এবার ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে কারা ফিরছেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৪৪ আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৫৪
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানকে ঘিরে ওয়াশিংটন ডিসিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে ট্রাম্প পরিবারের কেউ কেউ আগের মেয়াদের মতো এবারও অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা হিসেবে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখতে পারেন।
নতুন প্রশাসনে ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, ট্রাম্পের পাঁচজন সন্তান এবং অন্য স্বজনেরা কীভাবে ভূমিকা রাখবেন, সেটা নিয়ে জনমনে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। আসুন, একনজরে দেখে নিই—
মেলানিয়া ট্রাম্প: মেলানিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের পরিচয় ১৯৯৮ সালে, একটি পার্টিতে। এরপর প্রণয়। অবশেষে ২০০৫ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডির দায়িত্ব সামলেছেন মেলানিয়া। দ্বিতীয় মেয়াদেও তাঁর ভূমিকা একই হবে। এবার হোয়াইট হাউসকে নিজের মূল আবাস বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে মেলানিয়ার। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কিন্তু এমনটা দেখা যায়নি। শুরুর দিকে কয়েক মাস তিনি স্বামীর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বসবাস করেননি।
মেলানিয়ার এমন করার কারণটা ছিল, ১০ বছরের ছেলে ব্যারন ট্রাম্প। ওই সময় ব্যারন নিউইয়র্কে একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। ছেলের পড়াশোনার ক্ষতি হবে, এমনটা বিবেচনা করে তিনি নিউইয়র্কে থেকে গিয়েছিলেন। পরে স্বামীর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে আসেন মেলানিয়া।
পাকাপাকিভাবে হোয়াইট হাউসে চলে আসার পর মেলানিয়া পুরোদমে ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব সামলাতে শুরু করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ আয়োজন থেকে শুরু করে, অনলাইন বুলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান—নানা কাজে ভূমিকা রাখেন তিনি।
স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন আয়োজনে যোগ দিতেন মেলানিয়া। তবে সব সময় নিজের স্বাতন্ত্র বজায় রাখার চেষ্টা করতেন তিনি। অভিবাসী শিশুদের একটি আশ্রয়কেন্দ্র সফরে গিয়ে মেলানিয়া ‘আমি সত্যিই পরোয়া করি না, তুমি করো কি’ লেখা জ্যাকেট পরে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।
ইভাঙ্কা ট্রাম্প: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প। বাবার প্রথম মেয়াদে ইভাঙ্কা তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের বিদায়ের পর ইভাঙ্কা রাজনীতি থেকে দূরে চলে যান। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে হয়তো দূরেই থাকবেন ইভাঙ্কা।
এ বিষয়ে ইভাঙ্কা বলেছেন, আগের কাজে নতুন করে না ফেরার প্রধান কারণ, আমি এর মূল্য জানি। আমি আমার বাচ্চাদের এই মূল্য চোকাতে দিতে রাজি নই।
ইভাঙ্কার বয়স ৪৩ বছর। তিন সন্তানের মা তিনি। ট্রাম্পের শপথের আগে আগে ‘হিম অ্যান্ড হার শো’ শিরোনামের পডকাস্টে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ইভাঙ্কা।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার শুরু করেন, তখনো ইভাঙ্কা রাজনীতি ও জনসম্পৃক্ততা থেকে দূরে থাকার বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। তিনি ‘ডন জুনিয়র’ নামেও পরিচিত। বাবার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ প্রচারের অন্যতম রূপকার তিনি। ট্রাম্প জুনিয়র ‘ট্রিগারড’ শিরোনামের একটি পডকাস্ট চালান। প্রেসিডেন্ট বাবার সবচেয়ে উত্সাহী সমর্থকদের মধ্যে এই পডকাস্টের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে, জেডি ভ্যান্সকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প জুনিয়র প্রভাব রেখেছিলেন।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৪৭ বছর বয়সী ট্রাম্প জুনিয়র। জানা গেছে, তিনি এ দায়িত্বে থাকতে চান। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের কোনো দায়িত্ব তিনি নেবেন না।
ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপক কিম্বার্লি গুইলফোয়লির সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়রের বাগ্দান হয়েছিল। তবে তাঁরা বাগ্দান ভেঙে দিয়েছেন। নিজের প্রশাসনে কিম্বার্লিকে গ্রিসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প।
এরিক ট্রাম্প: ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় ছেলে এরিক ট্রাম্প। তাঁর বয়স ৪১ বছর। আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। বাবার প্রথম মেয়াদে এরিকও তাঁর বড় ভাইয়ের মতো ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন। ‘ডন জুনিয়রের’ মতো এরিকও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাবার অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক উপদেষ্টার ভূমিকায় ছিলেন। সব সময় বাবার পাশে পাশে থেকেছেন। সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্পের প্রচারে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। এখন দুটি দায়িত্ব সমানভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন এরিক।
এরিকের স্ত্রী লরা সংগীতজগতে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছেন। রাজনীতিতে তিনি নিজের নজির গড়তে পারেননি। গত বছর রিপাবলিকান দলের জাতীয় কমিটির কো-চেয়ারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন লরা। এরপর ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা বিবেচনা করেও সরে আসেন তিনি।
ব্যারন ট্রাম্প: ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়ার সংসারে একটিমাত্র সন্তান, ছেলে ব্যারন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের প্রথম মেয়াদে ছেলেকে সংবাদমাধ্যমের আলোর ঝলকানি থেকে আড়ালে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন মেলানিয়া। ব্যারনের বয়স এখন ১৮ বছর। নিজের রাজনৈতিক পথে হাঁটতে শুরু করেছেন তিনি।
ট্রাম্পের সবচেয়ে ছোট এই ছেলে এবারের নির্বাচনী প্রচারে আশ্চর্যজনকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। জেন-জি প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে বাবার অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেছেন ব্যারন। ছয় ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার ব্যারন এখন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
টিফানি ট্রাম্প: ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে টিফানি ট্রাম্পের বয়স ৩১ বছর। হোয়াইট হাউসে বাবার প্রথম মেয়াদে টিফানি পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে ছিলেন। বিভিন্ন আয়োজনে শুধু বাবার পাশে দেখা যেত টিফানিকে।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতক টিফানি। বাবার নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে কয়েকবার তাঁকে দেখা গেছে। তবে গত বছর রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনে টিফানিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিনটি নির্বাচনী লড়াইয়ে এবারই প্রথম দলীয় সম্মেলনে কথা বলেননি মেয়ে টিফানি।
ট্রাম্প ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসের একমাত্র সন্তান টিফানি। তিনি এখন রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরিকল্পনা করেছেন। টিফানি সন্তানসম্ভবা বলে নানা খবরে জানা যাচ্ছে।
ট্রাম্পের স্বজনেরা: জেরার্ড কুশনার হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা, ইভাঙ্কা ট্রাম্পের স্বামী। স্ত্রী ইভাঙ্কার মতো তিনিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা এবং আব্রাহাম চুক্তি সম্পাদনে জোরালো ভূমিকা ছিল কুশনারের।
তবে শ্বশুরের দ্বিতীয় মেয়াদে জেরার্ড কুশনারকে প্রশাসনে না–ও দেখা যেতে পারে। যদিও সিএনএন জানিয়েছে, নতুন প্রশাসনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পেতে পারেন কুশনার।
মেয়ে ইভাঙ্কার শ্বশুর ও জেরার্ড কুশনারের বাবা চার্লস কুশনারকে নতুন প্রশাসনের আমলে ফ্রান্সে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরেক মেয়ে টিফানির শ্বশুর লেবানিজ-আমেরিকান ব্যবসায়ী মাসাদ বোলোসকে আরব ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরএইচ