ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বৈরাচার মুক্ত বিজয়ের কনসার্টে মুক্ত পাখিদের কলরব

  আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১৮  
আপডেট :
 ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৩৩

স্বৈরাচার মুক্ত বিজয়ের কনসার্টে মুক্ত পাখিদের কলরব
ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের স্বাধীনতাকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করে দিয়ে গেছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। তাই এবারের বিজয় দিবসও দেশবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে বরণ করে নিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। স্বৈরাচারের থাবা থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশের সংগীতাঙ্গনও। তার প্রমাণ মিললো বিজয় দিবসে আয়োজিত ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ কনসার্টে।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে যেসব জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে পারেননি, যেসব জনপ্রিয় ব্যান্ড হারিয়ে যেতে বসেছিলো, যেসব রকস্টাররা সবার অগোচরে পড়ে ছিলেন, যাদের জন্য তরুণ প্রজন্ম আফসোস করত তারা সগর্বে ফিরে আসলেন। গাইলেন, মাতলেন, মাতালেন। যেনো বন্দি পাখিরা মুক্তি পেয়ে কলরব করছে। তাদের কলরবে কণ্ঠে মেলালে লাখো ভক্ত-অনুরাগীরা।

বন্দি থেকে মুক্তি মিলেছে তা বুঝিয়ে দিলেন ৯০ দশকের জনপ্রিয় রকস্টার হাসান (আর্ক ব্যান্ড)। মঞ্চে আসার পর একাত্তর ও চব্বিশের শহীদের শ্রদ্ধা জানালেন। বললেন, দেশের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে বারবার। অবশেষে ৫ অগাস্ট সেই কাঙ্ক্ষিত দিন, অসংখ্য তরুণ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের হৃদয়ের বার্তা ধারণ করছে আমাদের হৃদয়। আর কোনো কষ্ট নাই আমাদের। তারপর দুই হাত প্রসারিত করলেন, উড়লেন মুক্ত পাখির মত। মনে হলো বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মুক্ত আকাশে পাখি উড়ছে। উড়তে উড়তে মঞ্চের একপাশ থেকে আরেক পাশে গেলেন। তার সঙ্গে পাখা মেলালেন দর্শক-স্রোতা।হাসানের এই উৎযাপন প্রশংসিত হচ্ছে সর্বমোহলে হলে। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে নাহিদুজ্জামান শিপন লিখেছেন, আপন ভুবনে ২০ বছর পর রকস্টারের বিজয় উদযাপন।

অন্য শিল্পীদের কণ্ঠেও বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। সঙ্গে বিগত দিনে জমে থাকা ক্ষোভ দেখা গেলে। তারা জানান, আওয়ামী লীগ শাসনামলে তাদের গান গাইতে দেয়া হত না। ১৬ বছর পর মঞ্চে উঠতে পেরেছে কেউ কেউ। তারা বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচারকে দেখতে চায় না। কনসার্টে আসা দর্শক-শ্রোতার মধ্যেও উচ্ছাসের কমতি ছিলো না। টানা ৯ ঘণ্টা ধরে শিল্পিদের সঙ্গে নেচে-গেয়ে মাতলেন।

বিজয়ের ৫৪ বছর উদযাপন করতে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শিরোনামে উন্মুক্ত কনসার্টের আয়োজন করে বিএনপি। সোমবার বেলা ২টায় শুধু হয় কনসার্ট। কনসার্ট শুরু আগে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দক্ষিণ পাশের লেন গাড়ি চলাচলের জন্য খোলা রাখা হয়। তবে সন্ধ্যার আগে মানুষের ভিড়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে কানায় কানায় ভরে যায় জনতায়। লাখো দর্শক-শ্রোতার উন্মাদনা চলে রাত এগারোটা পর্যন্ত। কনসার্ট শুরু থেকেই উপচেপড়া ভিড়ের ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে দর্শক। তবে এতে কনসার্টে কোনো প্রভাব পড়েনি। মঞ্চের কাছে যেতে না পেরে অনেকে আশপাশের বড় বড় গাছে উঠে গান উপভোগ করেন। বিজয় দিবস বরণ করতে আতশবাজিতে আলোকিত করা হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের আকাশ। দর্শকের চাপে ভেঙে পড়ে মিডিয়া কাভারেজ মঞ্চ। আহত হন বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীও।

শুরুতে দেশাত্মবোধক গান দিয়ে শুরু হয়ে কনসার্ট। একে একে মঞ্চ মাতান সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশিদ আলম, কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, আলম আরা মিনু, মনির খান, আসিফ আকবর, আলিয়া বেগম ও চিশতি বাউল, কণা, ইমরান, প্রীতম, ইথুন বাবু, মৌসুমী, নাসির খান, জেফারসহ অনেকে। এরপর মঞ্চে আসেন একে একে দেশের জনপ্রিয় ৭টি ব্যান্ড। জেমসের নগরবাউল মঞ্চে আসেস সবার শেষে। এর আগে আসেন ডিফারেন্ট টাচ, আর্ক ব্যান্ড, সোলস, শিরোনামহীন, অ্যাভয়েড রাফা ও সোনার বাংলা সার্কাস। আর্সেলের পারফর্ম করার কথা থাকলেও তাদের দেখা যায়নি।

সবার আগে বাংলাদেশের আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বাংলাদেশের গান, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের শিল্পী, আমাদের কৃষ্টি কালচার। গত ১৬ বছর আমাদের মহান বিজয় দিবস স্বাধীনভাবে, সত্যিকার অর্থে উদযাপন করতে পারিনি। অনেক বাধা ছিল, অনেক বিপত্তি ছিল। ৫ আগস্টের পর এই বিজয় দিবস আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক। বিগত বছরগুলোতে অনেক কনসার্ট হয়েছে। সে কনসার্টে প্রচুর পরিমাণে হিন্দি গান হয়েছে। ভিন দেশী শিল্পী, ভিন দেশী গান, ভিন দেশি সংস্কৃতি। আমাদের এই যুব সমাজকে আমাদের সংস্কৃতি থেকে অনেক দূরে রেখেছে। এই কনসার্টকে আমরা বাংলাদেশের শিল্পী, বাংলাদেশের গানকে প্রাধান্য দিচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামের এই প্ল্যাটফর্মটি। প্ল্যাটফর্মটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। সদস্যরা হলেন- সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রকিবুল ইসলাম বকুল, আবদুল মোনায়েম মুন্না, এসএম জিলানী, সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, নুরুল ইসলাম নয়ন, রাজিব আহসান, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, জাহিদুল ইসলাম রনি, এহসান মাহমুদ।

এই প্ল্যাটফর্ম ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের পর বিদেশি অপশক্তি ও সংস্কৃতির আগ্রাসন রুখে দিয়ে দেশীয় গান ও শিল্পীদের উৎসাহিত করবে বলে জানান।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত