বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে পূর্বের নিয়ম বহালের দাবি বিপিএমসিএ’র
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ১৬:৩০ আপডেট : ২১ জুন ২০২৩, ০৯:০০
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ার কারণে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। এসব সঙ্কটের কথা তুলে ধরে অবিলম্বে অটোমেশনের পরিবর্তে পূর্বের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানিয়ে ২০ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে বিপিএমসিএ।
আরো পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে নৈরাজ্য, হতাশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি ও সভাপতি এমএ মুবিন খান স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিডের মত অতিমারী সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এবার বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি গত ১৮ জুন ১০০ টাকা জমা দিয়ে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়নের শেষ তারিখে মাত্র তিন হাজার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কনফার্ম করেছে। এতে সব বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ আসন পূর্ণ হবে না বলে আমাদের ধারণা। অটোমেশন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় কলেজ ছাত্র-ছাত্রী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, এ বছর ৪৯ হাজার ছাত্র-ছাত্রী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের মধ্যে বেসরকারি মেডিকেলের ভর্তির জন্য যখন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, তখন মাত্র ৬ হাজার ৩২০টি আবেদন পাওয়া যায়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর আসন সংখ্যা হচ্ছে ৬ হাজার পাঁচশর মতো। এতে ১ঃ১ অনুপাতে মেধাক্রম অনুযায়ী আসন সংখ্যা পূর্ণ হয়নি। ভর্তি নীতিমালায় বলা আছে ১ঃ৫ অর্থাৎ একটি আসনের বিপরীতে ৫ জন প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে একটি আসনের জন্য এখন ১ জন শিক্ষার্থীও নেই। সবকিছু মিলিয়ে বিশৃঙ্খল একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী সরকার ভর্তি করে দেয়ার নির্দশন নেই। এমনকি বাংলাদেশেও এ ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই। ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য মতে দেখা যায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রথম বর্ষ হতে ইন্টার্নশিপ পর্যন্ত এই মুহূর্তে ১২ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী এমবিবিএস কোর্সে অধ্যয়ন করছে। এতে দেশ ২০০ মিলিয়নেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, যা বিশ্বের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে। সুতরাং চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের অর্জন এবং গৌরবের কারণ যে অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা সেক্টরে এত বিশাল সংখ্যায় বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে না বা বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী আসে না। তাই সার্বিক বিবেচনায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পূর্বের ভর্তির নিয়ম বহাল রাখার বিকল্প নেই।
আবেদনে বলা হয়, একজন অভিভাবক তার সন্তানকে নিজ অর্থে ঢাকায় পড়াতে আগ্রহী থাকলে এখানে সে অটোমেশনে ঢাকার বাইরে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলে সেই ক্ষেত্রে তার মেডিকেল শিক্ষার প্রতি অনীহা তৈরি হবে। বেসরকারি মেডিকেলের মত ব্যয়বহুল শিক্ষায় যারা পড়তে ইচ্ছুক তারা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে নিজেদের পছন্দের কলেজে পড়তে চায়। কিন্তু অটোমেশনের ফলে তাকে যদি এমন মেডিকেলে দেয়া হয় সেটা তার জন্য পছন্দনীয় নয়, এতে তার মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করবে। ফলে তারা মেডিকেলে ভর্তি হতেই অনিচ্ছুক হয়ে পড়ছে। এ কারণে অটোমেশন প্রক্রিয়ার পরিবর্তে পূর্বে প্রচলিত ভর্তি ব্যবস্থাই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষ উভয়ের জন্য সুবিধাজনক।
এসব সঙ্কট তুলে ধরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় তা নিরসন করে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে অটোমেশনের পরিবর্তে পূর্বের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অটোমেশন: ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে