সালমান ভক্তকে কেন লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলেন সামিরা?
কামরুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:১৯ আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৬
রহস্যে মোড়ানো সালমান শাহ্’র মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বাংলার অগণিত ভক্ত প্রতিবাদের হুংকার দিয়েছিলো। বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলো ন্যায় বিচারের। সালমানের পরিবারসহ তার অসংখ্য ফ্যান ক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিলো, যাতে সালমান হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত হয় এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্যিকারের ঘটনা প্রকাশ করা হয়।
সালমান শাহ্ মৃত্যুর পর যত ভক্ত আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের দাবিতে, তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ রানা নকীব। চাঁদপুরের এই যুবক সেই ১৯৯৬ সাল থেকেই প্রিয় নায়কের প্রতি ভালোবাসার টানে ছুটেছেন এখান থেকে ওখানে। যত জায়গায় যোগাযোগ করা দরকার করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সালমানের ভক্তদের একত্র করার প্রয়াস চালিয়েছেন। যাতে অমর এই নায়কের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হয়।
সালমানের মৃত্যুর পর থেকেই তার পরিবার ও অগণিত ভক্তরা কেউই বিশ্বাস করেনি এটা আত্মহত্যা। সবাই এক সুরে বলেছেন এটা পরিকল্পিত খুন। কিন্তু সালমানের তৎকালীন স্ত্রী সামিরা বরাবরই বলে এসেছেন এটা আত্মহত্যা! এমনকি তিনি ফেসবুক মাধ্যমেও আত্মহত্যা বলে অনেক প্রচারণা চালিয়েছেন। স্ত্রী হিসেবে সামিরার উচিৎ ছিলো সঠিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সালমানের মৃত্যুর রহস্যের জট খুলে দেওয়া এবং ভক্তদের মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ মুছে দেওয়া। কিন্তু তা না করে তিনি সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন।
কিন্তু কেন? – এই প্রশ্ন সহজেই জেগে ওঠে। হ্যাঁ, এই প্রশ্ন তুলেই প্রচারণা চালিয়েছেন সালমান ভক্ত মাসুদ রানা নকীব। তার প্রচারণায় তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন যে, আত্মহত্যা নাকি খুন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করবে আদালত। সামিরা কেন এটাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে? এছাড়া সালমানের মৃত্যুর নানা আলামত প্রকাশ করেও নকীব সালমান ভক্তদের একাত্ম করার চেষ্টা করেছেন। এটাই তার অপরাধ!
হ্যাঁ এই অপরাধেই নকীবের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সামিরা ও তার স্বামী মুস্তাক ওয়াইজ। ২০১৫ সালের ৪ মার্চ নোটিশ দিয়ে তারা নকীবকে হুঁশিয়ারি করেছিলেন যে, যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তাদের বিরুদ্ধে করুচিপূর্ণ, অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সরিয়ে নেন। নতুবা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে মাসুদ রানা নকীব বলেছেন, আমি একজন সাধারণ সালমান ভক্ত। তার মৃত্যুর সঠিক তথ্য উদঘাটনে আমি দাবি ও প্রচারণা চালাতেই পারি। কিন্তু সামিরা কোন যুক্তিতে নিজের স্বামীর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে জাহির করতে চেয়েছেন? আর কোন কারণেই বা আমার বিরুদ্ধে নোটিশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি কি প্রমাণ করতে চেয়েছেন? তিনি তো সেদিন বাসাতেই ছিলেন। তাহলে কেন সরাসরি জবানবন্দি দিয়ে আসল ঘটনার বর্ণনা দেন না? কেন তার পক্ষ থেকে তার স্বামী মুস্তাক ও বাবা শফিকুল হক হীরা বক্তব্য দেন?
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাবেয়া সুলতানা রুবির তথ্য ফাঁস করার সুত্র টেনে নকীব বাংলাদেশ জার্নালকে আরও বলেছেন, রুবি যেসব তথ্য দিয়েছে, সেগুলো তো মিথ্যা হতে পারে না। সালমানের জনপ্রিয়তায় কমতি ছিলো না, অর্থ-সম্পদে কমতি ছিলো না। সামিরার ভাষ্যে, তাদের মধ্যকার সম্পর্কও মন্দ ছিলো না। তাহলে কোন কারণে সালমান শাহ্ আত্মহত্যা করবেন? সালমানের মৃত্যুর দিন সকালে সামিরা পুটলি বেঁধে রুবির ছেলেকে দিয়ে কি পাচার করেছিলো? কেন সালমানের দেহ তড়িঘড়ি করে সিলিং ফ্যান থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছিলো? কেন সালমানের মতো একজন সুঠাম দেহের মানুষ ফাঁস দেওয়ার পরও সেই ফ্যান কোনও রকম বেঁকে যায়নি? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে কেবল সামিরার কাছেই। তিনি এসব উত্তর না দিয়ে কেন ‘আত্মহত্যা’ প্রমাণ করতেই উঠে পড়ে লেগেছিলেন?
সালমান শাহ্’র এই অন্ধ ভক্ত সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে বলেছেন, সালমানের বাসার কাজের লোকগুলোকে খুঁজে বের করেন এবং সামিরাকে সুষ্ঠুভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। হত্যার আলামতগুলো পুনঃ তদন্ত করেন। তাহলেই আসল ঘটনা জানা যাবে। ক্ষণজন্মা এই নায়কের হত্যা মামলার সঠিক সুরাহা করুন।
কেআই/