মনমোহন সিংয়ের মৃত্যু: বিশ্ব নেতাদের শ্রদ্ধা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৩০
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতারা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক বার্তায় তাদের সঙ্গে মনমোহন সিংয়ের উষ্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছেন। খরব এনডিটিভি।
কংগ্রেসের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শোক বার্তায় মনমোহনকে সিং একজন নম্র ব্যক্তি, দূরদর্শী নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ভারতের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য তার অটল প্রতিশ্রুতির জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ভারতের অর্থনৈতিক পরিবর্তনে তার অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্ব শুধু ভারতের ভবিষ্যতই গঠন করেনি বরং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার বন্ধনকে শক্তিশালী করতেও অবদান রেখেছে।
এ সময় প্রয়াত নেতা মনমোহনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি এবং দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতার অগ্রগতিতে ভূমিকার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে তার চিন্তাধারার সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার গড়ে তোলার জন্য এবং ড. মনমোহন সিংকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তার এক্সের পোস্টে লিখেছেন, ভারতে তার সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে হারিয়েছেন তিনি। মনমোহনকে আফগানিস্তানের জনগণের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং বন্ধু বলে অভিহিত করেছেন হামিদ কারজাই।
ভারতের সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তিনি। এছাড়া ভারতের জনগণের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের সাবেক ওই প্রেসিডেন্ট।
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ তার এক্স বার্তায় লিখেছেন, তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একজন ‘হিতৈষী বন্ধু’। মনমোহনকে তারা একজন ভালো বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন।
তিনি আরও লেখেন, মনমোহন চলে গেছেন শুনে খুব খারাপ লাগছে। আমি সবসময়ই তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে আনন্দিত। মনমোহন ছিলেন একজন ভালো বন্ধু।
মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। মনমোহনের মৃত্যুর খবর পেয়েই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। সেখানে ড. মনমোহনকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ‘অন্যতম সেরা চ্যাম্পিয়ন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।
তিনি লিখেছেন, ড. সিং ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের একজন অন্যতম চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে যে অগ্রগতি হয়েছে তার ভিত্তি স্থাপক ছিলেন মনমোহন।
ভারতে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভ বলেছেন, মনমোহন সিংয়ের মৃত্যু ভারত ও রাশিয়ার জন্য বিরাট মর্মান্তিক এবং শোকের মুহূর্ত। দিল্লি ও মস্কোর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনমোহন সিংয়ের অবদান অপরিসীম। তার সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ সবসময়ই প্রশ্নাতীত ছিল, কেননা একজন অর্থনীতিবিদ হিসাবে তার দক্ষতা এবং তার প্রতিশ্রুতি ভারতকে এগিয়ে নিয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, মনমোহন সিং গত বৃহস্পতিবার রাতে ৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই দিন সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে আচমকা অজ্ঞান হয়ে যান মনমোহন। তাকে দ্রুত এইমসের আপৎকালীন চিকিৎসা বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বয়সজনিত অসুখে ভুগছিলেন মনমোহন। রাত ৯টা ৫১ মিনিটে জানিয়ে দেওয়া হয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো কংগ্রেসের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুর খবর পেয়ে গভীর শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেছেন, ভারত তার একজন বিশিষ্ট নেতাকে হারিয়েছে। এক্সের এক বার্তায় মোদি মনমোহন সিংয়ের পরিবার, বন্ধু এবং তার অগণিত ভক্তদের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ জয়শঙ্করও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম