৩৭০ ধারা ফেরানোর প্রস্তাব
জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার প্রথম অধিবেশনে হট্টগোল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৭
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরকে আবার ৩৭০ ধারার অধীনে নেয়ার প্রস্তাবকে ঘিরে বিধানসভায় আজও উত্তাল হলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মার্শাল ডাকতে হলো। এ সময় উত্তেজিত ও মারমুখী সদস্যদের বের করে দেয়া হলো সভাকক্ষ থেকে। এই হট্টগোলের মধ্যেই শুক্রবার শেষ হলো নতুন বিধানসভার পাঁচ দিনের প্রথম অধিবেশন।
এই ৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্যই কাশ্মীর কিছু বিশেষ অধিকার ভোগ করত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে।
তবে বিশেষ এই মর্যাদা ফেরানোর কথা নির্বাচনী প্রচারের সময়েই উপত্যকার দলগুলো নিজেদের মতো করে তুলেছিল। ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) সরাসরি সেই মর্যাদা ফেরানোর দাবি না জানালেও তাদের পেশ করা প্রস্তাবে বলা হয়, মানুষ যে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি, তা ভোটের রায়েই স্পষ্ট। অতএব, সরকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মর্যাদা ফেরানো নিয়ে কথাবার্তা শুরু করুক।
সরকারপক্ষের পেশ করা প্রস্তাবটি গত বুধবার কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। এতে সরাসরি ৩৭০ অনুচ্ছেদের উল্লেখ যদিও ছিল না। কিন্তু আগের দিন সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে পিডিপির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তোলার চেষ্টা হয়েছিল। স্পিকার যদিও সেটি খারিজ করে দেন।
দেশটির বিধানসভা নির্বাচনের পর জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার প্রথম অধিবেশনেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনা নিয়ে বিধায়কদের মধ্যে সংঘর্ষ হলো। এর আগে গত বুধবার বিজেপির বিরোধের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় ধ্বনিভোটে একটি প্রস্তাবে গৃহীত হয়েছে। সেখানে ৩৭০ ধারা আবার চালু করার দাবি করা হয়েছে। সে জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে আলোচনা করার কথাও বলা হয়েছে।
এর আগে বিরোধী নেতা সুনীল শর্মাসহ অন্য বিজেপি সদস্যরা প্রস্তাব খারিজের দাবি জানিয়ে বলেন, তিন দিন ধরে বিধানসভায় যা চলছে, তা গণতন্ত্রের কালো অধ্যায়। সরকার পক্ষ ও অন্য যাঁরা বিশেষ মর্যাদা ফেরানোর দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের মনে থাকা উচিত, দেশের সংসদ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিধানসভা কখনো সংসদের চেয়ে বড় হতে পারে না। সুনীল শর্মা বলেন, ৩৭০ ইতিহাস। কোনো দিনই তা ফিরে আসবে না।
স্পিকার আবদুল রহিম রাথের বলেন, প্রস্তাব পেশ করেছে সরকারপক্ষ। সভার সদস্যরা তা গ্রহণ করেছেন। খারিজ করার অধিকারও তাঁদের। গৃহীত প্রস্তাব তিনি খারিজ করতে পারেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। বিজেপির বিধায়ক সুনীল শর্মা যখন বলছিলেন, তখন বিধায়ক শেখ খুরশিদ (বারামুলার সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার রশিদের ভাই) একটা ব্যানার নিয়ে ওয়েলে নেমে পড়েন। সেই ব্যানারে ৩৭০ ধারা ও সংবিধানের ৩৫ এ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার দাবি ছিল। রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিও করা হয়েছিল।
সেই সময় বিজেপির কিছু বিধায়ক ওয়েলে নেমে পড়েন। একজন খুরশিদের হাত থেকে ব্যানারটি ছিনিয়ে নিতে যান। অন্যরা ব্যানারটি ছিঁড়তে চান। সেসময় পিপলস কনফারেন্সের সাজ্জাদ লোন সেদিকে চলে যান। বিধায়কদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়। কিছুক্ষণ ধরে গোলমাল চলতে থাকে। স্পিকার অধিবেশন মুলতবি করে দেন। মার্শাল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সাজ্জাদ লোন পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ন্যাশনাল কনফারেন্স বিধায়করা খুরশিদকে বাঁচাতে আসেননি। আমরা তার সঙ্গে নির্বাচনে লড়েছি। কিন্তু কাশ্মীরি হিসাবে আমি যখন দেখেছি, তিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তখন তাকে বাঁচাতে গেছি। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।
তার অভিযোগ, বুধবার ন্যাশনাল কনফারেন্সের আনা প্রস্তাব তিনি সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র টুইট করে বলেন, আমরা বিজেপির সঙ্গী। এ সব বাজে কথা অনেক হয়েছে।
বিজেপির অভিযোগ বিরোধী নেতা সুশীল শর্মা সাংবাদিকদের বলেছেন, ওই প্রস্তাব যতক্ষণ প্রত্যাহার না করা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা বিধানসভা চালাতে দেবেন না। বিজেপি বিধানসভার বাইরেও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাবে।
বিজেপির অভিযোগ, স্পিকার ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতার মতো ব্যবহার করছেন। তিনি স্পিকারের মতো নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছেন না।
দিল্লিতে সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, পিডিপি প্রথমে একটা প্রস্তাব এনেছিল। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে তারা নিশ্চয়ই ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে আলোচনা করত। জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত সমর্থন করে না। বুধবার ন্যাশনাল কনফারেন্সের আনা প্রস্তাব ধ্বনিভোটে গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম