ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ আপডেট : ৩৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্মৃতিচারণ

‘সালমান আমার পিঠ চাপড়ে বললেন-গুড, ভেরি গুড’

  বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:২৯  
আপডেট :
 ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৪৩

‘সালমান আমার পিঠ চাপড়ে বললেন-গুড, ভেরি গুড’

১৯৯৬ সালের শুরুর দিকের কথা। আমি সবেমাত্র অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। বড় মামা তার জরুরী প্রয়োজনে ঢাকায় যাবেন শুনে আমিও বায়না ধরি তার সাথে ঢাকায় বেড়াতে যাওয়ার। তিনি আমাকে তার সাথে করেই ঢাকা নিয়ে আসেন। আমি জীবনে প্রথমবারের মত ঢাকা শহরে বেড়াতে এসেছি।

আমার মেঝ মামা জাতীয় যাদুঘরের কর্মকর্তা ছিলেন। তার বাসা ছিল জাতীয় যাদুঘর সংলগ্ন কোয়াটারে। ঢাকা বেড়াতে এসে আমি তার বাসাতেই উঠি। দশ দিন ঢাকাতে ছিলাম। এই দশ দিনের মধ্যে মেঝ মামা আমাকে ঢাকা শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরাতে নিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রমনা পার্ক, শিশু পার্ক, জাতীয় সংসদ ভবন, চিড়িয়াখানাসহ বেশকয়েকটি স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিলো।

মেঝ মামা তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। আর তাই তার সহকর্মীরা আমাকে জাতীয় যাদুঘরের সর্বত্র ঘুরিয়ে দেখাতেন। এর মধ্যেই একদিন জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে কিসের যেন প্রোগ্রাম হচ্ছিল (তারিখ মনে নেই)। মামা খুব ব্যস্ত ছিলেন সেই প্রোগ্রাম নিয়ে। আমাকে মিলনায়তনের কন্ট্রোল রুমে বসিয়ে বললেন, ‘এখান থেকেই সবকিছু দেখতে পাবি, তুই দেখ আমি আমার কাজ করি’। কিছুক্ষণ পর মামার এক সহকর্মী এসে তাকে বলেন, ‘সালমান শাহ্‌ এসেছেন’। সালমান শাহ্‌ নামটা শুনেই আমি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন সালমান শাহ্‌ এসেছেন মামা? জবাবে তিনি বললেন, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার নায়ক সালমান শাহ্‌। উল্লেখ্য, সালমান শাহ্‌ অভিনীত এই সিনেমা আমার নানার বাড়ির উঠানে আমরা সবাই মিলে ভিসিআরে দেখেছিলাম। পরে অবশ্য হলে গিয়েও দেখেছি বেশ কয়েকবার। আমি মামাকে বললাম, ‘মামা আমি সালমান শাহ্‌কে কাছে গিয়ে দেখব’। এই কথা শুনে তিনি একবার আমার মুখের দিকে তাকান এবং বলেন, এখন সেখানে ভিড়, পরে নিয়ে যাব।

প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে মামা আমাকে নিয়ে মিলনায়তনের ভেতরে গেলেন। দেখলাম একজনের সাথে কথা বলে আবার তিনি বাহিরের দিকে এলেন, সাথে আমিও আছি। রিসিপশনের দিকে আসতেই মামা একজনের সাথে করমর্দন করে হাসি মুখে কথা বলছিলেন। আমি কিছুটা দূরে লবির একটা চেয়ারে বসে সে দিকে তাকিয়ে আছি। বুঝতে পারলাম মামার সাথে তার আগে থেকেই পরিচয় আছে। মামা আমাকে ইশারায় ডাকলেন। কাছে যেতেই বললেন, এই হচ্ছে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার নায়ক সালমান শাহ্‌। আমি তার দিকে তাকিয়ে পর্দায় দেখা চেহারা মিলানোর চেষ্টা করছি। ততক্ষণে মামা তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ও হচ্ছে আমার ভাগ্নে। ঐ যে ছোট বোনের কথা বলেছিলাম, একটা ভাগ্নেকে রেখে মারা গেছে, ও-ই হল সেই ভাগ্নে।

আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছি! মাথায় ক্যাপ পরা, কানে রিং আর চোখে কালো সানগ্লাস। সালমান আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন ক্লাসে পড়? আমি তার জবাব দিতেই তিনি প্রথমে আমার কাঁধে হাত রাখলেন ও পরে পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘গুড! ভেরি গুড। লেখা-পড়া মনোযোগ দিয়ে করবে, তাহলেই অনেক বড় কিছু হতে পারবে ও মানুষের সম্মান পাবে’।

মামার সাথে কথা বলেই তিনি মিলনায়তনের দিকে গেলেন। আর আমি সেদিকেই তাকিয়ে আছি। জীবনে প্রথমবার ঢাকাতে এসেই নায়ক সালমান শাহ্‌কে এত কাছ থেকে দেখতে পাবো তা ভাবতে পারিনি! গ্রামে ফিরে গিয়েই বন্ধু ও সহপাঠীদের এই কথা বলার পর ওরা শুনেই অবাক! স্কুল পালিয়ে বাজারের ভিসিআরের দোকানে ৫ টাকার বিনিময়ে সবাই মিলে তখন প্রচুর সিনেমা দেখতাম। আর আমরা বন্ধুরা সালমান শাহ্‌’র সিনেমাই বেশি বেশি দেখতাম।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে ক্লাবের টিভিতে সিনেমা দেখছিলাম। বিটিভির খবরের মাধ্যমে জানতে পারলাম সালমান মারা গেছেন। বুকের ভিতরটায় কেমন যেন করে উঠলো! কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে সালমান মারা গিয়েছেন! পাগলের মত এদিক ওদিক ছুটছি! একে ওকে জিজ্ঞেস করে আসল সত্যটা জানার চেষ্টা করছি। আমার চোখে তখন তার সাথে সামান্য সময়ের সেই কথোপকথনের দৃশ্য ভেসে উঠেছে। কেবল বার বার সেই স্মৃতিই মনে পড়ছে!

সেই যে সালমান শাহ্‌’র প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আমার মনে গেঁথে গেছে, আজ পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। এই সালমানের প্রতি অন্ধ ভালোবাসার কারণে আমার জীবনে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা, কিন্তু আজও আমি তাকে ও তার স্পর্শ কিছুতেই ভুলতে পারিনা! হে অমর নায়ক, তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো এটাই আমার কামনা।

লেখক: মাসুদ রানা নকীব, সালমান শাহ্‌’র ভক্ত ও ‘সালমান শাহ্ স্মৃতি সংসদ’-এর প্রতিষ্ঠাতা।

কেআই/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত