হাত ধরে শিক্ষকের সামনে ঘুরে বেড়ান। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাইরে চলে যান। চালাক মান সন্মান বাঁচানো সুবিধেবাদী শিক্ষক তাদের বন্ধু হয়ে একসাথে সিগারেট চা সিঙারা খেয়ে মান সন্মান রক্ষা করেন।

"জেনারেশন জেড" জেন জি প্রজন্মের চরম পছন্দ ফার্স্ট ফুড ও ড্রিংস। বাইক বিনোদন গার্লফ্রেন্ড পাবজি গেম। তাদের আবেগের নীতি শূন্য কোটা। জেন জি প্রজন্ম চরম বেয়াদব মনে মগজে ধ্বংসাত্নক ব্যতিচার। তাদের আজ এটা কাল ওটা পরশু চাই ওটা - ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি মনে তাদের বাবা মা তাদের নিয়ে সবসময় তটস্থ থাকেন। তবুও তাদের বাবা মা কখনো ভাড়া খাটা রাজনীতির কদর, কখনো কেড়ে নেয়া দখল, ঘেরাও কর্মসূচি আল্টিমেটাম কদরে গর্ব করে বলেন,- আমার মেধাবি ছেলেটা বিভিন্নজনকে একাই মেরে পিটিয়ে বীরের বেশে যখন মনোহরদী বাজার দিয়ে হেঁটে চলেছিল হঠাৎ কেন জানি তার আমাদের কথা মনে পড়ে গেল। তার সহপাঠিরা মিলে সুজাতা ট্রেডার্স কাপড়ের দোকানের সামনে গেলে দোকানি সন্মান দেখিয়ে দোকানের সকল কাপড় তাদের দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ছেলেটার ভার্সিটি শিক্ষক তাকে বাহবা দেয়। ছেলের মুখে শোনা, সত্য মিথ্যা জানি না। শিক্ষক ছাত্ররা মিলে নাকি একসাথে মদ টদ খায়, বান্ধবীদের সাথে বেড়াতে যায়। ছেলের ঘেরাও আল্টিমেটাম অপমান ভয়ে দারোগা পুলিশ ওসি ডিসি ম্যাজিস্ট্রেট ভয় করে আমায়।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত