হিট স্ট্রোক ছাড়াও তাপপ্রবাহে কঠিন রোগের ঝুঁকি
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৩৭
দেশে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। সহসাই তা কমারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এদিকে ইতিমধ্যে হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই গরমে সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় আছে শিশু এবং বয়স্করা। অনেকেই শঙ্কিত হিট স্ট্রোক নিয়ে। তবে, কেবল হিট স্ট্রোক নয় তাপপ্রবাহের কারনে ঝুঁকি বাড়তে পারে অনেক কঠিন রোগে, আমেনটাই বলছে বিশেষজ্ঞরা।
তাপপ্রবাহের তীব্রতার উপর নির্ভর করছে কতটা সাবধানী হবেন। প্রতিদিন আবহাওয়া দপ্তর একটি করে আবহাওয়ার সতর্কবার্তা জারি করে। সেই সতর্কবার্তা সংবাদ মাধ্যম মারফত পেয়ে যান সেই এলাকার মানুষ। কখনো আবহাওয়া দপ্তর তাপপ্রবাহের হলুদ সতর্কতা জারি করে, কখনো আবার কমলা সতর্কতা, কখনো আবার লাল সতর্কতা।
হলুদ সতর্কতা জারি হলে পরিস্থিতি নজরে রাখতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির কচিকাঁচা ও বৃদ্ধদের একটু সাবধানে রাখুন। কিন্তু অতিরিক্ত কড়া পদক্ষেপ জরুরি নয়। এই তাপ সাধারণ মানুষের জন্য সহনীয় কিন্তু দুর্বল মানুষের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে।
শিশু, বয়স্ক, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সরাসরি রোদে বেরনো থেকে আটকাতে হবে। ফুরফুরে, হালকা রঙের, ঢিলেঢালা, সুতির কাপড় পরুন। মাথা ঢেকে রাখুন কাপড় বা টুপিতে। ছাতা ব্যবহার করুন।
তবে তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতা জারি হলে পরিস্থিতি উদ্বেগের। তীব্র তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি ২ দিন ধরে চলার পূর্বাভাস থাকলেও অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়। আবার তাপপ্রবাহ ৪ দিন ধরেও চলতে পারে।
এই সময় শিশু ও বয়স্কদের একেবারেই রোদে বেরোতে দেয়া যাবে না। শরীর ঠান্ডা রাখতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে ডিহাইড্রেশন এড়াতে। পানি পিপাসা না পেলেও পানি পান করতে হবে। ওআরএস, ঘরে তৈরি পানীয়, লেবুর পানি, বাটারমিল্ক ইত্যাদি পান করতে পারে।
আর লাল সতর্কতা দেখা দিলে শারীরিকভাবে যারা একটু দুর্বল বা বয়স বেশি বা শিশুরা, তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে গর্ভবতী সন্তানসম্ভবাদেরও। হিটওয়েভে আরও কী কী রোগের ঝুঁকি বাড়ে?
হিট ক্র্যাম্প
এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই প্রচন্ড পেশিতে টান লাগা, নিজের অনিচ্ছাতেই হাত, পা কাঁপতে থাকা, প্রচণ্ড ঘাম, একই সঙ্গে প্রবল জ্বর হিট ক্র্যাম্পের লক্ষণ। পানির মতো ঘাম বের হতে থাকে হিট ক্র্যাম্প হলে। শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়।
এমনটি হলে প্রথমেই অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় যেতে হবে। ব্যথা হচ্ছে এমন পেশীতে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করতে হবে। আর অল্প করে বারবার পানি পান করতে হবে।
হিট এক্সহসন
অতি ক্লান্তি, দুর্বলতা, ঝিমিয়ে পড়া মাথা যন্ত্রণা, বমি, মাসল ক্র্যাম্প ইত্যাদি হতে পারে এর লক্ষণ হিসেবে। এক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। অতিরিক্ত জামা কাপড় ছাড়িয়ে হালকা কিছু পরাতে হবে। ঠান্ডা পানি পান করা হবে।
হিট স্ট্রোক
যারা বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে কোনো কারণে রোদে বের হচ্ছেন কিংবা যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি বা ১০-১৫বছরের কম, তারাই মূলত হিটস্ট্রোকের শিকার হন বেশি। শরীর তার ভেতরের তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে নিজস্ব শারীরবৃত্তীয় কৌশলে।
তবে এখন রোদের তাপ এতটাই বেশি যে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। শরীর তখন সেই ব্যালেন্সটা দরে রাখতে পারছে না। ফলে পথে-ঘাটে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেক সময়ই অজ্ঞান হয়ে পড়ার মতোপরিস্থিতি হচ্ছে। এটিই হিট স্ট্রোক।
হিট স্ট্রোক হলে কী হয়?
রোদের তাপে একেবারে নুইয়ে পড়েন আক্রান্ত ব্যক্তি। অতিরিক্ত ডিহাইড্রেটেড হয়ে যান মানুষ।
গায়ের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়ে যায় অর্থাৎ প্রবল জ্বর হতে পারে।
এক্ষেত্রে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে বা ডাক্তার দেখাতে হবে। দেরি করলে বিপদ নিশ্চিত।
ঠান্ডা জলে স্পঞ্জ করাতে পারেন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে।
হার্টের স্বাস্থ্য ও তাপপ্রবাহ
উচ্চ তাপমাত্রায় এক্সপোজার শুধুমাত্র হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় তাই নয়, হার্টের স্বাস্থ্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বলছে হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র। অতিরিক্ত গরমে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর যে চাপ পড়ে তাতে, হার্টের অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি অনুসারে, উচ্চমাত্রায় তাপ ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ফলে মৃত্যু বাড়ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাপজনিত মৃত্যুর প্রায় এক চতুর্থাংশ হার্টের অসুখে। তাপমাত্রা যত বেশি হবে, হার্টের অসুখের ঝুঁকি তত বেশি। তাই হার্টের অসুখ যাদের আছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম