ক্ষমতা গ্রহণের পর যে ৭ কাজ করবেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ের জন্য প্রচারণায় তিনি অর্থনীতি, অভিবাসন ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
নির্বাচনের পরদিন বুধবার (৬ নভেম্বর) ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'আমার একমাত্র লক্ষ্য হলো প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা।'
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উভয় কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। যার ফলে এবার তার লক্ষ্য পূরণ আরও সহজ হবে।
চলুন জেনে নেয়া যাক পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোন সাতটি কাজকে অগ্রাধিকার দিতে চান ট্রাম্প। সেগুলো কী কী?
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো:নির্বাচনী প্রচারণায় টাম্প সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে যে কথা বলেছেন তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করবেন তিনি। এছাড়া মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। নিজের প্রথম মেয়াদে এই প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে কিছুটা বাঁকা চোখে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যে সংখ্যক অভিবাসীকে ট্রাম্প ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলছেন, তা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশাল আইনগত ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিও কমিয়ে দিতে পারে।
অর্থনীতিতে মনোযোগ:
ভোটগ্রহণের পরপরই বুথফেরত জরিপে দেখা গিয়েছিল, ভোটারদের কাছে অন্যতম বড় একটি বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। ট্রাম্প এরইমধ্যে মূল্যস্ফীতি থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে নিত্যপণ্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছিল।
এছাড়া ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প। বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বিদেশি পণ্যের ওপর নতুন অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে চান অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট:
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পরিবেশ সুরক্ষাসংক্রান্ত নানা আইন বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। তখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারও জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যদিয়ে ট্রাম্পের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পকে সহায়তা করা। ইলেকট্রিক গাড়ির বিরোধী তিনি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট। বরাবরই এর কঠোর সমালোচনা করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে তিনি বলেছিলেন, চাইলে সমঝোতার মাধ্যমে ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে’ এই যুদ্ধ শেষ করতে পারেন তিনি।
গর্ভপাতের অধিকার রদ:
নিজের কিছু সমর্থকের ইচ্ছার কথা মাথায় রেখে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে গর্ভপাতের অধিকার রদসংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করবেন না। ২০২২ সালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে খারিজ করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পক্ষে ছিলেন আদালতের রক্ষণশীল বিচারপতিদের অধিকাংশ।
৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা:
২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি সে পরাজয় মেনে নেননি। তাই নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধাতে সমর্থকদের উসকানি দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
ট্রাম্প বলেছিলেন, দাঙ্গার অভিযোগ তুলে তার শত শত সমর্থককে রাজনৈতিক বন্দি করা হয়েছে। তাদের অনেককে অকারণে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ক্ষমতায় গেলে তাদের কয়েকজনকে ‘মুক্তি’ দেবেন তিনি।
বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত:ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন মার্কিন কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেয়া ও সরকারি গোপন নথি সরানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই মামলা দুটি করা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প একসময় বলেছিলেন, হোয়াইট হাউজে বসার ‘দুই সেকেন্ডের মধ্যে’ জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করবেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় ফিরেছেন ট্রাম্প। এখন দেখার বিষয় তিনি কী করেন।
সূত্র: বিবিসিবাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ