ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সতের বছর পরে

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪৬

সতের বছর পরে
রাজীব কুমার দাশ

আমাদের পড়ালেখা সময়ে স্কুল, শিক্ষক স্যারেরা বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মঞ্চ নাটক করতেন। ছাত্রদের অভিনয় শেখাতেন। স্যারদের অফুরান প্রাণবন্ত আবেগীয় খুশি অভিনয় দম দেখে খুশীর জোয়ারে ভেসে যেতাম।

স্যার ও আমাদের শরীরে থাকতো না শীতের মোটা কাপড় চোপড়, থাকতোনা সুস্বাদু খাবার দাবারের দহরম মহরম আয়োজন। তবুও চেনাজানা রাশভারি স্যারেরা নাটক চরিত্রের প্রয়োজনে কখনো শিশুদের মতো কখনো প্রেমিক প্রেমিকার মতো প্রেম বিরহে কাঁদছেন হাসছেন। রাজা উজির জল্লাদের ভূমিকায় নিষ্ঠুর অট্টহাসি দিয়ে শিশু বুকে কাঁপন ধরায়ে দিচ্ছেন।

স্পষ্ট মনে আছে। ' বাইশ বছর পরে' নাটকের চরিত্রে দশম শ্রেণির একজন সিনিয়র ভাই মিন্টু তার চরিত্রের আশানুরূপ পারফরমেন্স করতে বার বার ব্যর্থ হলেন। যা হবার তাই হলো। আওরঙ্গজেব স্যার বেত দিয়ে ইচ্ছেমতোন পিটিয়ে চরিত্রের ষোল আনা আদায় করে নিলেন।

নাটকের চরিত্র সংলাপ এখনো মনে প্রাণে কানে বাজে। সাবলীল হেসে হেসে বলতে হবে, ' আমি ঐ গাছের আমগুলো পেড়ে একা একা খাবো। '

সিনিয়র ক্লাসের বড় ভাই মিন্টু সে সংলাপটাও বলতে পারলেন না। না পারা দলের আমিও একজন সদস্য হয়ে ঘুরছি ফিরছি কারোর না কারোর সামনে পিছনে ডানে বামে; কারোর মনের সঙ্গোপনে। টিভি স্ক্রীণের পাক ভারত ফাইনাল ক্রিকেট ম্যাচের মতো কখনো মনে মনে হয়ে যাই; বিদেশী কোচ কিংবা আগুনে বোলার ব্যাটসম্যান। আলোর বুকে অবিশ্বাসের কাঁপন ধরিয়ে দেয়া ক্ষণিকের গোধূলি লগ্নজিতা শিহরণ।

ক্রিকেট মাচের মতো মানব হৃদয় ম্যাচ বের করে আনতে আমি বার বার ব্যর্থ হয়েছি। পরীক্ষায় মাথা উঁচু করে ফেল করেছি। অসদুপায় অবলম্বন করিনি। ছেড়ে না যেতে প্রেমিকার পায়ে ধরিনি।

ভুলে যেতে হৃদয়টাকে সাহারা মরুভূমি বানিয়ে বেদনার ক্যাকটাস চারাগাছ লাগিয়ে ফুল ফল দুটোরই কটু স্বাদ গন্ধের সাত মধুকর ফেরি করে বিক্রি করেছি। বেদুঈন সর্দার হয়ে জোছনা রাতে উপভোগ করেছি চন্দ্র দর্শন।

আমি চিরকালই বেদুঈন প্রেমিক ছিলাম। প্রেমিকার ঘর পালানো সুরে নুপুর পা'র ঝংকার শোনে রাজা মুচুকুন্দ সুখ ভাবনায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

থির থির মরুলা কাঁপা মরীচিকা বুকে আমার কোনোকিছু মনে পড়ছেনা এখন। প্রেমিকা সুখবতী ষোল বছর প্রেম প্রেম নাটক করে গেল বছর সতের এসে হৃদয়মঞ্চে আমায় জাগিয়েছিল। আমিত আছি ছিলাম থাকবো সময়ের প্রেমিকরাজ রাজা মুচুকুন্দ। আমায় জাগিয়ে চির যাদবশত্রু কালযবন প্রেমিকা সুস্মিতা নীলা চিরতরে ইতিহাসের সকরুণ নৈবদ্য ছাই মেখে স্ক্রিপ্ট হাতে ' সতের বছর পর মুচুকুন্দ রাজা প্রেমে মরেছি যখন ' চরিত্রে নাট্যকার আওরঙ্গজেব স্যারের ক্রিপ্ট হাতে চিরতরে হারিয়ে গেলেন।

সময়ের গেল ষোলো বছর পর সতের বছরে যাদবশত্রু কালযবন দুষ্টু প্রেমিকা নীলা বশে রাজা মুচুকুন্দ বেশে হেঁটে চলেছি এখন।

লেখক: রাজীব কুমার দাশ। প্রাবন্ধিক ও কবি পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত