এফডিসিতে কফিনবন্দি অঞ্জনাকে সতীর্থদের শেষ শ্রদ্ধা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:২৩ আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৯
এফডিসিতে (চলচ্চিত্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন) কফিনবন্দি অঞ্জনাকে সতীর্থরা শেষ শ্রদ্ধা জানালেন। আজ শনিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে অঞ্জনার মরদেহ বহনকারী গাড়িটি এফডিসিতে পৌঁছালে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সত্তর ও আশির দশকের ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনাকে চিরবিদায় জানাতে ভিড় করেন পরিচালক, নির্মাতা, অভিনেতা ও শিল্পী কলাকুশলীরা।
পাঁচ দশক আগে যেখানে কিশোরী অঞ্জনা রহমান দাঁড়িয়েছিলেন লাইট, ক্যামেরার সামনে। সেখানেই এলেন শেষবারের মত কফিনবন্দি হয়ে। সেখানে অঞ্জনাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পরিচালক ছটকু আহমেদ, নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও অভিনেতা সনি রহমানসহ চলচ্চিত্র ও অভিনয় জগতের অনেকে।
শেষবারের মতো এই চিত্রনায়িকাকে দেখতে আসেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ভক্ত থেকে সংবাদকর্মীরা। জোহরের নামাজের পর প্রথম জানাজা শেষে মরদেহ নেয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
অঞ্জনাকে শেষবিদায় জানাতে এদিন এফডিসিতে এসেছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জল, ইলিয়াস কাঞ্চন, চিত্রনায়িকা নূতন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, চিত্রনায়ক মেহেদী, অভিনেতা সুব্রত, নাসরিন, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, জয় চৌধুরী, রোমানা মুক্তিসহ অনেকে। পরিচালকদের মধ্যে ছটকু আহমেদ, শাহিন সুমন, মুশফিকুর রহমান গুলজার, চয়নিকা চৌধুরী, প্রযোজকনেতা খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
অঞ্জনার স্মৃতিচারণা করে এদিন চিত্রনায়িকা নূতন বলেন, একই সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের পথচলা। আমরা দুজন বোনের মতো ছিলাম। যেখানেই যেতাম, আমরা এত হাসিঠাট্টা করতাম, সবাই ভাবত আমরা আপন দুই বোন। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে সবশেষ দেখা হয়েছিল। আর দেখা হবে না ভাবতেই শূন্যতা অনুভব করছি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘অঞ্জনা আপার এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। একজন ভালো শিল্পীর বাইরে অসম্ভব ভালো একজন মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর প্রাণবন্ত ও হাসিমাখা মুখ মিস করব। সবাই তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করবেন।
চিত্রনায়ক উজ্জল বলেন, চলচ্চিত্রে নায়িকা হওয়ার আগে তিনি এ দেশের একজন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী ছিলেন। আমি দেখেছি, সে সময় বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথি থেকে সরকারি বড় বড় অনুষ্ঠানে তাঁর নাচের ডাক পড়ত। সবাই তাঁর নাচের প্রশংসা করত। পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে এসেও অনেক কালজয়ী সিনেমায় তিনি তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। এভাবে আমরা সবাই একদিন চলে যাব, আমাদের কাজই থেকে যাবে। যাঁরা চলে গেছেন, তাঁদের স্মৃতি যেন আমরা সব সময় স্মরণ করি।
তবে এদিন সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চাননি চিত্রনায়ক আলমগীর ও ইলিয়াস কাঞ্চন। কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই বলে জানান দুই অভিনেতা।
মায়ের অসুস্থতা নিয়ে মনি বলেন, আম্মু সুস্থ ছিল, জ্বর আসত আবার চলে যেত। ১৫ দিন আগে বাসায় মেহমান এসেছিল সবাইকে নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছে। তারপরই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ জ্বর ভেবে ওষুধ খাচ্ছিল, হাসপাতালে যেতে চাইত না। অসুস্থতা বাড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত চারদিন আগেও আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল।
কান্নায় ভেঙে পড়ে মনি বলেন, আমার সারা জীবনের আফসোস থাকবে। আমি কখনো বুঝতেই পারিনি আম্মুর ভেতরে এমন অসুস্থতা ছিল। এমন সুস্থ একজন মানুষের ভিতরে এতটা অসুখ কীভাবে বাসা বাঁধল।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১টা ২০ মিনিটে অঞ্জনা রহমান মারা যান। অভিনেত্রীকে বুধবার রাত থেকে হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই অঞ্জনা চলে যান না ফেরার দেশে।
সিনেমায় আসার আগেই অঞ্জনা পরিচিতি পান নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় কাজ শুরু করলেও তাঁর মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’। নায়ক সোহেল রানার বিপরীতে ওই সিনেমার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি অঞ্জনাকে। নিজের সেরা সময়ে ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির প্রায় সব নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি