আমার! আমার।
রাজীব কুমার দাশ
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৭ আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৮
পারমিতার একটি চাঞ্চল্যকর লোমহর্ষক কথামালা ছড়িয়ে পড়েছে বঙ্গদেশের হাটবাজার অলিগলি পেরিয়ে সবখানে। 'ও আমার! একমাত্র আমার।' আমার অলিন্দ অনলে তোমার নিত্যবাস। ঐ যে নদীর ওপারে নতুন করে কেনা জায়গাজমি, সব তোমার জন্যে কিনে রেখেছি প্রিয় রাজকুমার।' হাসি কান্না শেষে বিচ্ছেদ আঁধারে চিৎকার করে বলেন,'আমি তোমার জন্য কী না করেছি? তোমার জন্যে ছেড়েছিলাম সংসার, তোমার শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে মাথায় পানি ঢেলেছি। শাড়ি পরেছি তোমার জন্য।' তোমার বিপদে আপদে পাশে না হোক, সংবাদ পড়ে শোনে কিংবা কল্পনা করেও হাত ধরে পাশে থাকার গল্প ছড়িয়ে দিয়েছি সবার মাঝে; চরম সুবিধাভোগী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের মতন।
বঙ্গদেশের অদ্ভুত চিত্র-বিচিত্র যাপিত জীবনে দিনমান রাত পেরিয়ে চলে যেমন; সময়ের ভাবনায় পারমিতা লাইলী মজনু মিজান শেফালি, হিরো বাবুও চলেছেন তেমন।
রূপনগর থানা। ডিউটি অফিসার এসআই কায়সার হামিদ। সকাল দশটা। রূপনগর হাউজিং সোসাইটি বাহক পিয়ন হিরো বাবু হাতে থানায় জিডি করতে পাঠিয়েছেন। বাহকের উল্লম্ব দৃষ্টি গড়ন। কাঁচুমাচু আড়ষ্ট দৃষ্টি দেখে ডিউটি অফিসার পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা আপনাদের অফিসে ক'জন কাজ করেন? হিরো বাবু ঘাড় চোয়াল কড়মড় করে জিজ্ঞেস করেন, কেন স্যার? -না এমনে।
:জিডিতে কোনো সমস্যা? -কই! নাত। আমিত আপনাকে কিছু বলিনি।
জানেন স্যার, আমার পরিচালক স্যার অনেক বড় মাপের মানুষ। জানেন? স্যারের মতন মানুষের সাথে কাজ করা আমার গত জনমের ভাগ্য।
:স্যারের সাথে কথা বলবেন?
-না, আসলে তা দরকার নেই। জিডি এন্ট্রি হয়ে গেছে। আপনি আসতে পারেন, বলা মাত্র মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললেন, স্যার কলে আছেন। আপনার যে কোনো কাজে স্যারকে লাগতে পারেন। ডিউটি অফিসার অন্য কল রিসিভ করছেন দেখে পিয়ন হিরো বাবু কান্নাকাটি করে ,'আপনারা কেউ জানেন না, আমার স্যার কত বড় মানুষ। কত বড় দানবীর শিল্পপতি। স্যারের জন্য জীবন দিতে আমি স্যারের সাথে কাজ করছি। স্যারের অপমান আমি বেঁচে থাকতে হতে দেবো না।'
হিরো বাবু মুখে আমার স্যার আমার স্যার গুজরান আর্তনাদ শোনে সবাই হতচকিত হলেন। ডিউটি অফিসার আতঙ্কিত হলেন। এ কী! এ যে যেন তেন আর্তনাদ নয়। এ আর্তনাদ দেখেছেন- জাতির পিতা স্বয়ং; এ আর্তনাদ দেখেছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ডিউটি অফিসার কায়সার হামিদ সম্বিত ফিরে স্মৃতি তাড়িত মনোযানে ভেসে যান।
পারমিতা হাতে হাঁটা সময় পারমিতাও হুবহু পিয়ন হিরো বাবু মুখে টেনে টেনে সুন্দর মতন করে বলতো,'বাবু তুমি একমাত্র আমার। নাক টেনে টেনে বলতো আমার! আমার। আমার রাজকুমার। বাবু দেখছো না এই যে নতুন কেনা জায়গা জমি সবটুকু তোমার জন্যে কিনেছি। এইখানে ঘর বানিয়ে থাকবো দু'জন। তোমার বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দেবো বাকিটা জীবন।
পারমিতা চলে যাবার পরে পারমিতার মা একদিন কল করে জানান, জানো বাবা! তার বর্তমান স্বামীকেও কিছু বলতে পারি না; ঠিক তোমার মতন। কিছু বলতে গেলে বলেন -ও আমার! একমাত্র আমার।
আমার! আমার ঠাসা উন্মত্ত উদভ্রান্ত কপট কান্না অপসংস্কৃতি নিয়ে হেঁটে চলেছে এ বদ্বীপের আকাশ। স্থায়ী হতে চলেছে ঘরে বাইরে প্রেম বাজার শ্রম বাজার যৌন বাজার অফিস বাজার রাজনীতি বাজারে দীর্ঘশ্বাস ক্রন্দন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি
পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ
মেইল : [email protected]বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি