ভয়াবহ দাবানল
১৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পুড়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে, লুটপাট ঠেকাতে কারফিউ জারি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৫১
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। টানা চারদিন ধরে জ্বলছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। এর ভয়াবহতা এতটাই যে, সেখানকার জনমনে ভীষণ আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ রবার্ট লুনা দাবানলের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, দেখে মনে হচ্ছে যেন এখানে পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো হয়েছে।
আগুনে এখন পর্যন্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এই পরিস্থিতির মধ্যে লুটপাটও চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। লুটপাট ঠেকাতে একটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।
গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনের সূত্রপাত হয়। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাঁচটি স্থানে দাবানল সক্রিয়ভাবে জ্বলছিল। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের পশ্চিম দিকে সান্তা মনিকা ও মালিবু এলাকার মাঝে এবং পূর্ব দিকে পাসাডেনা এলাকার কাছের দাবানল দুটি সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের কারণ হয়েছে। এই দুই দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৩৪ হাজার একর জায়গার গাছপালা, ঘরবাড়িসহ সবকিছু।
শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পানির তীব্র সংকটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। পুরো ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।
এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এই সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি। লুনা বলেন, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া এখনো নিরাপদ নয়। তবে মৃত্যুর সংখ্যা ‘অবশ্যই বাড়বে’।
অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা ধারণা করছেন, প্যালিসেডসে এরই মধ্যে ৫ হাজার ৩০০-এর বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ইটনে আনুমানিক ৪ থেকে ৫ হাজার স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদনে জানা যায়, দাবানলের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে ২ লাখেরও বেশি বাসিন্দা। এ অবস্থায় পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। লুটের অভিযোগে ২০ জনকে গ্রেপ্তারের পর কিছু এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে ভয়াবহতম এই আগুনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল বলে গত বুধবার জানিয়েছিল আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার। এক দিন পরই তা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। ওয়েবসাইটটির বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, আগুনে এখন পর্যন্ত ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে শহরের হলিউড হিল এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দাবানলের ভয়ে সেখান থেকে সরে যাওয়া অনেক মানুষ নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন। অভিজাত প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকায় পুড়ে ছাই হওয়া ঘরবাড়িগুলোতেও লোকজনকে ফিরতে দেখা গেছে। এমনই একজন বিলাল তুখি। তিনি বলেন, আগুনে পোড়া এলাকাটি তাঁকে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
দাবানল ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অন্যতম কারণ ঝোড়ো বাতাস। আগুনের শুরুর দিকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতি উঠছিল। তবে বৃহস্পতিবার তা কমে এসেছে। আজ শুক্রবার তা আরও কমে আসার কথা। তবে বাতাস পুরোপুরি না থামায় এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় শুক্রবার পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস ও ক্যালিফোর্নিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন প্রান্তে আগুন নেভাতে দিন-রাত কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে উড়োজাহাজ থেকে পানি ফেলতে দেখা গেছে। তবে তেমন অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। গতকাল সকালে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুনের মাত্র ৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে তারা।
দাবানলের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। সেখানে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত স্কুল–কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া মানুষের দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে বাড়িঘরে লুটপাটও চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সান্তা মনিকা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি