স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা
করোনার চিকিৎসায় অবদানের স্বীকৃতি সনদ পেল আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ২২:৩২ আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ২৩:২১
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে করোনা চিকিৎসায় প্রথম এগিয়ে আসায় আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে স্বীকৃতি প্রদান করে সনদপত্র দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকহাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান এমপির হাতে এই সনদপত্র তুলে দেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রথম দিকে কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল কোভিড হাসপাতাল তৈরি করতে চায়নি। ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল কর্মী সবাই ভয়ের মধ্যে ছিলেন। এসময় প্রথম এগিয়ে আসেন আনোয়ার হোসেন খান এমপি। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।তিনিই প্রথমতার হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল বানান। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলেবাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের দেশের করোনা চিকিৎসায় অবদান রাখার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানো হয়। বিশ্বের ১০০ বছরের ইতিহাসে কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন, ভ্যাকসিন সংক্রান্ত অভাবনীয় সাফল্য এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে সম্পৃক্তকরণ ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা প্রদান ও কোভিড মোকাবেলায় অবদান রাখার জন্য বেসরকারি হাসপাতালকে স্বীকৃতি প্রদানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
করোনার চিকিৎসায় অবদানের স্বীকৃতি সনদ পেল আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। নিজস্ব ছবি
করোনা চিকিৎসায় অবদান রাখায় বিপিএমসিএ'র পক্ষ থেকে কোভিড হিরো হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হেসেন খান এমপিকে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মুবিন খান, গ্রীণ লাইফ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মাইনুল আহসান, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হসপিটালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্ত্তী, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতানের চেয়ারম্যান ডা. মোয়াজ্জম হোসেন, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. গাজী মিজানুর রহমান, রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল আহসান সরকার, ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের পরিচালক উলফাত জাহান মুন, রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান নিলু আহসান ও তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুল হকসহ আরওকয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেসম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএমসিএ'র সভাপতি এম এ মুবিন খান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিপিএমসিএ'র সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ার হেসেন খান মডার্ণ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আনোয়ার হোসেন খান এমপি।স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম,স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মো. টিটো মিঞা, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. মো. জামালউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। দেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যখাতের ভুমিকা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে দৈনিক অন্তত ১০ লক্ষ এবং বছরে ২৪ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকারের এই বিনামূল্যে চিকিৎসার গড় হিসাব করা হলে দেখা যাবে, বছরে সরকার ১২ বিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। সরকারের এই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা যদি বিদেশে নিতে হত তাহলে মানুষের খরচ হত ৬০ বিলিয়ন ডলারের। অন্যদিকে দেশের প্রাইভেট মেডিকেলগুলো বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষকে দিচ্ছে। কিন্তু এই সেবাগুলো যদি দেশের প্রাইভেট হাসপাতালের পরিবর্তে বিদেশ থেকে নেয়া হতো তাহলে মানুষকে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে যেত।
করোনার চিকিৎসায় অবদানের স্বীকৃতি সনদ পেল আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। নিজস্ব ছবি
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমরা আজ বিশ্বের ৫ম স্থান পেয়েছি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এই কৃতিত্ব আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকভাবে কাজ করায় আমরা আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছি। আজ আমাকে যেভাবে সংবর্ধনা দেয়া হলো এটি আমি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) গোটা চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের পক্ষে গ্রহণ করে সম্মানিত বোধ করছি। এর মাধ্যমে গোটা চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যখাতকে যেভাবে সম্মান দেয়া হল সেজন্য আমি বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রায় ৫ হাজারের অধিক বেসরকারি হাসপাতাল প্রায় ৬২% স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা মহামারীকালে নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মানবিক কর্মপ্রয়াস পরিচালনা করার স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন সেবাদানকারী বিশিষ্ট ব্যক্তির মর্যাদা প্রদান করেন এবং কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে মানবিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় প্রাইভেট মেডিকেলের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্মাননা সনদ প্রদান করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, কোভিড মোকাবিলায় বেসকারারি হাসপাতাল যে নজিরবিহীন অবদান রেখেছে তা অনন্য। বেসরকারি হাসপাতালকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকারকে আরো ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ বেসরকারি খাতকে বিচ্ছিন্ন রেখে স্বাস্থ্যখাতকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব না।
স্বাগত বক্তব্যে বিপিএমসিএর সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান বলেন, প্রথম স্বরণ করতে চাই জাতির পিতা বঙ্গুবন্ধুকে। বঙ্গুবন্ধু আমাদের দেশ দিয়েছেন। আমাদের মানচিত্র দিয়েছেন।তিনি বলেন, ২০২০ সালের সন্ধ্যা আর আজকের সন্ধ্যা এক ছিল না। আজকের বিকালের স্নিগ্ধতা আছে, আনন্দন আছে। ২০২০ সাল ছিল মানুষের হাহাকার, করোনাকালিন সময়ে আমরা আমাদের অনেক বন্ধু হারিয়েছি, আত্মীয়স্বজন হারিয়েছি। করোনার ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না।তিনি বলেন, আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ কলেজ সবার আগে করোনার চিকিৎসায় এগিয়ে আসে। আমরা অনেক প্রতিকূলতা সত্বেও চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের পথ দেখিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালিন সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে। বেসরকারি হাসপাতাল হিসাবে আমি প্রথম করোনার চিকিৎসা দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
আনোয়ার খান এমপির হাতে সনদ তুলে দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নিজস্ব ছবি
সভাপতিরবক্তব্যে বিপিএমসিএ'র সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো পর্যাপ্ত কোভিড ডেডিকেটেড শয্যা, আইসিইউ, অক্সিজেন, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে করোনা মোকাবিলায় সফল হয়েছে। বাংলাদেশ করোনা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সফলতা দেখিয়েছে। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকাদানের আওতায় আনা হয়। এ পর্যন্ত পাঁচ বছরের বেশী ৯৬ শতাংশ মানুষ করোনার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে বিপিএমসিএর পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়। এছাড়া পপুলার মেডিকেল কলেজের মোস্তাফিজুর রহমানকে সম্মাননা দেয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের মাধ্যমে শেষ হয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/আরকে