মার্কিন কর্মকর্তা
উত্তেজনাপূর্ণ ৯৬ ঘণ্টা আলোচনার পর গাজা চুক্তি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩২
কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় উত্তেজনপূর্ণ ৯৬ ঘণ্টার আলোচনা শেষে বহু প্রতিক্ষিত গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।
রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই সফলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে পৌঁছতে আলোচনায় উইটকফের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক। এ দায়িত্ব পালনে ৫ জানুয়ারি থেকে তিনি দোহায় অবস্থান করছিলেন। আর কর্মকর্তারা যাকে বলেছেন ‘খুব জটিল নিষ্পত্তি’ তা সম্পাদনে ম্যাকগার্ক নিবিড় ভূমিকা রেখেছেন।
এই চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়ার বিষয়ে জ্ঞাত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তার শেষ দিকে ট্রাম্পের মুহুর্মুহু সতর্কবাণীতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারি তার অভিষেকের আগে হামাস জিম্মি করে রাখা বন্দিদের মুক্তি না দিলে মধ্যপ্রাচ্যকে ‘কড়া মূল্য’ চুকাতে হবে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা কয়েক মাস ধরে থেমে থেমে চলছিল, কিন্তু নভেম্বরে ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর এ আলোচনা গতি পায়।
ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, শেষ ৯৬ ঘণ্টায় আলোচনা একটি উত্তপ্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
তাদের হাতে বন্দি জিম্মির সংখ্যা কতো এবং যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে তাদের মধ্যে কাকে কাকে মুক্তি দেওয়া হবে হামাস তা জানাতে অস্বীকার করার পর এটি আলোচনার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়।
ডিসেম্বরের শেষে এসে হামাস জিম্মিদের তালিকা দিতে রাজি হলে ফের আলোচনা গতিশীল হয় আর তা ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্ত করার চুক্তির দিকে এগিয়ে যায়।
মার্কিন টিমের নেতৃত্ব দেওয়া দোহায় অবস্থানরত ম্যাকগার্ক চুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে কাজ করার সময় উইটকফ তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল জিম্মিদের মুক্তির ক্রম আর তাদের বিনিময়ে ইসরায়েল কতোজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে তা নির্ধারণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ মানবিক সহায়তা। এই পর্যায়ে এসে আলোচনা অত্যন্ত স্নায়ুক্ষয়ি হয়ে ওঠে।
আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে ম্যাকগার্কের সঙ্গে উইটকফ যোগ দেওয়ার পর তাদের অংশীদারিত্ব ‘দারুণ কার্যকরী’ হয়ে ওঠে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তাদের দু’জনের সহায়তায় চুক্তির কিছু বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং সেটি একটি সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে যায়।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন উইটকফ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইসরায়েলে যান। চুক্তির বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, উইটকফ নেতানিয়াহুকে ‘চাপ দিয়ে’ চুক্তিতে সম্মত হতে রাজি করান আর তারপর ‘সবকিছু দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়’।
ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বুধবার দোহার স্থানীয় সময় ভোররাত ৩টা পর্যন্ত ম্যাকগার্ক এবং মিশরীয় ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনা স্থলের তৃতীয় তলায় ইসরায়েলি টিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আর ওই সময় হামাসের প্রতিনিধিরা নিচে অবস্থান করছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র এখন আশা করছে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি রোববার থেকেই কার্যকর হওয়া শুরু হবে, জানান তিনি। সূত্র: রয়টার্স।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি