ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ডিজিটাল মার্কেটিং কী?

  সাজেদুর আবেদীন শান্ত

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২২, ০২:৪৯

ডিজিটাল মার্কেটিং কী?

ডিজিটাল মার্কেটিং কিংবা অনলাইন মার্কেটিং বলতে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রমোশনাল ব্রান্ডিং-এর জন্য পটেনশিয়াল কাস্টমার বা কনজিউমার অনলাইনের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়ায়াকেই বোঝায়। কনটেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, পেইড বিজ্ঞাপন, ই-মেইল মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং, ওডিও মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অংশ। এটা শুধুই অনলাইন, ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা ওয়েবসাইট এডভার্টাইজমেন্ট-এর মাধ্যমে হয়ে থাকেনা বরং মাল্টিমিডিয়া মেসেজ ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর অংশ। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং আমাদের ব্যবসায়িক সেক্টরের জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরূপ কেননা আমাদের ব্যবসাকে সহজলভ্য ও আইটেম কাস্টমাইজভাবে পণ্যের বণ্টন অনলাইনের মাধ্যমে দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে আমরা খুব দ্রুত অনলাইন কাস্টমার খুঁজে পাওয়াকে বুঝি। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্বন্ধে আমাদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা খুব বেশি নেই বললেই চলে। ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে মূলত ডিজিটাল পণ্য একটি ক্রেতা কেন কিনবে তার কারণ গুলো খুঁজে পেতে সাহায্য করে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বুস্টিং, ক্যাম্পেইন ডিজিটাল মার্কেটিং-এর একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে, কেননা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ও ব্যবহার করার হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সাফল্যের সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা, সঠিক জ্ঞান এবং সেবা মান উন্নয়ন আপ টু ডেট রাখা সহজ হচ্ছে।

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেন্টিং আমাদের ব্যাবসায়িক সেক্টরের জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। যার প্রভাবে আমরা একজায়গায় থেকে গ্রাহকের কাছে না গিয়েও সকল ইনফরমেশন দেয়া ও নেয়া যায়। যার ফল হিসেবে আমরা মার্কেটিং কষ্ট কমাতে পারি। স্বল্প সময়ে একটা বিশাল এরিয়া ব্যাপী সহজে ব্যবসা করা সম্ভব হয়। ব্রান্ড ডেভেলপমেন্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার যত ব্রান্ড ভ্যালু বেশি তার তত মার্কেট চাহিদা বেশি। আর এটা করার জন্য অনেক ক্যাম্পেই করা, বিভিন্ন ফেস্ট করা দরকার হত কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং আসার পরে এইসব প্রোগ্রাম করার জন্য আলাদা আলাদাভাবে কোন কিছু করতে হচ্ছে না সব কিছু একই প্লাটফর্ম এ করা সম্ভব হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অবস্থান?

ডিজিটাল মার্কেটিং জনগণের কাছে খুব দ্রুত বৈশ্বিক ভাবে যেকোনো পণ্য অথবা সেবা মানুষের দ্বারে দ্বারে ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহায়তায় খুব সুন্দরভাবে পৌঁছে দিতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে যেকোনো প্রচলিত ব্র্যান্ড কোম্পানির নতুন পণ্য সম্বন্ধে মানুষের কাছে দ্রুত গতিতে অনলাইনের মাধ্যমে পরিচিত হতে পারে এবং এই সুবাদে যেকোনো কোম্পানি তার ভাবধারা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।

বর্তমানে আমাদের প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীলতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ই-ফ্রিল্যান্সিং এ কর্মরত কম্পিউটার এবং তথ্য গবেষণা বিজ্ঞানী, ফাইজা ইসলাম নাহিন মনে করেন বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিং ই-কমার্স সাইটের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। যেখানে এস.ই.ও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন), ওয়েব ডিজাইনিং, ইমেইল মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অংশ হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে গবেষণা বর্তমানে অনেকাংশেই বেড়ে চলেছে। আমাদের, সমাজে ডিজিটাল মার্কেটিং দিন দিন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

সময়ের সঙ্গে আমাদের ব্যবসাকে অনলাইনে দ্রুত অল্প সময়ে প্রসারের ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কোন গ্লোবাল ব্যবসাকে দ্রুত এক দেশের মানুষ থেকে অন্যদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর বিকল্প কোন মাধ্যম নেই।

এফ.এম. তোফায়েল আহমেদ, ই-ফ্রিল্যান্সিং-এর বর্তমান গবেষক ও তথ্য উপদেষ্টা জানান, এফিলিয়েট মার্কেটিং ই-কমার্স সাইট গুলোতে দিন দিন বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে আমাদের ই-কমার্স সাইটগুলো ব্র্যান্ড এওয়ারনেস, লিড জেনারেশন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আনা, টার্গেট কাস্টমার খুঁজে পাওয়া এবং পুরাতন কাস্টমারকে পুনরায় সংযুক্ত করণ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণাও ডিজিটাল মার্কেটিং এ বাংলাদেশের প্রবাহমান ধারাকে উদ্বুদ্ধ করণে বিশেষ ভূমিকা ভবিষ্যতে রাখতে পারে। অনলাইনে উচ্চ প্রতিযোগিতার মাঝে ডিজিটাল বিপণ প্রচারাভিযান ভালোভাবে চিন্তা করা উচিৎ। মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য শুধুমাত্র লোভনীয় মিথ্যা অফার ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।

সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করাও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখায়। বাংলাদেশে সরকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ও আইসিটি আইন জোরদারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ডিজিটাল অপরাধ প্রবণতা দিন দিন কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের সমাজে ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো নিরাপত্তা ও সুরক্ষা অতি বাঞ্ছনীয় এবং কৌশলগত দিক থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার মাধ্যমে অনেকাংশেই ডেটা সুরক্ষা এবং অনলাইনের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তোলা যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং-এর গুরুত্ব?

আর্ফিয়াস আল-দ্বীন, ই-ফ্রিল্যান্সিং ডটকম-এর বর্তমান সিইও বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, যেখান থেকে উত্তরণের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে ডিজিটাল মার্কেটিং। বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসা সম্ভব এবং এখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়ার ও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক প্রগতিশীল দেশ উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে খুব অল্প সময়েই। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর নেতিবাচক প্রভাব-এর প্রসারকে সামগ্রিক অর্থে ব্যাহত করতে পারে বলে ধারণা করা যায়। ঘরে বসেই আয় করবার সহজ পদ্ধতি ডিজিটাল মার্কেটিং।

এখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব বেশি প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে মেধাবীও তরুণ কর্ম দক্ষতায় পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম স্থান দখল করে রেখেছে। আমরা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজের মাধ্যমে ডলার কারেন্সি আনতে পারি, যেটা আমাদের পরিবার ও রাষ্টের বিশেষ উপকারে আসবে। ডিজিটাল মার্কেটিং- এর তাৎপর্য উপলব্ধি করে, বর্তমানে ই-ফ্রিল্যান্সিং যুব সমাজকে সাথে নিয়ে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে।

সাধারণ মনেই কী?/কোথায়?/কেন?/কখন? - এই প্রশ্নগুলো ডিজিটাল মার্কেটিং-এর কাস্টমার খুঁজতে ও প্রোডাক্ট বিক্রি প্রসারে অনেক কাজে দেয়। চিফ বিজনেস অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম (ই-ফ্রিল্যান্সিং ডট কম), বর্তমানে কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক লাভ বাড়ানো যায়, অনলাইনের মাধ্যমে মার্কেট-এর প্রসার, ডিজিটাল পণ্য তৈরিতে কিভাবে মূল্য নির্ধারণ করা যায়, এবং অনলাইন ওয়েবসাইটে জনগণের উন্নত ফিচার সংযুক্তের মাধ্যমে প্রাধান্য কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

তার মতে, মানুষের অনলাইন সেবা ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সেইজন্য বিভিন্ন অনলাইন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে দিনদিন বিশেষ গুরুত্বের জায়গা তৈরি করে নিতে পারছে। ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওয়েবসাইটের ট্রাফিক আনা, ওয়েব সাইডের ট্রাফিক বা ভিজিটিং ই পারে পণ্য বিক্রিতে সাহায্য করতে।

তাই এই ট্রাফিক আনবার দুইটি মাধ্যমই ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে জানা যায় খুব সহজে। তার, মধ্যে একটি হলো, ১। পেইড মাধ্যম (যেখানে বিভিন্ন প্লার্টফর্মকে টাকার বিনিময়ে বুষ্ট করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়) ২। অন্যটি হচ্ছে অরগানিক মাধ্যম (যেখানে সার্চ প্লাটফর্ম ব্যবহার করেই সাধারণ মানুষ নিজ নিজ পছন্দের প্রোডাক্ট খুঁজে নেয়)।

ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে সমালোচনা

ডিজিটাল মার্কেটিং আমাদের মনের অগোচরে সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়। ডিজিটাল মার্কেটিং সম্বন্ধে সঠিক ধারণা থাকলেই আমরা ক্রেতাদের ভরসা অর্জনের পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্য বাজারে লাভজনকভাবে নিয়ে আসতে সক্ষম হবো। ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে আমাদের সমাজে ইতিবাচক প্রভাবের সাথেও কিছুটা নেতিবাচক ধারণা নিয়ে রয়েছে।

বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্রতারণা ও অনলাইনে কাঙ্ক্ষিত সেবা আশানুরূপ না দেয়ার কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি নেতিবাচক ধারণায় পরিণত হয়েছে। চীফ রিসার্চার (ই-ফ্রিল্যান্সিং ডটকম) নাতাসা ইয়াসমিন আফিফার মতে, কে আমাদের ক্রেতা?, কি আমাদের সমস্যা এবং কি আমরা অনলাইনের মাধ্যমে সেবা দিবো এবং অনলাইনের মাধ্যমে নতুন নতুন ধারণা তৈরির মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বড় বড় সমস্যা কিভাবে সমাধান করব তা কেবলই ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার মাধ্যমেই সম্ভব। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর যথেষ্ট ধারণা না থাকার ফলে অনলাইন ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল মার্কেটিং-এর উপরে বিভিন্ন কোর্স ও তথ্য সেবা অন্বেষণ করেই চলছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখানোকে সময়ের সাথে গুরুত্ব দেয়া খুবই প্রয়োজন বর্তমান এই অনলাইন যুগের সাথে।

ডিজিটাল সেবা যে শুধু কোম্পানির পণ্য বিক্রির জন্য নয় বরং গ্লোবালি একদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অন্য দেশের মানুষের নিকট তুলে ধরার ও একটি মাধ্যম বটে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ একটি মূল ধারার বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা ও ব্যাবসায়িক মনোভাব ও ধৈর্য রাখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জটি হল নতুন কোন ক্রেতাকে ডিজিটাল পণ্যের সাথে যুক্ত করা।

পরিচয়: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত