নাটকীয়তা শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা স্থগিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:২৬
স্বল্পকালীন সামরিক আইন জারির ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেও পারেনি দেশটির পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য শুক্রবার তার বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেছে পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারে বাধা দেয় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের (পিএসএস) কর্মীরা। খবর বিবিসি’র।
এ দিন তদন্তকারীরা বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা দলের সঙ্গে টানা ৬ ঘণ্টার নানা নাটকীয়তার পর ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা স্থগিত করেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
এদিকে তাকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে শুক্রবার তার বাসভবনের বাইরে শত শত সমর্থক বিক্ষোভ শুরু করে।
এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এই অঞ্চলের অন্যতম প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ ডিসেম্বর সবাইকে হতবাক করে দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন। এই সিদ্ধান্তের জন্য অভিশংসিত করে তাকে ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদন করে দেশটির এক আদালত।
বিবিসি বলছে, শুক্রবার ভোর থেকে সিউলে ইউনের বাসভবনের বাইরে রাস্তায় কয়েক ডজন পুলিশ ভ্যান সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা ও সিআইও সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। ২০ সদস্যের একটি দল নিয়ে অভিযান শুরু হলেও দ্রুতই তা বেড়ে ১৫০ জনে দাঁড়ায়।
এ বিষয়ে সিউলের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক কর্মকর্তা বলেন, দলের প্রায় অর্ধেক সদস্য ভেতরে ঢুকতে পারলেও ইউনের নিরাপত্তা দল এবং সিউল শহর রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি সামরিক ইউনিট তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে।
এক পর্যায়ে নিরাপত্তা দলটি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে সিআইওর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে তদন্তকারীরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা থেকে সরে আসেন এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন ত্যাগ করেন।
উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বে থাকা দ্য করাপশন ইনভেস্টিগেশন অফিস ফর দ্য হাই-র্যাঙ্কিং অফিশিয়ালস (সিআইও) বলেছেন, পরবর্তী পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইউনের সমর্থকরা কয়েকদিন ধরে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে ক্যাম্প করে অবস্থান করছেন। তাকে গ্রেপ্তারের স্থগিতাদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গান ও নাচে উল্লাস করেছেন সমর্থকরা। ‘আমরা জিতেছি’ বলে তারা স্লোগান দিতে থাকেন।
ওয়ারেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তদন্তকারীরা ইউনকে গ্রেপ্তার করতে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। তবে তারা নতুন ওয়ারেন্টের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং তাকে আবারও আটক করার চেষ্টা করতে পারেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি লি দায়ে হুয়ানসহ তদন্তকারী কর্মীরা কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে শুক্রবার অভিশংসিত প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। ইওলের বাসভবনের ভেতরে থাকা সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের প্রতিহত করে। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তাকর্মীরা এর আগেও ইওলের বাসভবনে পুলিশের প্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করেছেন। প্রেসিডেন্টের বাসভবন চত্বরে পুলিশের বেশ কয়েকটি বাস, কয়েক শ পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিউলের আদালত ইওলের বাসভবনে তল্লাশি চালানোর জন্য পরোয়ানা জারি করেছেন।
এর আগে গত সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর কয়েকদিনের মধ্যে তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অভিশংসিত ও পরে বরখাস্ত করা হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদন করেছে বলে দেশটির তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করার সিদ্ধান্তের কারণে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে অভিশংসন এবং ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বে থাকা দ্য করাপশন ইনভেস্টিগেশন অফিস ফর দ্য হাই-র্যাঙ্কিং অফিশিয়ালস (সিআইও) নিশ্চিত করেছে, সামরিক আইন জারিকে কেন্দ্র করে তদন্তকারীদের অনুরোধে প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে সিউল ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমান কোনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো।
বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম