আবেগীয় হাহাকার-নিষিদ্ধ বিশ্বাসে চলছে খোলামেলা ভণ্ডতম জীবন
রাজীব কুমার দাশ
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫০
ওহে অভাজন! কীসের লাগি করিছ প্রেম প্রীতি পূজন প্রেমবিষ বীণে সাজিয়েছো সারি সারি দুঃখ সহিবারে তিথি নক্ষত্র লগন?
তুমিত মানুষ ; দৈত্য দানব নও
এত কি আছে তোমার হাতে ঐশ্বর্য অলৌকিক ক্ষমতা!
মানুষ ধরে রাখার বাঘবন্দী ছক খেলা; আবাবিল পাখি হস্তীবর্ষ গণন।ওরে বোকা মানুষ! গাঁজন পুরাতন সুরা মদ নারীতে ভুলতে গেছিলে জীবন যন্ত্রণা তখন হতে এখন?
কথিত মতে প্রাণীকূলের শিরোমণি মানুষ। তারা নিজেদের মনে করেন অনেক চালাক। কিন্তু আসলে তারা যে অনেক বোকা থেকেছেন দিনের পর দিন; সে সার মর্মকথা তারা বুঝতে চাননি। তারা বোঝেননি প্রকৃতির মর্মকথা হাসি কান্না। জানতে চাননি কখনো অন্য প্রাণীর সাংকেতিক ভাষা আচরণ দুঃখগাঁথা জীবন। অন্য প্রাণীরা প্রকৃতির হাসি কান্না সুখ দুঃখ বুঝতে পারলেও মানুষ তা বুঝতে পারেন না। মানুষ জানতে কিংবা বুঝতে চাননা পৃথিবীতে জন্মানোর আসল রহস্য কারণ।
চলনবিল। মাঘ মাসের তুলতুলে নরম রোদ। নির্জন দুপুর। কবি রজনীকান্ত সেন,জীবনানন্দ দাশ হেঁটে চলেছেন।
স্বাধীন মনে ছড়ানো ছিটানো গরু মোষ ভেড়া ছাগলের পাল মনের সুখে জাবর কেটে নিজেদের মাঝে একথা ওকথা সে কথা বলে চলেছেন।
নিজেদের সৃষ্টি কর্মে সেকাল একাল ভাবনায় কবি রজনীকান্ত জীবনানন্দ দাশ মুক্ত চলনবিলে ভাগাভাগি করে চলেছেন। রাশিয়ান কবি ও নাট্যকার ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি ভাবনায় তাঁরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। কেউ কেউ বলেন,প্রেমিকার প্রতারণ বিরহ সইতে না পেরে ভ্লাদিমির রিভলভারের গুলিতে নিজেকে শেষ করেন। অপর কেউ বলেন,নিজের সৃষ্টিশীল কর্মের তাড়িত দ্বিধাগ্রস্ত মনে এ কবি আত্নহত্যা করেছিলেন।
সাহিত্য দর্শন পাকা হাতে কবি দার্শনিক দু'জনই। পার্থক্য এটুকুন যে,কবি রজনীকান্ত গীতিকার ও সুরকার। জীবনানন্দ পারতপক্ষে কবিতার বাইরে যেতেন না।
কবিদের দেখে উন্মুক্ত চলনবিলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভরা মনে হাসাহাসি করে চলেছেন - তৃণভোগী সকল প্রাণী। তীব্র তর্জিত মনে প্রেমজুটি তিতির পাখি, চকোর চকোরিণী দম্পতি কারামুক্ত জল্লাদ শাহজাহান, বিশা বুড়ো হিরো সাহিত্য নিয়ে জানতে চাইলেন। ভাবীদের হাতের রান্না রেসিপি সাহিত্যে নোবেল কমিটি কবে কখন ঘোষিত হবে; তারও চাইলেন বিশদ বিবরণ। এ ছাড়াও দিকে দিকে চড়া নীলাম দর হাঁকানো গত অদ্য পুরাতন সুরা মদের মতন ঘরভাঙা মন ভাঙা সেলিব্রেটি নারীদের হালচাল নিয়ে জানতে চাইলেন।
কবি মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত ত্রাহি মধুসূদন। এ কী প্রকারে সম্ভব? মানুষের চাইতেও যে বোধের আণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিতে পারেন বোবাপ্রাণী - কবি যুগলের তা ছিলো অজানা এতদিন। কবিরা ঘামছেন। কী উত্তর দেবেন? পশুকুলের কাছে মানুষের নির্মম পরাজয় কী করে মেনে নেবেন? উভয় সংকট মনে কবি যুগল মহাভারতের চক্রব্যূহ ফাঁদের আদলে সাজানো প্রশ্ন উত্তর পশুফাঁদে আটকে গেলেন।
চারদিক হতে পুকুরে জালটানা জেলেদের পাতানো জালের মতন করে এগিয়ে আসছে গরু মোষ ভেড়া ছাগলের পাল। মোষগুলো মূর্খ মানবের মতন কিছু বুঝতে চাইলেন না। তাদের একদফা এক প্রশ্ন এক দাবীঃ
'যত যত পুরাতন মদ সুরা ঘরে বাইরে গৃহীবেশ্যা খানকি নারী;
মানব সমাজ গৃহে আদিখ্যেতা মনে মাগি মূর্খদের কেন এত কাড়াকাড়ি চড়াদাম সন্মান মূল্যায়ন বাড়াবাড়ি?
কবিরা ভালোয় ভালোয় উত্তর দিয়ে যাবি। নইলে পেট ফুটো করে দিবো কিন্তু। 'প্রতিবাদে মোষগুলোর দুচোখ দিয়ে বেড়িয়ে আসছে আগুণের ফুলকি; কণ্ঠে ঘাঁ...আ.. ভেগে যা - ঘোঙানি। বিশ্বযুদ্ধের পাগলা সাইরেন বাজছে দেখে কবিদ্বয় গরু ছাগলের কাছে করজোরে প্রাণভিক্ষা চাইলেন। কবিরা
বছর কয়েক সময় চেয়ে নিলেন।
গবেষণ মনে, উত্তর না পেয়ে কবি রজনীকান্ত পশু ও মানুষের একস্হান সহাবস্হান স্বীকৃতি দিয়ে ' তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে ' গান লিখে মরে গেলেন।'আবার আসিব ফিরে' মিথ্যা ভরসা দিয়ে কবি জীবনানন্দ ট্রামে চেপে সবার সামনে পালিয়ে গেলেন।
উত্তর না পেয়ে, সেই হতে এই ধীরে ধীরে পৃথিবীর ঘরে ঘরে আদিম যুগের বেশ্যা প্রথা মনে - পাথুরে যুগের মূর্খ উদোম নারী পুরুষের স্তন শিশ্ন যোনি ভগাঙ্কুর চিন্তা ভাবনার সোনালী ফসলে মানুষ পশু, পশু মানুষ একাকার দর্শন বুঁদ নেশামনে চলছে; প্রেম, সংসার বিরহ সাহিত্য। চলছে যাপিত জীবনের যতসব হাম্বা হাহাকার। সে কারণে ফেসবুক রান্না, উপদেশ, নাচানাচি, কান্না রুমডেট যৌনতা, অনলাইন সাহিত্যে - পুরাতন মদ, মূর্খ নারী পুরুষের শরীরসর্বস্ব কথিত পারফর্ম সাহিত্যে বিবাহিত অবিবাহিত গৃহী রাণ্ডী মডেল অফিসপাড়া, সংসারপাড়া সাহিত্যপাড়া, রাষ্ট্রপাড়া, সিনেমাপাড়া সামলে নিচ্ছেন দিনের পর দিন।
চারিদিকে চলছে আবেগীয় হাহাকার। নিষিদ্ধ বিশ্বাসে চলছে খোলামেলা ভণ্ডতম জীবন। কবি জীবনানন্দ দাশ, রজনীকান্ত সেন বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই - নিজেদের বিশ্বাসের কাছে নিজেরা লজ্জিত হতেন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ। মেইল: [email protected] mobile: 01715027407