ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ আপডেট : ৬ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

টিন সার্টিফিকেট কী, কেন ও অনলাইনে কীভাবে করতে হয়?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫২  
আপডেট :
 ২০ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৯

টিন সার্টিফিকেট কী, কেন ও অনলাইনে কীভাবে করতে হয়?
ছবি: সংগৃহীত

অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে লোন কিংবা সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিতে কিংবা কর পরিশোধ করতে প্রয়োজন হয় আয়কর নিবন্ধন সনদ বা টিন সার্টিফিকেট। বর্তমান সময়ে এখন অনলাইনেই সব করা যায়। আপনি অনলাইনে কয়েক মিনিটেই ই-টিন সার্টিফিকেট করে নিতে পারেন। এর জন্য কোনো ফি প্রয়োজন হবে না।

একজন ব্যক্তি মাত্র একবারই টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন। কোনোভাবেই আপনি ডুপ্লিকেট আয়কর নিবন্ধন বা টিন করতে পারবেন না। একবার টিন সার্টিফিকেট করা হলে আয়কর নিবন্ধন ওয়েবসাইটে লগইন করে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। আপনি নিজের নামে কিংবা আপনার কোম্পানির নামে কীভাবে টিন সার্টিফিকেট করবেন, তা বিস্তারিত আলোকপাত করছি।

মনে রাখবেন, ডাউনলোড করা টিন সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে আয়কর নিবন্ধন ওয়েবসাইট থেকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে আবার টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। তাই ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড যত্নসহকারে সংরক্ষণ করুন।

টিন সার্টিফিকেট কী?

টিন বা টিআইএন-এর পূর্ণরূপ হলো, ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার। এটি একটি বিশেষ নাম্বার, যার সাহায্যে বাংলাদেশে করদাতাদের শনাক্ত করা হয়। টিন সার্টিফিকেট মূলত করদাতাদের নাম্বারটিই বহন করে থাকে। অর্থাৎ, টিআইএন বা টিন সার্টিফিকেট একজন করদাতার পরিচয়পত্রের মতোই কাজ করে।

টিন সার্টিফিকেট কেন করবেন?

করদাতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালু করেছে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কয়েকটি সহজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে আপনি একটি ডিজিটাল টিন সার্টিফিকেট পাবেন। এখানে আপনাকে ১২ ডিজিটের একটি টিন নাম্বার প্রদান করা হবে।

যারা আগে টিন সার্টিফিকেট করেছেন কিংবা যাদের টিন নাম্বার ১২ সংখ্যার কম, তাদের নতুন টিন সার্টিফিকেট করতে হবে। অর্থাৎ, তারা রি-রেজিস্ট্রেশন করে ১২ ডিজিটের টিন নাম্বার গ্রহণ করবেন।

কীভাবে আপনি ইনকাম ট্যাক্স ফরম বা ফাইল পূরণ করবেন

আপনি নিজেই অনলাইনে http://nbr.gov.bd/form/income-tax/eng লিংকের মাধ্যমে আপনার ইনকাম ট্যাক্স-এর আবেদন করতে পারবেন। এখানেই ফরম বা ফাইল পাওয়া যাবে।

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করতে কী কী লাগবে?

টিন সার্টিফিকেট করার জন্য প্রয়োজন হবে:

১. জাতীয় পরিচয়পত্র

২. মোবাইল নাম্বার ও

৩. কোম্পানীর ক্ষেত্রে আরজেএসসি নাম্বার ইত্যাদি।

অনলাইনে আয়কর নিবন্ধন করার জন্য এই তথ্যগুলো লাগবে।

যেভাবে করবেন টিন

আয়কর প্রথম ধাপ হচ্ছে আয়করের টিন সার্টিফিকেট মানে Tax Identitification Number ( ট্যাক্স সনাক্তকরণ নাম্বার)। এই সার্টিফিকেটে করদাতার TIN Number, নাম ঠিকানা ও বিভিন্ন তথ্যাদিসহ করদাতা কোন অঞলের কোন সার্কেলে আয়কর জমা দিতে হবে তা উল্লেখ থাকে।

একজন করদাতাকে আয়কর জমা করতে হলে সবপ্রথম Registration করতে হয়। এই Registration তথা TIN Certificate-তে TIN নাম্বার সার্কেল নাম্বার, আয়কর অঞ্চল, করদাতার নাম ঠিকানা সহ ব্যক্তিগত তথ্যাদি আয়কর রিটার্ন তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ।

পূর্বেকার সময়ে টিন নাম্বার ছিল ১০ সংখ্যা ডিজিটের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১ জুলাই ২০১৩ হতে পুরনো ১০ ডিজিটের পরিবর্তে নতুন ১২ ডিজিটের টিআইএন চাল করেছে। এটি মূলত অনলাইন ভিক্তিক Registration পদ্ধতি, তাই এটিকে e-TIN পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরোনো করদাতাগণ Re-registration এবং নতুন করদাতাগণ Registration এর মাধ্যমে ১২ ডিজিটের e-TIN গ্রহণ করতে পারবেন।

e-TIN পদ্ধতিতে টিন নাম্বার গ্রহণের জন্য করদাতাদেরকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ওয়েবসাইট www.incometax.gov.bd ব্রাউজ করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান সাপেক্ষে Registration/Re-Registration করে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। e-TIN পদ্ধতিতে Registration/Re-Registration করতে হবে। ইউজার আইডি তৈরি করার জন্য www.income.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে Registration মেনুতে ক্লিক করতে হবে। Registration মেন্যুতে ক্লিক করার পর User Registration Form নামক একটি ফরম ডিসপ্লেতে আসবে ।

User Registration Form:

১. User ID: ইউজার আইডিতে যে নামে ইন করতে ইচ্ছা হবে সে নাম লিখতে হবে এবং নামটি অবশ্যই কমপক্ষে ৮ সংখ্যার হতে হবে।

২. Password: গোপনীয়তার জন্য পাসওয়ার্ড দিতে হয় এবং অবশ্যই কমপক্ষে ৪ সংখ্যা হবে।

৩. Retype Password: পুনরায় পাসওয়ার্ডটি লিখতে হবে।

৪. Security Question : পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে পুনরায় তা উদ্ধার করার জন্য মনে রাখার মতো সহজ Security Question সিলেক্ট করতে হবে।

৫. Security Answer: এখানে Security Question এর সঠিক উত্তরটি লিখতে হবে।

৬. Country: এখানে সে সকল ভিনদেশী নাগরিক যারা বাংলদেশে অবস্থান করেছেন, শুধুমাত্র সে সকল বিদেশীদের জন্য স্ব স্ব দেশের নাম সিলেক্ট করতে হবে।

৭. Mobile Number: এখানে করদাতার সক্রিয় মোবাইল নাম্বারটি দিতে হবে, কেননা এই নাম্বার টিতে স্বয়ংক্রিয় Activation কোড নাম্বার আসবে যেটি পরবর্তীতে Activation বক্সে লিখতে হয়। উল্লেখ্য একটি নাম্বার দ্বারা শুধুমাত্র একটি আইডি খোলা যাবে, অতএব যে নাম্বার দ্বারা ইতিপূর্ব ইউজার আইডি খোলা হয়েছিল সেটি দ্বারা ২য় বার খোলা সম্ভব নয়।

৮. E-mail ID: করদাতা তাঁর ইমেইল আইডি দিতে পারেন ( আবশ্যক নয়)।

৯. Verification letters: এই টেক্সট বক্সটির উপরে প্রদর্শিত সঃখ্যা বা অক্ষরগুলো সঠিকভাবে লিখতে হবে। যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে Try another বাটনে ক্লিক করে পুনরায় প্রদর্শিত সঃখ্যা বা অক্ষরগুলো লিখতে হবে।

ফরমটির সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর Regrister বাটনে ক্লিক করলে মোবাইল নাম্বারে SMS এর মাধ্যমে একটি কোড পাঠানো হবে এবং স্ক্রীনে Mobile Activation নামে ফরমটি প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শিত ফরমের e-TIN Activation Code টেক্সট বক্সে SMS মাধ্যমে প্রাপ্ত Activation Code লিখে Activate বাটনে ক্লিক করলে ইউজার তৈরির কার্য কার্যক্রমটি সম্পন্ন হবে।

TIN Registration/Re-Registrtion এর জন্য সিস্টেমে সরাসরি লগ ইন হবে । করদাতা ইচ্ছা করলে পরবর্তীতে যে কোন সময় User ID এবং Password এর মাধ্যমে সিস্টেমে লগ ইন করতে পারবেন।

TIN Registration/ Re-Registration:

পুরাতন করদাতা যাদের এখনো ১০ ডিজিটের TIN রয়েছে কিংবা যারা নতুন করদাতা তাদেরকে Registration করতে হলে বাম দিকের মেনুতে TIN Application বাটনটি ক্লিক করলে স্ক্রীনে Registration/Re-registration ফরম আসবে। ফরমে নিম্নের তথ্যসমূহ সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

১. Tax Payer Status/করদাতা ধরনঃ

ক) প্রদত্ত option থেকে Individual -> Bangladesh Resident সিলেক্ট করতে হবে। যদি করদাতা বিদেশি হন তাহলে তিনি অন্য Option সিলেক্ট করতে হবে।

খ) যে সকল করদাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার রয়েছে তারা Individual->Bangladesh Resident->Major (with NID) সিলেক্ট করতে পারবেন। যদি করদাতা জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার না থাকে বা বিদেশি হন তাহলে তিনি অন্য Option সিলেক্ট করে TIN সংগ্রহ করতে পারবেন।

২. Registration Type/রেজিস্ট্রেশান ধরনঃ পুরাতন করদাতাগণ Re-Registration সিলেক্ট করবেন এবং নতুন করদাতাগণ Registration সিলেক্ট করবেন।

৩. Existing 10 TIN/বর্তমান টিআইএনঃ এখানে করদাতার ক্ষেত্রে ১০ ডিজিটের টিআইএন নাম্বারটি লিখতে হবে। এ পর্যায়ে যদি পুরাতন করদাতার ক্ষেত্রে সিস্টেম হতে করদাতার অধিক্ষেত্র অনুযায়ী সার্কেল নির্দিষ্ট করা যায়, কিন্তু পরবর্তীতে প্রদর্শিত General Information ফরমটি প্রদর্শিত হবে, অন্যথায় নতুন করদাতা ন্যায় অধিক্ষেত্র নির্বাচনের তথ্যের জন্য General Information ফরমটি পূরণ করতে হবে। General Information এ যে তথ্যগুলো অন্তভুর্ক্ত করতে হবে-

আয়ের প্রধান উৎসঃ করদাতার আয়ের প্রধান উৎস যেমন- চাকুরী, পেশা, ব্যবসা অথবা অন্যান্য আয়ের উৎস সিলেক্ট করতে হবে। কর্মস্থলঃ যে স্থানে করদাতার মূল উৎস যথাঃ চাকুরী, পেশা, ব্যবসা অথবা অন্যান্য আয় সম্পর্কিত কার্যাবলি তা নির্বাচন করতে হবে। যদি কোন করদাতার আয়ের উৎস চাকুরী হয় তবে তার কর্মস্থল যে জেলায় সে জেলা সিলেক্ট করতে হবে। আর যদি কোন করদাতার আয়ের উৎস ব্যবসা হয় তাহলে তিনি যে জেলায় ব্যবসা পরিচালনা করেন সে জেলা সিলেক্ট করতে হবে।

Type of Employer/Service Location: করদাতার আয়ের উৎস সার্ভিস হয় তাহলে তালিকা হতে প্রতিষ্ঠানের ধরণ অথবা প্রতিষ্ঠানের নাম সিলেক্ট করতে হবে। পরবর্তীতে উপরের সিলেকশনের উপর নির্ভর করে করদাতাকে প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে। যদি করদাতা পেশাজীবি হয় (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইজীবী, চ্যার্টাড একাউন্টেন্ট, আয়কর পেশাজীবি ইত্যাদি) যার যার নিজ পেশা সিলেক্ট করবেন।

Business (Individual/Firm): যদি করদাতার আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসা হয় (ব্যক্তি মালিকানাধীন) তাহলে ব্যবসার ধরণ প্রদর্শিত তালিকা হতে সিলেক্ট করতে হবে। কিন্তু যদি ব্যবসার ধরণ তালিকায় না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে Location সিলেক্ট করতে হবে এবং পরবর্তীতে ব্যবসার ঠিকানা প্রদত্ত তালিকা হত্র সিলেক্ট করতে হবে।

Other: যদি করদাতার আয়ের প্রধান উৎস চাকুরী, ব্যবসা অথবা পেশা ব্যতীত অন্য কিছু হলে তার বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী Location সিলেক্ট করতে হবে।

তথ্যসমূহ পূরণ করার পর Go to Next বাটনে ক্লিক করলে Basic Information পেইজ প্রদর্শিত হবে।জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর , ঠিকানা, ই-মেইল, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি তথ্যগুলো লিখতে হবে এই পেইজটিতে। এরপর তথ্যগুলো পূরণ করে Go to Next বাটনে ক্লিক করলে Submit Application নামক ফরম আসবে। এখানে প্রদক্ত তথ্যসমূহ ঠিক আছে কি না তা যাচাই করার সুযোগ রয়েছে। প্রদত্ত তথ্যে যদি কোন ভুল না থাকে তাহলে পুরাতন করদাতাদের ক্ষেত্রে I hereby affirm that all information given above is correct & complete এবং নতুন করদাতাদের ক্ষেত্রে ও I hereby affirm that all information given above is correct & complete এর বাম দিকে প্রদর্শিত চেকবক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে Submit Application বাটনে ক্লিক করতে হবে। প্রদত্ত তথ্যসমূহ সঠিক থাকলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ডাটাবেজের সাথে তথ্য যাচাই করে নাম্বারসহ পুরো তথ্য স্ক্রীনে প্রদর্শিত হবে। এ পর্যায়ে টিআইএন সার্টিফিকেট দেখার জন্য View Certificate বাটনে ক্লিক করলে স্ক্রীনে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রদর্শিত হবে।

লেখক:

শারমিন সুলতানা

শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস

একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস

তথ্য সংগ্রহ: আয়কর সহায়িকা: করবর্ষ ২০২১-২২

  • সর্বশেষ
  • পঠিত