কম খরচে বান্দরবান ভ্রমণের পরিপূর্ণ সহায়িকা
এসএম নাহিদুর রহমান
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:২৫
ছোট বেলা থেকেই ভ্রমণের প্রতি আমার অসম্ভব রকমের ঝোক। সুযোগ পেলেই চলে যাই মনের খাবারের খোঁজে। আর আমার মাথায় একবার যা ঢুকে সেটা না করা পর্যন্ত শান্তি পাই না।
এবার আসল কথায় আসা যাক। আমাদের এবারের টার্গেট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দারবান। অনেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভারতের দার্জিলিং যান। কিন্তু সৌন্দর্যের দিক থেকে বান্দরবান দার্জিলিং থেকে কোন অংশে কম নয়। বান্দরবানে শুধু শীতকালে বেড়াতে যাবে এমন কোন কথা নেই। ওখানে বর্ষাকালে মেঘ বেশী দেখা যায়। সারা বছরই পর্যটকরা ওখানে ভীড় করে। আমার এই লিখাটি পড়লে আপনারা বান্দরবান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য, পর্যটন স্পট, থাকা খাওয়া, খরচ ইত্যাদি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পাবেন। তাহলে শুরু করা যাক মিশন বান্দরবান।
দৃশ্য নং- ১ দুই বন্ধু রাসেল ও রিৃয়াজকে নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ২ টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য কুমিল্লা রেল স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন আসার কথা ২টা ৫৭ মিনিটে, আসলো ৫ টায়। বাংলাদেশের ট্রেনে কেউ সঠিক সমযে ভ্রমণ করেছেন বলে আমার জানা নেই। ট্রেন নিয়ে অনেক অনেক মজার মজার ঘটনা প্রচলিত আছে। সেদিন আমার যে ঘটনাটি মনে পড়ল তা হলো- এক বিদেশী ভদ্রলোক বাংলাদেশী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। দেখা গেল ট্রেন ৫ মিনিট আগেই স্টেশনে চলে এসেছে। ভ্রদলোকতো অনেক খুশি। তিনি বাংলাদেশ ট্রেনের প্রশংসা পঞ্চমুখ। এমন সময় তার বাঙ্গালী গাইড বলল, স্যার এটাতো গতকালের ট্রেন। যাই হোক কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া মাথাপিছু ৮০ টাকা। দুয়েকদিন আগে টিকেট না কাটলে সিট পাওয়া যায় না। তবে দাড়িয়ে যাওয়ার টিকেট যে কোন সময় পাওয়া যায়। ভাড়া একই। চট্টগ্রাম পৌছতে সময় লাগল সাড়ে তিন ঘন্টা। চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ২ মিনিট হাটলেই নিউমার্কেট মোড়। ওখান থেকে ছয় নাম্বার বাসে করে বহদ্দার হাট বাস স্ট্যান্ড। আর যারা বাসে করে চট্টগ্রাম যাবেন তারা শহরে নেমে সিএনজি করে বহদ্দারহাট যাবেন। সেখানে নাশতা সেরে উঠলাম বান্দরবানের গাড়ি পূরবীতে। এখান থেকে প্রতি আধা ঘন্টা পরপর বান্দরবানের গাড়ি ছাড়ে। এই স্টেশন থেকেই কক্সবাজারের গাড়ি ছাড়ে। বান্দরবানের ভাড়া ৭০ টাকা। বান্দরবান শহরে পৌছতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা। শহরে থাকার মত অনেক হোটেল আছে। ভাড়া হাতের নাগালে। আমরা মাঝাড়ি মানের একটি হোটেলে উঠলাম। তিন জনের প্রতি রাতে ভাড়া ৪০০ টাকা। খাওয়ার জন্য ও মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্ট আছে। ৮০-১০০ টাকার মধ্যে পেট পুড়ে খাওয়া যায়। যাই হোক হোটেলে ফ্রেশ হয়ে আমরা ৩ টার মধ্যে বের হলাম শহরের আশপাশের স্পটগুলো দেখতে। শহরের পাশে দেখারমত ৩টি স্পট আছে। স্বর্ণ মন্দির, মেঘলা ও নীলাচল। এই তিনটা স্পটে যেতে আপনাকে একটি বেবী রিজার্ভ করতে হবে। ভাড়া ৫০০ টাকা।
স্বর্ণ মন্দিরটি বৌদ্ধদের তীর্থস্থান। ওখানে ৫ শতাব্দি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে তৈরিকৃত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বৌদ্ধ মূতি রয়েছে। মন্দিরটি ওখানকার বৌদ্ধরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে। এটি দেখারমত একটি প্রাচীন নিদর্শন। বৌদ্ধমন্দির থেকে চলে যেতে হবে মেঘলা।
ওখানে আছে দুটি ঝুলন্ত সেতু, একটি ছোট চিড়িয়াখান। প্রবেশ ফি ১০ টাকা। তাছাড়া ওখানে পাহাড়েও হাটতে পারেন। পাহাড়ে ছোট দোকান আছে। দোকানে ডাব, কমলা, জাম্বুরা, পানি ইত্যাদি পাবেন। মেঘলা থেকে সোজা চলে যাবেন নীলাচল। বেবীতে করে উচু নিচু রাস্তা বেয়ে যেতে হয় ওখানে। এই রাস্তা দিয়ে যেতে মনে অনেক ভয় ভয় লাগে। রাস্তায় যানবহন প্রতি চাদা দিতে হয় ২০ টাকা, আর নীলাচলে ঢোকার টিকেট মাথাপিছু ৫ টাকা।
নীলাচলের সৌন্দর্য ব্যক্ত করার মত ভাষা আমার জানা নেই। তারপরও চেষ্টা করছি। আপনি যেখানে দাড়িয়ে থাকবেন তা সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার ফুট উপরে। চারিদিকে ছোটবড় পাহাড় থরে থরে সুসজ্জিত। যারা মাইক্রোসফটের মোটর রেস গেমটি খেলেছেন তার কিছুটা আঁচ করতে পাবেন। সেখান থেকে সূর্যাস্তটা মারাত্মক লাগে। আপনি যদি প্রথমেই নীলাচল চলে আসেন ও পরে মেঘলা ও স্বর্ণমন্দির যান তবে কিন্তু সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন না। তাই আগে অন্য দুটি স্পট শেষ করে এখানে আসবেন। আপনার ভাগ্য ভাল থাকলে এখানে পেয়ে যোতে পারেন মেঘ।
একটু কল্পনা করুনতো আপনি যেখানে দাড়িয়ে আছেন তার অনেক নিচে মেঘের সারি। ঠিক সেই ঘটনাটিই ওখানে ঘটতে পারে। শহরের ভেতর একটি রাজবাড়ি আছে। তবে নামেই রাজবাড়ি। একটি গেইট ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে আধুনিক বাড়ি ঘর। বান্দরবানের মানুষগুলো অনেক নরম প্রকৃতির। যার প্রমাণ মিলল একটি কনসার্টে গিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একটি কনসার্টের আয়োজন করেছিল। কিন্তু শ্রোতাদের মাঝে কোন ধরনের উত্তেজনা দেখা যায়নি। বরং আমরা নেচে ফাটিয়ে ফেলেছি আর তারা অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। শিল্পীর ভাল গানে মানুষগুলোর কোন মাতামাতি নেই আবার খারাপ গানে নেই কোন প্রতিবাদ।দৃশ্য নং-২: ২৯ তারিখ। টার্গেট শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও নীলগিরি। আগেই বলে নিচ্ছি বান্দবান ভ্রমণের সময় ৮-১০ জনের একটি টিম নিয়ে যেতে পারলে ভাল হয়। এত মজা যেমন বেশি হয় তেমনি খরচও পরে কম। আমরা কুমিল্লা থেকে যদিও ৩ জন গিয়েছিলাম, সেখানে গিয়ে নোয়াখালীর আরো ৪ জন ও চট্টগ্রামের ৩ জনের সাথে পরিচয় হয়। সবাই সমবয়সী ও বন্ধুভাবাপন্ন হওয়ায় আমাদের ভ্রমণের আনন্দ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়।সকালে নাস্তা সেরে আমরা জলপ্রাপাত, চিম্বুক ও নীলগিরির উদ্দেশ্যে রওয়না হই। বান্দরবান শহর থেকে এদের দূরত্ব যথাক্রমে ৮,২৬ ও ৪৪ কি.মি.। শহর থেকে জীপ ভাড়া নিলে সবচেয়ে ভাল হয়।
ভাড়া ২৩০০ থেকে ২৬০০ টাকা। নীলগিরিতে পার্কিং চার্জ ২০০ টাকা। আর বাসে যেতে চাইলে শহর থেকে রিক্সায় ৩ নাম্বার যেতে হবে। ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। সেখান থেকে ৯ টায় প্রথম বাস ছাড়ে। নীলগিরির ভাড়া মাথাপিছু ১৩০ টাকা। নীলগিরিতে থাকার মত কটেজ রয়েছে। কটেজ বুকিং দিতে হয় শহরের সেনাবানিী দপ্তর থেকে। ভাড়া একটু বেশি। সেখানে সাধারণত ভোর বেলায় মেঘের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আপনি দাড়িয়ে থাববেন। আপনার চারিদিকে থাকবে শুধু মেঘ আর মেঘ। মনে হবে আপনি সমুদ্রে দাড়িয়ে আছে। চিম্বুক পাহাড়ে দেখার মত কিছুই নেই। তবে মেঘ যদি পাওয় যায় তবে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নেই। শৈল প্রপাতের বিশাল ঝর্ণা আপনাকে বিমোহিত করবেই। অনবরত বারিধারা প্রতিনিয়ত ঝড়েই যাচ্ছে।
সেখানকার অধিবাসীরা এই পানিতে গোসল করে ও এখান থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে। আপনি চাইলে সেখানে অবগাহন করে নিজের দেহমন দুটোই প্রস্ফুটিত করতে পারেন। সেখানে আছে ককেটি দোকান। যখানে পাবেন স্থানীয়াবে তৈরি ঠামী, গামছা ও বিভিন্ন রকম শোপিস।দৃশ্য নং-৩: ৩০ তারিখ সকালে রওয়ানা দিলাম বগালেকের উদ্দেশ্যে। পুরো বান্দরবন ভ্রমণের মধ্যে বাগলেক ভ্রমণ হয়ে থাকবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মরণয় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৭০০ ফুট উপরে বগালেকের অবস্থান। পৃথিবীতে আর কোথাও এত উচুতে প্রাকৃতিক লেক আছে বলে আমার জানা নেই। বগালেকের আশ পাশে ছোট-বড় কূপ থাকলেও কোনটিতে পানি নেই। তাই একে ঘিরে রয়েছে অনেক কৌতুহল। একে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অনেক কল্পকাহিনীও আছে। বহু আগে এখানে ৩০ পরিবার বম জাতি বাত করতো। তারা সাধারণত সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি খেতো। একবার এক বিশাল সাপ ঢুকে সব গরু ছাগল খাওয়া শুরু করল। তাই বমরা সবাই সেই সাপটি ধরে টানতে থাকে। তবে এর বিশালতা ছিল এতই যে যতই টানে ততই আসতে থাকে। মাথা আর পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে তারা সাপটিকে দুই টুকরা করে ফেলে। লেজের অংশটি সবাই মিলে রান্না করে খেয়ে ফেলে। কিন্তু এক বুড়ি সন্দেহ হওয়ায় সাপটির মাংস খায়নি। সে রাতে সপ্নে এই রকম একটি নির্দেশনা পেল যে, তুই এই এলাকা ছেড়ে চলে যা না হলে তুই ধ্বংস হয়ে যাবি। বুড়ি এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আর বমদের ৩০টি পরিবার নিয়ে পাহাড় দেবে যায়। আর সেখানে সৃষ্টি হয় একটি লেক। যা আজ বগালেক নামে পরিচিত। ঘটনাটি নাকি বেঁচে যাওয়া সেই বুড়ি বর্ণনা করেছে। এখনো নাকি অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার গভীর রাতে লেক থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। লেকটি সঠিক গভীরতা আজ অবধি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ভূতত্ত্ববিদদের মতে এটি একটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। তবে এখানে এটি অবাক ঘটনা ঘটে, সেটি হলো, লেকের পানি এ্যকুরিয়ামের মত স্বচ্ছ হলেও প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায়। যা নিয়েও বিভিন্ন কল্পকাহিনী রয়েছে। যাই হোক এবর শোনা যাক আমাদের বগালেক ভ্রমণের কাহিনী। ৩০ তারিখ সকালে আমরা ১০ জন রওয়ানা দিলাম। শহর থেকে প্রথম যেতে হবে রুমা বাস স্ট্যান্ড। মাথাপিছু ১০-১৫ টাকা রিক্সা ভাড়া। ৮টা ৩০ মিনিটে প্রথম বাস। প্রথম বাসের পর আবার দুপুরে আরেকটি বাস। তাই সকালের বাসটিই ধরতে হবে। বাসের ভাড়া মাথাপিছু ৭০ টাকা। যে রাস্তায় চিম্বুক ও নীলগিরি গিয়েছিলাম সেই রাস্তাধরে কিছুদূর যাওয়ার পর কেরাণীর হাটে গিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে নীলগিরি আরেকটি রাস্তা গেছে রুমা উপজেলার দিকে। বাস থেকে নেমে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে রুমা উপজেলায় যেতে হয়। প্রথম বাসটি গিয়ে পৌছলই ট্রলার ছাড়ে। ট্রলার ভাড়া মাথাপিছু ৩০ টাকা। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে আকাবাকা সাঙ্গু নদী।
সে নদী ধরে ট্রলার দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাই অন্যরকম। ট্রলার গিয়ে থামল রুমা বাজারে। রুমা বাজারটি দেখেতো আমি অবাক। এত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এত জমজমাট বাজার। দেখতে গ্রামের বড় বাজারগুলোর মত। বাজারে গ্রামীণ ও টেলিটক মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে। রয়েছে বিদ্যুৎ ও। থাকার জন্য মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভাড়া মাথাপিছু ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মোটামুটি মানের খাবার হোটেলও রয়েছে। রুমা থেকে বগালেকের দূরত্ব প্রায় ১৭ কি.মি.। বগালেকে যেহেতু থাকার ব্যবস্থা রয়েছে তাই আমরা এখানে রইলাম না। দুপুরের খাবার শেষ করে বগালেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। তবে এখান থেকে আপনাকে গাইড নিয়ে যেতে হবে বাধ্যতামূলক। স্থানীয় প্রশাসন গাইড ছাড়া আপনাকে সেখানে যেতে দেবে না। নিজেদের নাম-পরিচয়, অভিভাকদের ফোন নং প্রশাসনের নিকট জমা দিয়ে এখান থেকে রওয়ানা দিতে হয়। যাতে রাস্তায় কোন রকম বিপদাপদ ঘটলে অভিভাবকদের নিকট খবর দেয়া যায়। গাইড কাজল ভাইকে নিয়ে আমরা চললাম বগালেকের উদ্দেশ্যে। প্রতিদিনের জন্য গাইডকে দিতে হবে ৪০০ টাকা করে। আমরা বগালেকে একদিন গিয়ে পরের দিন ফিরে এসেছিলাম। তাই গাইডকে ৮০০ টাকা দিয়েছি। আর তার থাকা খাওয়া, যাতায়াত বাবদ আরো ৪০০ টাকা খরচ। রুমা থেকে জীপে করে প্রথমে ১১ কি.মি. দূরে শৈরাতং পাড়ায় যেতে হবে। বাকী ৬ কি.মি. পায়ে হেটে। রিজার্ভ জীপ ভাড়া ১৫০০ টাকা। লোকালে গেলে প্রতিজন ৭০ টাকা। তবে ২০ জন না হলে গাড়ী ছাড়ে না। এখানকার রাস্তায় ইট বিছানো। তবে কোথাও প্রচন্ড খাড়া আবার কোথাও প্রচন্ড ঢালু রাস্তা। পাহাড়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলছে। চোখ খুললে পিলে চমকে উঠে। মোটামুটি রোলার কোষ্টার চড়ার আরেকটি অভিজ্ঞতা হলো ওখানে। গাড়ি চলছে প্রচন্ড গতিতে। হঠাৎ মেঘের গুড়গুড় শব্দ। যেহেতু জীপে কোন ছাদ থাকে না সেহেতু বৃষ্টি আসলে ভেজা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই আমার পরামর্শ হলো ওখানে যাওয়ার সময় একটি ছাতা, টর্চলাইট, হাটার জন্য নরম স্যান্ডেল বা কেডস ও পর্যপ্ত খাওয়ার পানি নেয়া উচিৎ। আর ব্যগ যত হালকা হবে ততই আরাম পাবেন। শুরু হলে বৃষ্টি। এক উপজাতির কাছে অনেকগুলো পলিথিন ছিল। সে আমাদের সবাইকে একটি করে পলিথিন দিল। এমন সময় গাড়ী নষ্ট। ড্রাইভার জানালো বাকী রাস্তা পায়ে হেটে যেতে হবে। শৈরাতং পাড়া এখনো আরো ১ কি.মি. বাকী। শুরু হল প্রচন্ড বৃষ্টি। চারিদিকে কোন বাড়িঘর নেই। শুধু পাহাড় আর পাহাড়। ফিরে যাবারও কোন উপায় নেই। শুরু হল বজ্রপাত। মেঘগুলো মাথার অনেক কাছে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। তাই আলো এবং শব্দ দুটোই অস্বাভাবাবিক বেশি। মেঘের গুড়–ম গুড়–ম শব্দে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হলো আর বুঝি রক্ষা নেই।
মনে পড়তে লাগল কাছের মানুষগুলো প্রিয় চেহারাগুলো। তারা হয়তো জানবেওনা আমরা কোথায় মরে পড়ে আছি। মোবাইল বের করে দেখি গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্ক আছে। সবচেয়ে কাছে দু’একজনকে ফোন দিয়ে শেষ বিদায় নিয়ে নিলাম। তারা আল্লার কাছে প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে হাটতে থাকলাম। এদিকে পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বৃষ্টিতেও ঘাম বেয়ে বেয়ে পড়ছে। শৈরাতং পাড়ায় কয়েকটি দোকান পেলাম। ভেতরে বসার মত জায়গা আছে। দোকানগুলোতে রুটি, কলা, বিস্কুট, পানি ইত্যাদি পাওয়া যায়। প্রাণ ফিরে পেলাম। এখানকার লোকগুলো বাংলা বোঝেনা। গাইড দোভাষীর ভূমিকা পালন করল। এখানে পরিচয় হল জন এর সাথে। তার বাড়ি বগালেক। সেও বগালেক যাবে। সে বাংলা বোঝে। তাকে পেয়ে আমরাও খুশি হলাম। ঢাকাতে ও রিক্সা চালায়। কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে হাটা শুরু করলাম। আমরা ৬ জন হাটতে থাকলাম। গাইডসহ বাকি ৫ জন এখনো রেষ্ট নিচ্ছে।
গাছপালা ও পাহাড়ের কারণে অনেকটা আলো আধারি পরিবেশ। এবার আমরা ৬ জন দাড়িয়ে বাকি ৫ জনের জন্য অপেক্ষা করছি আর তাদেরকে টারজানের মত শব্দ করে ডাকছি। কিছুক্ষণপর বিপরীত দিক থেকে টারজানের শব্দ এলো। বুঝলাম তারাও আমাদের মত দুষ্টামী করে সাড়া দিচ্ছে। দাড়িয়ে রইলাম। একটুপর যা দেখলাম তা আর বর্ণনা করার মত নয়। ৩ জন পাহাড়ী আমাদের সামনে এসে হাজির। বুঝলাম টারজানের শব্দ তারাই করেছে। আমাদের দেখে তারা তাদের কোমড়ের পিছনে থাকা ধারালো দা বের করল। কলিজাতে কারোই আর পানি রইলনা। যে দা, গলা কাটার জন্য দুই কোপ লাগবে না। পুরো বান্দরবানের পাহাড়ীদের হাতে একই ধরনের বিশেষ দা দেখা যায়। পাহাড়ীরা আমাদের কিছুই করলনা। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের বাড়ি কি এখানে। তারাও তাদের ভাষা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল এখানেই তাদের বাড়ি। জন ও গাইডসহ মোট ১২ জন হাটতে থাকলাম পাহাড়ের কোল ঘেষে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। পাহাড়ের সাথে লেগে আছে মেঘ। দৃশ্যটি ছিল অসাধারন। উচু নিচু দিয়ে হাটতে অনেক কষ্ট। হাতের ব্যাগটির ওজন ছিল ৫ কেজি। ৫ কি.মি. হাটার পর মনে হলো ওজন ২০ কেজি। সবাই হাপিয়ে উঠেছে। এদিকে সূর্য আর দেখা যাচ্ছে না। চারিদিক অন্ধকার। আরো ১ ঘন্টার রাস্তা বাকি। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে হাটতে থাকলাম। ভয় আবার দানা বেধে উঠছে। জন আর গাইডকে একটু পরপর প্রশ্ন করতে থাকলাম আর কতদূর আর কতদূর। সেই ১ ঘন্টা আগে থেকেই তাদের একই উত্তর আর আধা ঘন্টা, আর আধা ঘন্টা। চারিদিক পুরোপুরি অন্ধকার। জন একটি চূড়া দেখিলে বলল ওখানেই বগালেক। আমরা ওখানেই যাব। স্বস্তি পেলাম। কিন্তু পাহাড় দেখতে ছোট মনে হলেও উঠতে গেলে বোঝা যায় কত ধানে কত চাল। খাড়া পাহাড়ে উঠতে থাকলাম। ২০ মিনিট সোজা উপরের দিক হাটার পর আর পারছিনা। ঘামে গা পুরোপুরি ভিজে গেছে। শীতল মেঘ গায়ে এসে দোলা দিচ্ছে। কিন্তু গরমে গা ফেটে যাচ্ছে। মোবাইলের টর্চ ছিল বলে রক্ষা। না হলে পরিস্থিতি কি ভয়াবহ হতো কল্পনা করা যায় না। ইতোমধ্যে কয়েক জনের পায়ে জোক কামড়ে ধরে আছে। তারা জোক টেনে টেনে ছিড়ে ফেলছে। আমার সামনে দিয়ে একটি সাপ হেটে যাচ্ছে। আমি পা দিয়ে পারা দেব ঠিক এমন সময় আমার পেছনে থাকা রিয়াজ গেঞ্জী ধরে টান দিয়ে আমাকে থামিয়ে দেয়। কিন্তু সাপ দেখার পর আমার অনুভূতি তেমন ছিলনা। কারণ জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়েছি সেই কখন। আর পারছিনা, বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে আবার হাটা। প্রতিটি পদক্ষেপ মনে হচ্ছিল এক একটি হাই জাম্প। জন আর গাইডকে আবার সেই একই প্রশ্ন, আর কতদূর আর কতদূর। তাদের সেই একই জবাব, আর আধা ঘন্টা, আর আধা ঘন্টা।অবশেষে চূড়ায় এসে পৌছলাম। উঠেই সবাই চিৎ পটাং হয়ে মাটিতে শুয়ে বসে পড়ল। জন আমাদের পাশে নির্দেশ করে দেখাল, এই হচ্ছে বগালেক। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মোবাইলের ঝাপসা আলোর সাথে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বগালেকের একটি অবয়ব তৈরি করলাম। ভয় ও কম পাচ্ছি না। এত কাহিনী এই লেকের। সামনে থেকে টর্চের আলো। সেনাবাহিনী ডাকছে। এখানে তাদের ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পে গেলাম। আর্মিদের একজন জানালেন আরো আগে এখানে আসা উচিত ছিল। এত সন্ধ্যা করা ঠিক হয়নি। তারা কিছু পরামর্শ দিয়ে দিল। আমরা যেন দল ছাড়া এককভাবে কোথাও না যাই ইত্যাদি ইত্যাদি। একটু দূরে বিদ্যুতের আলো। সৌর বিদ্যুৎ। এখানে বমরা বাস করে। আমাদেরকে তাদের বাড়িতেই থাকতে হবে। গিয়ে দেখলাম সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে একটি ঘরে ১৫-২০ জন সিডিতে সিন্দাবাদ দেখছে। অনুভূতুটাই অন্যরকম। এমনিতেই ভূতুরে পরিবেশ। তার উপরে সিন্দাবাদ। একজন মহিলা এসে আমাদের দোতলায় নিয়ে গেলেন। কাঠের তৈরি দোতলা ঘর। মহিলাটি বাংলা বলতে পারেন। তিনি আমাদেরকে লেক থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললেন। রাত ৮ টা। চারদিকে অনেক ঠান্ডা পড়েছে। সাধারণ ঠান্ডার সময় পুকুরের পানি আরো ঠান্ডা ও টিউবওয়েলের পানি গরম থাকে। কিন্তু ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত। লেকের পানি অনেক গরম ছিল। এত ঘটনা শোনার পর অন্ধকারে গোসল করতে ভয় লাগছিল। তাছাড়া সাবারই মনে হচ্ছিল পানি যেন সবাইকে লেকের মাঝখানের দিকে টানে। রাতে মহিলাটি তার গাছের পাকা পেপে খাওয়ালেন। কাঠের তৈরি দোতলা এই কটেজটির মালিক দিদিরাই। নিচ তলায় দিদিরা থাকেন আর গেষ্ট আসলে দোতলায় থাকতে দেন। দিদি ও তার পরিবারের লোকদের ব্যবহার ও আপ্যায়নে একবারও মনে হয়নি আমরা কোন কটেজে আছি। মনে হচ্ছিল আমরা দিদির বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। এবার দিদির সম্পর্কে কিছু জানা যাক।
দিদির নাম হচ্ছে সিয়াম। আগে অন্য পাহাড়ে থাকতেন। এখন এখানে এসে বাড়ি করেছেন। তিনি কাপ্তাই থেকে ডিগ্রী কমপ্লিট করেছেন। এখন স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তার স্বামী ব্যাংকে চাকরি করেন।রাতে খেতে বসলাম। জুম চালের ভাত, গাছের মিষ্টি কুমড়ার তরকারি, ডিম ভাজি ও ডাল দিয়ে পেট পুড়ে খেলাম। তারা আমাদের মতই মশলা ব্যবহার করেন। তাই খেতে কোন সমস্যা হয়নি। প্রতি বেলা খাবার বিল মাত্র ৫০ টাকা। আর কটেজের ভাড়া প্রতি রাত মাথাপিছু ১০০ টাকা। খাওয়ার ফাকে দিদির সাথে আলাপ করছিলাম। তার বিনয়সুলভ কথা আমাদের বিমোহিত করল। তার কথাগুলো ছিল অনেকটা এরকম, পাহাড়িদের দেখতে এসেছেন? আমরাতো জংলী। জংলীদের কেউ দেখতে আসে? আমরা গরীব মানুষ ভাই। কি আর খাওয়াবো। যা আছে তাই দিলাম। খেতে লজ্জা পাবেন না কিন্তু। আমি আগে মানুষের বাড়িতে গিয়ে খেতে লজ্জা পেতাম, এখন আর পাইনা। তার এ ধরনের কথা শুনে মনে হচ্ছিল আমরা যেন এই পরিবারের ঘনিষ্ট আত্মীয়। তাদের সাথে এমনভাবে মিশে গিয়েছিলাম যে এখনো তাদের অনেক মিস করি। রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। তবে বাচ্চার কান্নার আওয়াজের কথা মনে হয়ে ভয় ভয় লাগছিল। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম পুরোপুরি লেকটির সৌন্দর্য অবলোকন করলাম।
মেঘের কারণে মনে হয় সমূদ্রের মাঝখানে একটি মিঠাপানির লেক। লেকের পাড় ধরে হাটছি আর এর সৌন্দর্য উপভোগ করছি। মাঝে মাঝে পাহাড়িদের সাথে দেখা হয। তারা একেক জন একেক কাজে ব্যস্ত। একটু পর দেখা গেল ২ জন মেয়ে সহ ৬-৭ জনের একটি দল কাজের ফাকে অবসর নিচ্ছে। তাদের সাথে অনেক মজা করলাম। তারাও অনেক মিশুক প্রকৃতির।দৃশ্য- ৪: এবার ফেরার পালা। ফিরে আসতে মন চাইছে না। এদিকে আমাদের ৪ জন সিদ্ধান্ত নিল তারা কেওক্রাডং যাবে। এখান থেকে কেওক্রাডং প্রায় ৬ কি.মি.। কিন্তু আমাদের সাহসে কুলালোনা। ৪ জনকে রেখে আমরা ৬ জন চলে এলাম। দিদির ফোন নাম্বার নিলাম। মজার ব্যাপারটি হলো আমাদের সবার মধ্যে দিদি শুধু আমার নামটিই মনে রাখতে পেরেছিলেন। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা হাটতে থাকলাম। দেহ চলে আসছে বাড়ির দিকে, কিন্তু মন পড়ে রয়েছে বগালেকে। সকাল ৯ টায় রওয়ানা দিলাম। চট্টগ্রাম পৌছতে রাত ৯ টা। ১১ টায় ট্রেন ছাড়বে। এদিকে ট্রেনে ঘটে গেল কয়েকটি মজার ঘটনা যা বর্ণনা না করলেই নয়। বন্ধ ট্রেনে তিনজন বসে আছি। হঠাৎ চোখ গেল ট্রেনের চেইনের দিকে। যেটা টানলে ট্রেন থামে। আমি এর আগে পুরনো ট্রেনগুলোতে বন্ধ থাকা অবস্থায় চেইন টেনে দেখেছি। কিছুই হয়না। এটা ছিল নতুন ট্রেন। ভাবলাম ট্রেন যেহেতু এখন বন্ধ আছে টান দিলে আর কি হবে। এখানে চেইন টানলে বড়জোর ড্রাইভারের কাছে কোন সংকেত যাবে। দুই বন্ধুকে দেখানোর জন্য দিলাম টান। শুরু হয়ে গেল বগির ভেতরে প্রচন্ড শব্দ। অনেকটা চাকা পাংচারের মত শব্দ। তবে মাত্রা ছিল অনেক তীব্র। পুরো বগিতে আতংক বিরাজ করছে। কেউ কেউ উঠে দাড়িয়ে গেছে। আমার বন্ধুরাও বোকার মত তাকিয়ে আছে। আমি ভদ্র লোকের মত ট্রেন থেকে চম্পট দিলাম। ২-৩ মিনিট পর বাইরে দিয়ে এসে দেখি শব্দ থামেনি। ভয় পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর দূর থেকে ভেতরে থাকা বন্ধুকে ফোন দিলাম। সে জানালো শব্দ থেমেছে তবে কয়েকজন মুরুব্বী আমার এই অকর্মের জন্য তাদেরকে বকাবাদ্য করছে। ট্রেন ছাড়লো। আমি বগিতে এসে বসলাম। কিন্তু সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যে নিজেকে তখন চিড়িয়া মনে হচ্ছিল। ট্রেন চলছে ঝিক্-ঝিক্, ঝিক্-ঝিক্। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাসেল একটি চিপস কিনে আনলো। চিপসের প্যাকেট এতই শক্ত ছিল যে এটি ছিড়তে তারা দুজন ব্যর্থ হলো। আমি তাদের হাত থেকে প্যাকেটটি এমনভাবে নিলাম যে এটি ছেড়া কোন ব্যাপারই না। কিন্তু এটি এতই শক্ত ছিল যে দাত দিয়েও ছিড়তে পারলাম না। পরে ট্রেনের মেঝেতে রেখে পা দিয়ে দিলাম এক ঘা। কিছুই হলো না। আরেকটু জোরে আবার দিলাম। কিছু হলো না। এবার সর্ব শক্তি দিয়ে তৃতীয় ঘা দিতেই বিকট শব্দে প্যাকেট ছিড়ে গেল। মনে হলো গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়েছে। যাত্রীরা সবাই হচকিত ভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠল। সবার চোখে আতংকের ছাপ। আবার আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে চিপসের প্যকেটে চিপস আর নেই। সব গুড়ো হয়ে গেছে। আমি ভয়ে দ্রুত আরেক বগিতে এসে ফ্লোরে বসে রইলাম। এদিকে এক বৃদ্ধ বগিতে শুধু হাটাহাটি করছে আর আমাকে জিজ্ঞাসা করে টিকেট আছে কিনা। বারবার একই জবাব দিতে দিতে আমি বিরক্ত। মেঝেতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ আমার মাথায় কি যেন পড়ল। দেখি বৃদ্ধ লোকটি আমার মাথার উপর দিয়ে শপিং ব্যাগে করে শুটকি নিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাগের তলা ছিড়ে সব আমার মাথায় পড়েছে। ট্রেনের টয়লেটে গেলাম। বের হওয়ার সময় ছিপি আর খুলতে পারছিনা। অনেক জোরাজোরি করছি। রাসেলকে ফোন দিলাম। সে ট্রেনের শব্দের কারণে কিছুই বুঝতে পারছেনা। ফোন রেখে আমি দরজায় আঘাত করছি। মনে নানা রকম ভয় উকি দিচ্ছে। যদি ট্রেন এক্সিডেন্ট করে, সবাই বাইরে বের হয়ে যাবে। আমিই শুধু আটকে যাব। অথবা যদি কুমিল্লা স্টেশন পার হওয়ার আগে আমি বের হতে না পারি তবে বাথরুমে করে আমাকে ঢাকা চলে যেতে হবে। আমার অবস্থা ছুটির ঘন্টার ফটিকের মতও হতে পারে। অবশেষে জোর প্রচেষ্টায় বের হয়ে আসলাম। অবশেষে অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরলাম। যত দিন বেঁচে থাকব এই ভ্রমণটি আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
(লিখাটি এর আগে বিভিন্ন ব্লগ এব্ং পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভ্রমণ সাল ২০১০। এখন খরচ কম-বেশি হতে পারে। শীতকালে বান্দরবান ভ্রমণে এটি গাইড লাইন হতে পারে। তাই নতুন করে আবার ফেসবুকে প্রকাশ করলাম)