মার্কিন ঘাঁটির শর্তে সার্বভৌমত্ব পেল চাগোস দ্বীপপুঞ্জ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৫১
দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে মার্কিন ও ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি রাখার শর্তে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত চাগোস দ্বীপপুঞ্জকে সার্বভৌমত্ব দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাজ্য। এতে দ্বীপপুঞ্জ থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ২ হাজার মানুষ ফিরতে পারবেন। নতুন সিদ্ধান্তকে ভারত মহাসাগরের ভূ-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) এক চুক্তির মাধ্যমে মরিশাসের কাছে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব দেয় দেশটি। এই চুক্তির ফলে কয়েক দশক আগে এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষ এবার ফিরতে পারবেন সেখানে। এর মধ্য দিয়ে আফ্রিকায় যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ উপনিবেশের পতন হলো।
এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, দিয়েগো গার্সিয়া হলো মার্কিন-ব্রিটিশ যৌথ সামরিক ঘাঁটির একটি সাইট। এটি জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ৯৯ বছরের জন্য এখানে মার্কিন সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। এই চুক্তিটি মরিশাসের জন্য আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দেয়। শুধু তাই নয়, এই চুক্তিতে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনেরও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং মরিশাসের নেতারা ঐতিহাসিক ভুলের সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি হিসাবে এই চুক্তিটি তৈরি করেছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬৮ সালে মরিশাস স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ছিল চাগোস দ্বীপপুঞ্জ। ওই দ্বীপগুলো নিয়ে চলমান বিরোধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দীর্ঘ আলোচনার পর একটি চুক্তির অধীনে নতুন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। এর আগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজে এক রায়ে জানান, মরিশাসকে স্বাধীনতা দেওয়ার আগে চাগোস দ্বীপপুঞ্জকে বেআইনিভাবে আলাদা করে দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে মানুষদের সরে যেতে বলে যুক্তরাজ্য। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায়—স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য শর্ত হিসেবে চাগোস দ্বীপগুলোকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল মরিশাসকে। পরবর্তীতে এই দ্বীপগুলোর মধ্যে দিয়েগো গার্সিয়াকে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইজারা দিতে সম্মত হয় যুক্তরাজ্য। তবে আফ্রিকান দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে দ্বীপগুলো নিয়ে বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিয়ে ২০২২ সাল থেকে আলোচনা চলে আসছে। ১২ দফা বৈঠকের পর অবশেষে এই দ্বীপপুঞ্জকে সার্বভৌমত্ব দিতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাজ্য। এর আগে অবশ্য ২০১৯ ও ২০২১ সালে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্বে সমর্থন দিয়েছিল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সী (ইটলস)। আদালত ও জাতিসংঘের এই সমর্থনকে মেনে নিচ্ছিল না যুক্তরাজ্য। অবশেষে তারা সার্বভৌমত্ব দিতে রাজি হলো। তবে এবার বেশকিছু শর্ত দিয়েছে তারা। এতে বলা হয়, দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে মার্কিন ও ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি থাকবে। এই শর্তে দ্বীপপুঞ্জ থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ২ হাজার মানুষ ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ