এবার বাংলাদেশের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল চাইলো ত্রিপুরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:১১ আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:১৪
আদানি গোষ্ঠীর পর এবার বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ পাওনা ১৩৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯০ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা) জরুরি ভিত্তিতে চেয়েছে ত্রিপুরার রাজ্য সরকার। বকেয়া বিল চেয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ইতোমধ্যে চিঠিও দিয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের বিদুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন (টিএসইসিএল)। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে টিএসইসিএলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, বাংলাদেশের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বাবদ টিএসইসিএলের পাওনা ১৩৫ কোটি রুপি। পাওনা অর্থ চেয়ে আমরা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) চিঠি দিয়েছি। এর আগে বিপিডিবির চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগতভাবে আমি বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য বলেছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রীর সঙ্গেও আমাদের রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, টিএসইসিএল এখন আর্থিকভাবে কঠিন সময় পার করছে। একদিকে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে তহবিলে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ নেই। বকেয়া সেই অর্থ এখন আমাদের খুব প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন নাথ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ নিয়মিত বিল পরিশোধ করলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ এখনও বকেয়া রয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ছয় টাকা ৬৫ পয়সা করে ধার্য করা হয়েছে। তবে বকেয়া ১০০ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করার পর চলতি বছরের মে মাসে ত্রিপুরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল।
রতন নাথ আরও জানান, বকেয়া আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইস্যুতে ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন সংস্থা এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেডের মাধ্যমে হয়েছিল এ চুক্তি। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশে সরবরাহকৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৬ দশমিক ৬৫ রুপি করে পাবে ত্রিপুরার রাজ্য সরকার।
এছাড়াও ২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। হাইকোর্ট সম্প্রতি সেই চুক্তির ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ চুক্তিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা অবশ্য বলেছেন যে এখনই কোনো চুক্তি বাতিলের পথে হাঁটছেন না তারা।
তবে আদানি গোষ্ঠীর সাথে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে চলমান জটিলতা আরও বেড়েছে। গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, তাদের কাছে বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ ৮০ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, ডলার সংকট সত্ত্বেও ইতিমধ্যে ১৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে এবং বাকি পরিমাণও শীঘ্রই দেওয়া হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ ও গ্রেফতারির ফলে কিছু এলাকায় অশান্তি দেখা দিয়েছে। ভারতের সরকারও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম