গাজা খালি করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান মিসর-জর্ডান ও হামাসের
আনাদোলু এজেন্সি
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫২
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিশরে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে দেশ দু’টি। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও ট্রাম্পের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার মুখে হাজারও মানুষের প্রাণহানি ও চরম মানবিক সংকটে থাকা গাজার জন্য এটা সাময়িক নাকি স্থায়ী সমাধান, ট্রাম্পের কাছে এটা জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হতে পারে।’
এর আগে গত শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, গাজা উপত্যকা ‘পরিষ্কার করার সময় এসেছে’ এবং তিনি জর্ডান ও মিশরের নেতাদের ফিলিস্তিনিদের অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
জর্ডান এরই মধ্যে লাখো ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। মিসরেও হাজারো ফিলিস্তিনি তাঁবুতে বসবাস করেন। মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য আরব দেশ গাজার ফিলিস্তিনিদের তাদের দেশে সরিয়ে নেওয়ার ট্রাম্পের চিন্তাভাবনা খারিজ করে দিয়েছে। গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে থাকতে চাইছেন।
হামাসের একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলে আসছেন। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বলেন, ফিলিস্তিনিরা এমন কোনো প্রস্তাব কিংবা সমাধান মেনে নেবে না। এমনকি যদি পুনর্গঠনের মতো ভালো উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়, যেমনটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তবুও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা আমাদের নির্ধারিত সীমারেখার (রেড লাইন) সরাসরি লঙ্ঘন।
এটি বলছে, আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, ফিলিস্তিনি জনগণ কখনোই তাদের ভূমি বা পবিত্র স্থান ত্যাগ করবে না। আমরা ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালের বিপর্যয়ের (নাকবা) পুনরাবৃত্তি হতে দেব না। আমাদের জনগণ দৃঢ়ভাবে টিকে থাকবে এবং নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে যাবে না।
হামাস বলছে, মার্কিন প্রশাসনকে এমন প্রস্তাব থেকে বিরত থাকতে হবে, যা ইসরায়েলের পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারবিরোধী। ফিলিস্তিনিরা সবচেয়ে বর্বর গণহত্যা এবং তাদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জানিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকেই এমনটি চলছে।
জর্ডানের তরফ থেকেও ট্রাম্পের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সাংবাদিকদের বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের যেকোনো স্থানচ্যুতির বিরুদ্ধে তার দেশের ‘দৃঢ় ও অটল’ অবস্থানে রয়েছে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই অবস্থান নিয়েছে। দেশটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে স্থানচ্যুতিকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে মিসর। সেটা স্বল্পমেয়াদে হোক, কিংবা দীর্ঘমেয়াদে।
ট্রাম্পের গাজা খালি করার প্রস্তাব জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকেও বিস্মিত করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটি অতি বাস্তবসম্মত নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, এ অঞ্চলের আরব দেশগুলো এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি