চীনে করোনা ভাইরাস, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:৫৭ আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৪
করোনা ভাইরাসে চীনের মূল ভূখন্ডে এপর্যন্ত ৩৬১ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর এতে প্রায় ১৭ হাজারের বেশি আক্রন্ত হয়েছে। এছাড়া চীনের বাইরে ১৫০ জনের বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দেশ চীনের সঙ্গে যাতায়াতও বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। গত দুসপ্তাহের মধ্যে যারা চীন সফর করেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবে না বলেও ঘোষণা দেয়।
গত ২৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে জরুরী কাজে নিয়োজিত ছাড়া অন্য সব মার্কিন নাগরিককে চলে যেতে বলে। এর এক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার জরুরি কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারি ছাড়া আর সব সরকারি কর্মচারি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চীন ছাড়ার অনুমতি দেয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে তাদের সব সরকারি কর্মচারির পরিবারের ২১ বছরের কম বয়সী সদস্যদের চলে আসতে নির্দেশ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে অনেকেই কারোনা ভাইরাসকে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর ষড়যন্ত্র বলেও মনে করছেন!
বিশ্লেষণে দেখা গেছে- যুক্তরাষ্ট্র কোনো ফন্দিতেই চীনকে দমিয়ে রাখাতে পারছিল না। যুক্তরাষ্ট্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য হাতের মুঠোয় পুড়ে নিয়েছিল চীনারা। বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের এই একাধিপত্যের ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল যুক্তরাষ্ট্র। অথচ বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলা সেই চীন আজ করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত। ২০১৮-১৯ জুড়ে চলা বাণিজ্য যুদ্ধ যেই দেশটির অর্থনীতিতে খুব বড় কোনো ক্ষতি করতে পারেনি, সেই দেশটির অর্থনীতিই আজ করোনাভাইরাসের কাছে কুপোকাত!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্পষ্ট করেই বলছে, করোনাভাইরাস বিপজ্জনক, তবে সেটা সার্স বা মার্সের মতো নয়। তাহলে এই ভাইরাসটির কারণে কেন ‘একঘরে’ করে ফেলা হচ্ছে চীনকে? করোনা কি কেবলই একটি ভাইরাস, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র?
তথ্য মতে, করোনা জেঁকে বসার শুরুর দিকে ইসরায়েলের সাবেক সামরিক গবেষক ড্যানি শোহাম চীনের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তিনি দাবি করেন, উহান শহরের এক গবেষণাগার থেকে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তার দাবি, ওই গবেষণাগারে গোপনে জৈব রাসায়নিক অস্ত্র বানায় বেইজিং। শেহামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও গলা মেলায়। আরেকটু পেছনে ফিরলে দেখা যাবে, বছরখানেক আগেও এই শেহাম এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে অভিযোগ করেছিল যে, চীন উহানে জৈব অস্ত্র বানাচ্ছে। আর এবার তারা সেই দাবি রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের একমাত্র ‘পাথোজেন লেভেল ৪’ চিহ্নিত গবেষণাগারটি হলো উহানের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউট। এর মানে হচ্ছে এই ইনস্টিটিউটে গবেষণা করা অণুজীব যেন না ছড়ায় সেই ব্যবস্থা তাদের আছে। এ জন্যই প্রশ্ন জাগে, তবে কি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলই ভাইরাস ছড়িয়ে আঙুলটি ঘুরিয়ে দিচ্ছে চীনের দিকে? এটা কারোরই অজানা নয় যে, বিশ্বের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এজেন্ট নেই।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার দোসর ইসরায়েল খুব ভালো করেই জানে যে, চীনকে কোনো যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে কাবু করা যাবে না। কারণ সামরিক ক্ষেত্রে চীন এতটাই এগিয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকে কাঁপিয়ে দিতে তাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। সে জন্য যুদ্ধের পথে না হেঁটে ভাইরাসকেই কি বেছে নিয়েছে সুচতুর যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল?
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের রপ্তানীযোগ্য পণ্যের কয়েক হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। হুবেই প্রদেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ এখন অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। খাদ্যবাহী ট্রাক ও চিকিৎসাসামগ্রী ছাড়া আর কিছুই এখন ওই এলাকায় ঢুকতে পারছে না।
শুধু তাই নয় করোনার তাণ্ডবে ইতিমধ্যেই চীনের ৬২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের আগে যেটা ছিল ৬ শতাংশ।
এছাড়া করোনা ভাইরাসে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে থমকে গেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ হাজার সিনেমা হল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্পষ্ট করেই বলছে যে, করোনার কারণে চীনকে একঘরে করে ফেলার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু তবুও যুক্তরাষ্ট্রসহ একের পর এক দেশ চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন গুজবও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেন সবার মধ্যে একটা চীনভীতি তৈরি হয়।
এনিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আতংক ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের ফলে বরং আতংক ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়ার পরিবর্তে বরং আতংক ছড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে প্রথম দেশ যারা চীনাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করলো এবং চীন থেকে তাদের দূতাবাসের কিছু কর্মীকে সরিয়ে নিল।
‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ, যাদের কীনা মহামারী ঠেকানোর শক্তিশালী ব্যবস্থা আছে, তারাই কীনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ না মেনে মাত্রাতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করলো।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, সীমান্ত বন্ধ করে দিলে ভাইরাসের সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়াবে, কারণ তখন লোকজন অন্যপথে বিভিন্ন দেশে ঢোকার চেষ্টা করবে।
চীনের এই সংকটের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে নাকি নেই সেটা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু চীনকে একঘরে করে যুক্তরাষ্ট্র যে লাভবান হয়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। চীন এই সংকট থেকে কত দ্রুত বের হয়ে আসতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরএ