যুদ্ধবিরতিতে সম্মত মিয়ানমারে জান্তাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী: চীন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪১
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তথা জান্তাবাহিনী এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে গত শনিবার থেকে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছে, জানিয়েছে যে, চীনের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি হয়েছে, এবং এর লক্ষ্য হল দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান সংঘর্ষ থামানো।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সংঘাতের অবসান শুধু মিয়ানমারের জন্যই নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি চীন ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।”
তিনি আরও জানান, চীন এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনে আরও সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদান করবে।
এমএনডিএএ, যা একটি জাতিগত চীনা সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে সরানোর জন্য এই লড়াই চালিয়ে আসছে। এমএনডিএএ থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্সের একটি অংশ, যার মধ্যে অন্যান্য গোষ্ঠী হিসেবে রয়েছে তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ)। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে এই গোষ্ঠীটি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করে, যার ফলে তারা চীনের সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমারের জান্তা-বিরোধী বাহিনীগুলোর অগ্রগতি চীনকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এই বাহিনীগুলো শুধু সীমান্ত অঞ্চল দখল করেনি, বরং তারা মান্দালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা চীনের জন্য একটি বড় শঙ্কা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা চীনের বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। চীন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চায়, কারণ তাদের অনেক বড় বিনিয়োগ রয়েছে মিয়ানমারে এবং তারা এই অঞ্চলের শান্তি বজায় রাখতে আগ্রহী।
এদিকে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চীন মিয়ানমারের উত্তর সীমান্ত অঞ্চলে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল। তবে, সেই চুক্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এবং কয়েক মাসের মধ্যে সংঘর্ষ আবারও শুরু হয়।
চীন মনে করে, মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা তাদের আঞ্চলিক স্বার্থের জন্য অপরিহার্য। তাই চীন এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীন আশা করে, এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মিয়ানমারের উত্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলা সহিংসতা বন্ধ হবে এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ