ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

কতটা ভয়াবহ তাদের অবস্থা!

  রিয়াজুল হক

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৪

কতটা ভয়াবহ তাদের অবস্থা!
রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক । ফাইল ছবি

কয়েকদিন আগের কথা। ব্যাংক পরিদর্শনের কাজে পাশের একটি জেলায় যেতে হবে। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।

যখন ফিরলাম তখন সন্ধ্যা ছয়টা। আমার রুমে ঢুকে জামা কাপড় পরিবর্তন করলাম। ওয়াশ রুমে ঢুকে দেখি পানি নাই।

ছোট ভাইকে বললাম, 'পানি নাই। পানির মেশিন ছাড় তাড়াতাড়ি।'

'সকাল আটটার সময় কারেন্ট গেছে। এখনো কারেন্ট আসে নাই, যে কারণে সারাদিন পানি ছাড়া যায় নাই।'

'মানে কি?' ( আইপিএস এর কারণে বাসায় এসে বুঝতে পারিনি যে, কারেন্ট নাই)

'গতকাল নাকি মাইকে ঘোষণা দিয়েছিল যে, আজ সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারেন্ট থাকবে না। কিন্তু আমরা তো শুনতে পারি নাই। পানিও উঠানো হয় নাই।'

বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ হতে না পারলে কেমন বিরক্ত লাগে টের পাচ্ছিলাম।

বিদ্যুতের একজনকে ফোন দিলাম, কত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ আসতে পারে?

উনি জানালেন, সর্বোচ্চ আধা ঘন্টা লাগতে পারে।

একটা দিন মাত্র কারেন্ট ছিল না। সন্ধ্যার মধ্যে চলে এসেছিল। অথচ তাতেই সবার কাজ স্থবির হয়ে গিয়েছিল। বাসায় আইপিএস থাকার কারণে ফ্যান, লাইট ব্যবহারে সমস্যা হয়নি। কিন্তু পরের দিন যদি কারেন্ট না থাকত, তাহলে আইপিএস এর সাপোর্টও আর পাওয়া যেতো না। তখন তো ঘর অন্ধকার হয়ে যেতো।

শুধুমাত্র সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি থাকা না থাকার কারণে জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছিল বাসার সবাই সেদিন বুঝতে পেরেছিল।আর যদি রাতে কারেন্ট না আসতো তাহলে পানি কিনে এনে ব্যবহার করা লাগত। সেটাও ছোটখাটো আজাবের মতো অবস্থা হতো। এই হচ্ছে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত কারেন্ট না থাকায় আমাদের সামগ্রিক পরিস্থিতি।

অথচ আমাদের এই পৃথিবীর বুকে ফিলিস্তিন নামে একটি দেশ আছে, যে দেশটায় গত চার মাস ধরে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। এমনকি খাবার ঢুকতেও বাঁধা দেওয়া হয়।

আমরা একবেলা পানির সমস্যা সহ্য করতে পারছি না, তারা চার মাস কিভাবে সহ্য করছে? আমাদের একদিন বিদ্যুৎ না থাকলে জীবন স্থবির হয়ে যায়, তারা চার মাস কিভাবে বিদ্যুৎ বিহীন কাটাচ্ছে?

সেদিন দেখলাম, বৃষ্টির পানি রাস্তার পাশে জমে আছে। বাচ্চারা সেই পানি রাস্তা থেকে উঠিয়ে পান করছে। ভাবুন, কতটা হৃদয় বিদারক!

আর তাদের জীবনের দাম তো মূল্যহীন। গত চার মাসে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অবকাঠামো যা ছিল, সব প্রায় শেষ।

সেই মানুষদের ভয়াবহ কষ্টের জায়গায় নিজেদের রেখে একবার চিন্তা করে দেখুন। কতটা ভয়াবহ তাদের অবস্থা!

লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত