শিক্ষার্থীর এসআইএফ সংশোধনের মাধ্যমে
মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ২০:২৫ আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ২০:৩১
শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম (এসআইএফ) সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে তিন জনের যেকোন একজনের নাম দিয়ে ফরম পূরণ করা যাবে। সবধরনের ফরম সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রকাশিত রায়ে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা অথবা ‘মা’ অথবা ‘আইনগত অভিভাবকেরনাম যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে এক শিক্ষার্থী তার তথ্যফরমে অত্যাবশকীয় বাবার নাম পূরণ করতে না পারার কারণে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের এক ছাত্রীকে এসএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ওই শিক্ষার্থীর বাবা তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তার মা তাকে লালনপালন করে বড় করেন। ব্লাস্টসহ তিনটি মানবাধিকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কাজ করা হয়। তারা ২০০৯ সালের ২ আগস্ট ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট করে। ওই রিটের প্রেক্ষিতে আদালত তখন রুল জারি করেছিলেন।
একইসঙ্গে বর্তমানে কোন কোন শিক্ষাবোর্ড শিক্ষার্থীর বাবা-মা উভয়েরই তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে জোর দেয় তার তালিকাও চায় আদালত। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থী তাদের বাবার নাম প্রকাশ করতে চায় না, তাদের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কী ব্যবস্থা আছে, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েও প্রতিবেদন তাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ৬ জুন মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্ট আবেদনকারীদের পক্ষে একটি সম্পূরক হলফনামা আবেদন আকারে দাখিল করে। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৯ জানুয়ারি সকালে হাইকোর্ট এই রায়ের দিন ২৪ জানুয়ারি ধার্য করেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, এই রায়ের ফলে মায়ের অধিকারও আংশিক প্রতিষ্ঠিত হলো। আর মা-বাবার পরিচয়হীন যেকোনো শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হলো।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, এস এম রেজাউল করিম ও আইনজীবী আয়শা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
আইনজীবী আয়শা আক্তার বলেন, রাজশাহী বোর্ডের অধীন এসএসসির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণে বাবার নাম দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তখন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে বাবা এবং মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। বৈষম্যমূলক এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়েছিল। অভিভাবক হিসেবে এখনো শিক্ষাক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে বাবা এবং মায়ের নাম লিখতে হয়। রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সব ফরম পূরণ করা যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষা বোর্ডের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক হিসেবে যেকোনো একটি পরিচয় উল্লেখ করে ফরম পূরণ করা যাবে।
আইনজীবী বলেন, যখন রিটটি করা হয়, তখন শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। ফরমে অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম উল্লেখ করা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব ফরম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান ফরমে পূরণে বাবা অথবা মায়ের নাম উল্লেখ করার বিধান রয়েছে।
এই মামলায় যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদের একজন রিটকারী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক প্রথা দূরীকরণের ক্ষেত্রে এই রায়টি যুগান্তকারী। প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশের অধিকার এবং শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিতে এই রায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। লিঙ্গভিত্তিক সকল বৈষম্য দূরীকরণের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি পূরণে এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন নিশ্চিতকরণে আজকের এই রায়ের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই আইন ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবায়নে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। অনলাইনে যতগুলো ফরম আছে, সেখানে সব জায়গায় বাবার নাম বাধ্যতামূলক করা আছে। অথচ অনেক জায়গাতেই আইনে এর প্রয়োজন নেই। এগুলো নিয়ে এখন কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমএইচ