এই তো সামনে
রাজীব কুমার দাশ
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৫:০৭
সজীব। সৃজনশীল প্রাণবন্ত যুবক। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে পত্রিকা বিডি জবস অনলাইন ঘেঁটে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শর্ত মেনে - একটার পর একটা চাকরি আবেদনে সাড়া দিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন।
মাঝে মাঝে রিটেন পরীক্ষা ইন্টারভিউ কার্ড আসে। মেসেজও আসে। চাকরির বাজারের চেহলাম কুলখানি সেরে বেকার সজীব যখন বুঝতে পারেন; এই বদ্বীপের চাকরির বাজার মানে মেধার পাশাপাশি সিংহভাগ তদবির মেসেজ সংকেত ইয়েসকার্ড পুঁজিরও বেশ দরকার। তবুও বেকার সজীবের দুঃখ নাই। তার অনলাইন কোচিং শ্লোগান, ' বিত্ত নয়, চাই চিত্ত হাহাকার ' দেখে কম মেধাবীরা যখন চাকরি না পেয়ে পরম আত্মবিশ্বাস মনে সাহারা মরুভূমি ভূমধ্যসাগর না পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে; তখনি ঘটে আসল বিপত্তি।
খরগোশ কচ্ছপ জাতীয় চাকরির বাজার প্রতিযোগিতা দৌঁড়ে সে চরম মেধাবাজ তদবিরবাজ ধড়িবাজ চামচাবাজদের দখলে বদ্বীপের আকাশ বাতাস। তারা একে একে দখলে নিয়েছেন সমাজসেবা,ব্যাংক বীমা কেপিআই হয়ে সরকারি বেসরকারি সকল স্থাপনা।
বিশ্বাসের আকাল বিশ্বাসে তবুও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছে সজীব। রাতারাতি বিদেশের শিল্পপতি আম্বানি, মার্ক জুকারবার্গ না হোক; হতে চেয়েছে দেশপ্রেম সততা বুকে জাতির পিতার একজন উত্তরসূরী - অর্থনৈতিক মুক্তি দর্শনের ছাত্র। শোনতে চেয়েছে পরম বিশ্বাসী স্নেহধন্য,' তুই, তোকারি, ডাক। আয় - ' আমার সাথে খাবি পেটভরতি খাবার।
পিতার দেখানো পথে পরম বিশ্বাসে তবুও হেঁটে চলেছেন সজীব। উপলব্ধির বর্ণিল হৃদয়ে সজীব এখন দেখছে কোটি কোটি টাকার বিলাসী প্রজেক্ট গাড়ি, চাকচিক্যময় ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সারি সারি তাপানুকুল অফিস। আরাম চেয়ারে বসে আছেন - খালকেটে আনা পিতার বিশ্বাসখেকো কিছু কুমির। সব গিলে খাই খাই ইয়েসকার্ড পুঁজির অ্যানাকোন্ডা।
উদ্যোক্তা হবার বিশ্বাস দৌঁড়ে নিঃস্ব সজীব। ভাগ্য ফেরাতে শেষ ঠিকানা মতিঝিল শাপলাচত্বর হতে কাকরাইল। রিকশা ভাড়া নেই। ভুল পথে সজীব উদভ্রান্ত জীবনমুখী মানুষের ভিড়ে হেঁটে চলেছেন। সে ভিড়ে মাঝে মাঝে ক্ষুধাতুর শুষ্ক কৃত্রিম হাসিমাখা মুখে পথিক বন্ধুদের প্রশ্ন করেন। কেউ উত্তর দেন, কেউবা উটকো ঝামেলা মনে করে পাশ কাটিয়ে চলে যান।
- ভাই, বিদেশ যাবার অফিসে যাব,কোনদিকে যাব? কতদূর?
:এইত সামনে।
বিকেল গড়িয়ে গেছে। সজীব হেঁটে চলেছেন সামনে। পথ ফুরোয় না।
'এইত সামনে' বদ্বীপের কানে বাজে এমন কমন বাক্য।
হোক, সেটা ন'টা পাঁচটা সরকারি অফিস,ব্যাংক বীমা, বাস ট্রেন ষ্টেশন।
দায়িক কিষাণ-কিষাণি লোন মুখে, সলজ্জ গৃহবধূর এনজিও লোন আর্তনাদ নির্লজ্জ কিস্তি মুখের বিজ্ঞাপন।
বেকার বাবার মুখে আইবুড়ো কন্যার মুখে, লক্ষ বেকার মুখে রাশি-রাশি ক্রন্দন।
প্রেমিকা নীলার মুখখানি ভেসে উঠেছে স্মৃতির মানসপটে সযতনে। ভরসা নৌকোয় চেপে সেও হাত ধরে বলেছিল,' এইতো সামনে।'লেখক: রাজীব কুমার দাশ। প্রাবন্ধিক ও কবি পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ