সস্তায় মাছ পাবেন যেখানে
কথায় আছে 'মাছে ভাতে বাঙালি'। মাছ ছাড়া ভোজনরসিক বাঙালির খাওয়াা যেন পূর্ণতা পায় না। কিন্তু নগরায়নের এই যুগে হাওর-বাঁওড় ও গ্রামাঞ্চলের জলাশয়ে দিন দিন কমছে মাছের পরিমাণ। বাজারে মাছের দাম আকাশচুম্বী। নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের কাছে বাজার থেকে টাটকা মাছ কিনে খাওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতো।
গ্রামাঞ্চলে টাটকা মাছ সুলভ এবং দাম তুলনামূলক কম হলেও রাজধানী ঢাকায় ততটা সহজ নয়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুরের মাছ বাজার। ‘সুলতান শাহ মৎস্য আড়ৎ ’ নামের বাজারটি লোকজনের কাছে আব্দুল্লাহপুর মাছ বাজার নামেই পরিচিত। যারা এখনো সেখানে যাননি, তারা একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন, তাতে নিজের কাছে পরিষ্কার হবে এই বাজারের তফাতটা।
আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধের এই বাজারে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়। পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছও। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানসহ পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য এখানে পাওয়া যায় টাটকা মাছ। দাম অন্যান্য বাজারের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। বাজারটি মূলত পাইকারি মাছের আড়ৎ হলেও আশপাশের লোকজন সস্তায় টাটকা মাছ কিনতে ছুটে আসেন এই বাজারে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই মাছ আসে রাতভর। ভোরে শুরু হয় বেচাকেনা। সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় মাছ বিক্রি। আশপাশের বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ও ফেরি করে যারা বাসাবাড়িতে মাছ বিক্রি করেন, তারা ভোরেই চলে আসেন পছন্দসই মাছ কিনতে। আড়তদারদের হাঁকডাকে ভোর থেকেই জমে উঠে মাছ বিক্রি। দর-কষাকষির তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। যারা মাছ কিনতে আসেন, তারা জানেন এখানকার দামের বিষয়টি।
মাছের দাম
ছোট, বড় ও মাঝারি সব ধরনের মাছ পাওয়া যায় এ বাজারে। দাম নির্ভর করে মাছের আকারের ওপর। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। আর ছোট আকারের ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৪০০/৫০০ টাকা। বোয়াল মাছ আকারভেদে ২৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। এ ছাড়া বড় আকারের রুই মাছ ৪০০ টাকা কেজি, ছোট আকারের ১৫০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কাতল ১৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বড় গলদা চিংড়ি ৪০০-৫০০ টাকা, ছোট ২৫০ টাকা কেজি। চিতল মাছ বড় ৪৫০-৫০০ টাকা, ছোট ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তেলাপিয়া বড় ১২০ টাকা, ছোট ৮০-৯০ টাকা; কার্পু ১০০-১৫০ টাকা; পোয়া মাছ ২০০-২২০ টাকা; ব্রিগেড মাছ ১০০-১২০ টাকা, গ্রাস কার্প ১৫০-১৭০ টাকা, শিং ২০০-৫০০ টাকা, কোরাল ২৫০-৫০০ টাকা, পাঙ্গাস ১০০-১২০ টাকা, সাগরের বাইলা ২৫০-৪০০ টাকা, শোল ২৫০-৫০০ টাকা, লইট্টা ১০০ টাকা কেজি।
বাজারের সবচেয়ে দামি মাছ আইড় । আট-দশ-১০ কেজি ওজনের একটি আইড় মাছ ৮০০-১০০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
অন্যান্য দিনের চেয়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাজার বেশি জমজমাট থাকে। তবে মাসের শেষ দিকে মাছের দাম কিছুটা কম থাকে বলে জানান এখানকার আড়তদাররা।
মাছ কাটার ব্যবস্থা
যাদের বাসায় মাছ কাটার সমস্যা আছে, তারা চাইলে মাছ কেটে নিতে পারেন এখান থেকে। এখানে বড়-ছোট সব ধরনের মাছ পছন্দমতো কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাজারের উত্তর পাশে গোটা দশেক বঁটি নিয়ে মাছ কাটার জন্য বসেন একদল যুবক। বড় সাইজের যেকোনো মাছ কাটতে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে দিতে হয় তাদের। তবে ছোট মাছের ক্ষেত্রে খরচটা একটু বেশি। ছোট মাছ যেমন, শিং, কই, শোল ইত্যাদি মাছ কাটতে ২০ টাকা করে দিতে হয় কেজিপ্রতি।
/এসবি/