চিরুনি তল্লাশি শেষে আটক ১
সাইফের বাড়িতে দুর্বৃত্তের ভয়ংকর ৩০ মিনিট
আইসিইউ থেকে সাধারণ বেডে দেওয়া হয়েছে
এনডিটিভি
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৩
গত বুধবার গভীর রাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলিউড তারকা সাইফ আলী খান। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অস্ত্রোপচার করার পর এখন শঙ্কামুক্ত অভিনেতা। আজ শুক্রবার দুপুরে অভিনেতার শারীরিক অবস্থার অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আক্রান্ত হওয়ার পর মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাইফ আলী খানকে। অস্ত্রোপচারের পর এখন সেখানেই আছেন অভিনেতা।
হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সাইফের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। গতকাল অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। নতুন খবর, সাইফকে আইসিইউ থেকে সাধারণ বেডে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই বাসায় ফিরতে পারবেন সাইফ। তবে আরও এক সপ্তাহ তাঁকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নিতিন নারায়ণ ডঙ্গে বলেন, ‘সাইফ ভালো আছে। সে একটু একটু হাঁটতে পারছে, ভালোভাবে কথাও বলছে। এ ছাড়া আক্রান্ত স্থানে তেমন ব্যথাও অনুভব করছে না।’
এদিকে আজ সকালে বাবাকে দেখতে আবারও হাসপাতালে আসেন ইব্রাহিম আলী খান। কালো শার্ট পরা ইব্রাহিমকে গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
তবে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আজ সকালে হাসপাতালে আসেন সাইফের স্ত্রী কারিনা কাপুর খানও।
এদিকে, বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের ওপর হামলার ঘটনা হতবাক করেছে সবাইকে। বান্দ্রার মতো অভিজাত এলাকায় ‘ছোট নবাব’-এর ওপর এ হামলার খবরে উদ্বিগ্ন পুরো চলচ্চিত্রজগৎ ও তাঁর ভক্তরা।
হামলার সঙ্গে সঙ্গেই জোর তদন্তে নেমে পড়েছে মুম্বাই পুলিশ। ইতিমধ্যেই ৩৫টি পৃথক দল গঠন করে তদন্তের কাজ শুরু করেছে তারা। এ মামলায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে। আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফ-কারিনার বাসার এক পরিচারিকাকে পুলিশ স্টেশনে তলব করা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পুরো ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। জানা গেছে, পুরো ঘটনা ছিল ৩০ মিনিটের। হামলার দুই ঘণ্টা আগে বাড়িতে কারও প্রবেশের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ, এমনকি সিসিটিভি ফুটেজেও কারও প্রবেশের দৃশ্য ধরা পড়েনি এ সময়ে।
প্রাথমিক সন্দেহে পুলিশ জানিয়েছে, অভিনেতার বাড়িতে চুরি করার জন্যই প্রবেশ করেছিল এক বা একাধিক দুর্বৃত্ত। এমনকি অভিনেতার ভবনের সব প্রবেশপথ ও বাড়ির নকশা সম্পর্কে আগে থেকেই জানা ছিল তাদের। ‘ফায়ারস্পেস’ দিয়ে সাইফ-কারিনার বাড়িতে তারা প্রবেশ করে। এরপর ভবনের পেছনের দিকের সিঁড়ি বেয়ে অভিনেতা যেখানে থাকেন, সেখানে পৌঁছায় দুর্বৃত্তরা।
বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে তৈমুর আর জেহর ঘরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে অনুপ্রবেশকারীকে। প্রথমে একজনকে অভিনেতার ছোট ছেলে জেহর ঘরে দেখা যায়। জেহর আয়া এলিয়ামা ফিলিপ জানান, তিনি দিবাগত রাত দুইটার দিকে অনুপ্রবেশকারীকে দেখতে পান এবং তার মুখোমুখি হন।
তার কথায়, ‘বাথরুমের দরজা খোলা এবং আলো জ্বলতে দেখে আমি ধরে নিয়েছিলাম হয়তো কারিনা কাপুর। তবে এরপরই কিছু একটা সমস্যা টের পাই, বিষয়টি দেখতে যখন এগিয়ে যাই, তখন একজন লোককে বাথরুম থেকে বেরিয়ে তৈমুর এবং জেহর ঘরে প্রবেশ করতে দেখি।’
৫৬ বছর বয়সী গৃহকর্মী আরও জানান, তিনি যখন ওই লোকের মুখোমুখি হন, তখন তার কাছে এক কোটি রুপি দাবি করা হয়। ওই দুর্বৃত্তকে তাড়ানোর চেষ্টার সময় তিনি আহত হন। একই ঘরে থাকা আরেক গৃহকর্মী জুনু তখন সাইফের ঘরে ছুটে যান এবং অভিনেতাকে জাগিয়ে তোলেন। এরপর অভিনেতা অনুপ্রবেশকারীদের মুখোমুখি হলে তাঁকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করা হয়।
এ সময় গীতা নামের বাড়ির আরেক গৃহকর্মী সাইফকে অনুপ্রবেশকারীকে পরাস্ত করতে এবং তাকে একটি ঘরে আটকে রাখতে সাহায্য করেন। এরপর সবাই বাড়ির ওপরের তলায় চলে যান, কিন্তু ততক্ষণে অনুপ্রবেশকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সূত্রের মতে, ষষ্ঠ তলার সিসিটিভি ক্যামেরায় তার পালানোর দৃশ্য ধরা পড়ে। তবে এরপর তার আর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, এমনকি লবি এলাকার সিসিটিভিতেও তাকে দেখা যায়নি। পুলিশের সন্দেহ, ‘ফায়ারস্পেস’ ব্যবহার করে নিচতলায় পৌঁছে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় সে। পুরো ঘটনার স্থায়িত্ব ৩০ মিনিটের।
মেরুদণ্ডে একটিসহ ছয়টি আঘাতের কারণে রক্তে ভাসছিল সাইফ। এমন সময়ে কোনো গাড়ি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকায় তাড়াহুড়ো করে সাইফকে অটোরিকশায় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান বড় পুত্র ইব্রাহিম। অভিনেতার বাড়ি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরেই হাসপাতাল।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সাইফ আলী খানের ওপর হামলার ঘটনায় এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করেছে মুম্বাই পুলিশ। বার্তা সংস্থার এএনআই একটি ভিডিও তাঁদের এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে থানায় ঢোকানো হচ্ছে অভিযুক্তকে। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিকে আপাতত আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরই গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখেই পুলিশ ধারণা করেছিল, ঘটনার পর সকালের প্রথম লোকাল ট্রেন ধরে ভাসাই ভিরারের দিকে রওনা দেন ওই ব্যক্তি।
ভাসাই, নালাসোপারা ও ভিরার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালানো শুরু করে মুম্বাই পুলিশের দল। কয়েক ঘণ্টার চিরুনি তল্লাশি শেষে সিসিটিভিতে মুখ দেখা যাওয়া ওই ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা।
আজ শুক্রবার সকালে মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, তারা সাইফের পিঠ থেকে বের করা ছুরির অংশটি হাতে পেয়েছে। ওই ছুরির বাকি অংশ কোথায়, তা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
গত বুধবার রাতে বান্দ্রার ১১ তলার ফ্ল্যাটে হামলার শিকার হন বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান। সাইফের শরীরে ছয়বার ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর তাঁকে লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। গতকাল সেখানে টানা পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর সাইফকে শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি