ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের
দ্য গার্ডিয়ান
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:০৪
কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পর এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন খুব শিগগিরই এ শুল্ক আরোপ করা হবে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বাণিজ্য শুল্কের পরিধি আরও বিস্তৃত করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি কোনো সময় বলবো না, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক খুব শিগগিরই কার্যকর হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছে। তারা আমাদের গাড়ি নেয় না, কৃষি পণ্য নেয় না। তারা প্রায় কিছুই নেয় না। কিন্তু আমরা তাদের কাছ থেকে সবকিছুই নেই।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের প্রতি নরম অবস্থান গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমারের সাথে তাঁর সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যুক্তরাজ্যের ওপর শুল্ক এখনও কার্যকর হতে পারে, পরেও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার খুব ভালো আচরণ করেছেন, আমাদের বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। আমাদের অনেকবার ফোন কলে আলোচনা হয়েছে। আমরা খুব ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ ও চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর করার কথা জানান তিনি। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পণ্যে শুল্ক আরোপ জোরদার করার কথা জানিয়েছে কানাডা ও মেক্সিকো।
ইইউর প্রতি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার আগে রোববার ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, কোনো বাণিজ্য অংশীদার অন্যায়ভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ইইউ পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করলে তার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো। এর আগেরবার ট্রাম্পের পূর্ববর্তী শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর ইইউ হার্লে-ডেভিডসন মোটরবাইক, বোরবন ও রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যগুলিতে তৈরিকৃত মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে।
ইউরোপীয় কমিশনের ওই মুখপাত্র আরও বলেন, তারা কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের ব্যাপারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, শুল্ক অপ্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে। যা সকল পক্ষের জন্য ক্ষতিকর।
এদিকে যেসব পণ্যে মঙ্গলবার থেকে ২৫ শতাংশ ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপ কার্যকর করা হবে কানাডার অর্থ বিভাগ কানাডায় আমদানি করা মার্কিন পণ্যের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রথম পর্যায়ে যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে তার পরিমাণ হবে ৩০ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে তামাক পণ্য, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, আগ্নেয়াস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম।
আর দ্বিতীয় পর্বের আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে যাত্রীবাহী যানবাহন, ট্রাক, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, ফল ও সবজি, বিভিন্ন ধরনের মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য এবং আরও বেশ কিছু পণ্য। এসব পণ্য আদানিতে অতিরিক্ত ১২৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় হবে।
মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি ক্লডিয়া শেইনবাউম বলেছেন, তার সরকার সোমবার মার্কিন পণ্যের ওপর নির্দেশিত প্রতিশোধমূলক শুল্ক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবে। রোববার এক বিবৃতিতে শেইনবাউম বলেছেন, তার সরকারের ‘পরিকল্পনা বি’ সম্পর্কে বিস্তারিত ঘোষণা করবেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, মেক্সিকো সংঘাত চায় না। তাই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে নয়, বরং আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি