জেমসের সঙ্গে তুলনাই আমাকে শেষ করেছে: নোবেল
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৪৬
ভারতের কলকাতার ‘সা রে গা মা পা’য় অংশ নিয়ে খ্যাতি পাওয়া তরুণ গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল জানিয়েছেন, দেশের কিংবদন্তি রকস্টার নগর বাউল জেমসের সঙ্গে তুলনা। যেই তুলনা তাকে শেষ করে দিয়েছে। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এই শিল্পী। জানান আবার গান ও অভিনয়ে ফিরছেন তিনি।
নোবেল বলেন, আমার সব অভিযোগ নিজের ওপরেই। আমি আমাকে যত্ন করতে পারিনি। তাই শ্রোতাদের অসম্ভব ভালোবাসা পেয়েও তা ধরে রাখতে পারিনি। এই দোষ শুধুই আমার। কারণ তারকাখ্যাতি এবং অর্থ একসঙ্গে পেয়ে গিয়েছিলাম, যা আমাকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। আমি কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করতাম না, যা মন চাইত তাই করতাম। কোনো কাজকে আমি গুরুত্ব দিতাম না। যাকে তাকে অপমান করে কথা বলতাম। কিন্তু এমনটা করা আমার উচিত হয়নি। যেটি আমি এখন বুঝতে পারছি। তাইতো চার বছর বিরতির পর আবারও ফিরে আসার চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত নিজকে গড়ার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি। সেই চ্যালেঞ্জে সফল হতে নিজের সঙ্গেই যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আশা করছি এবার দর্শকদের ভালোবাসা ধরে রাখতে পারব। কারণ এই ভালোবাসা যদি ধরে না রাখতে পারি তাহলে কালের গর্ভে আমি হারিয়ে যাব একদিন। যেমন হারিয়ে ছিলাম এই চার বছর। দীর্ঘ এ সময়টিতে আমি একটি বিষয় উপলব্ধি করেছি। কাজ ছাড়া আমাকে কেউ মনে রাখবে না, মনে রাখেনি। তাই এবারের ফিরে আসার যুদ্ধ শুধুই আমার একার। কারণ শাস্তি যা পাওয়ার আমি পেয়েছি। এখন এই ভুলগুলো শুধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।
নোবেলের কাছে জানতে চাওয়া হয় একটি সময় তার সঙ্গে দেশের ব্যান্ড সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি নগর বাউল জেমসের সঙ্গে তুলনা করা হতো। সেই তুলনা কী তার ক্যারিয়ারের জন্য উপকার হয়েছিল নাকি ক্ষতি? উত্তরে নোবেল বলেন, ‘বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, লাই দিয়ে মাথায় তুলে দেয়া। আমার এমনটাই হয়েছিল। রিয়্যালিটি শো আমাকে তারকাখ্যাতি এনে দেয়। এরপর আমার ভক্তরা আমাকে ভালোবাসা দিয়ে মাথায় তুলে দেয়। এ বিষয়ে আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না, কিন্তু আমি বিষয়টি উপভোগ করে নিজেকে তখন হারিয়ে ফেলি। এরপর পরে বুঝতে পারি, জেমস ভাইয়ের সঙ্গে তুলনাই আমাকে সেসময় শেষ করে দিয়েছিল। কারণ জেমস ভাই ভিন্ন বিষয়। তিনি দেশের ব্যান্ড সংগীতের একটি স্তম্ভ। আমি কেন- বিশ্বের কেউই সংগীতে তার সমতুল্য হতে পারবেন না। গানে তার আলাদা দর্শন রয়েছে। সেই দর্শনের সঙ্গে কারোরই মিলবে না। এছাড়া জেমস ভাই এখন পর্যন্ত শতশত গান গেয়েছেন। মৌলিক গানের দিক থেকে আমি তার ধারে কাছেও নেই। অর্জনের সব দিক থেকেই তিনি আমাদের থেকে শত শত মাইল দূরে। তাই শ্রোতাদের একটা কথাই বলব। যারা আমার গান পছন্দ করেন, তারা আমাকে কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না প্লিজ। কারণ সংগীতে আইয়ুব বাচ্চু, এন্ড্রু কিশোর ও আসিফ আকবর ভাইদের অর্জন আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউই জীবনভর চাইলেও তাদের মতো হতে পারবে না।
সিনেমায় ভিলেন চরিত্রে অভিনয় অভিনয় প্রসঙ্গে বলেন, আমার ইতিহাসের প্রতি একটা দুর্বলতা আছে। আমি অনেক ডকুমেন্টারি দেখি। তো এসব ডকুমেন্টটি থেকে আমি একটি বিষয় নিশ্চিত যে, পরাজিত মানুষগুলোই সবসময় ভিলেন হয়ে যায়। আর জয়ীরা সবসময়ই নায়ক হয়। সেই জায়গা থেকে আমার ভিলেন চরিত্রের প্রতি আলাদা ভালো লাগা রয়েছে। তাই নতুন একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সেখানে দর্শক আমাকে ভিলেন রূপে দেখবেন। কারণ এই ভিলেনের চরিত্রটি আমার জীবনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনই বলতে পারছি না। তবে কাজটি ভালো হবে এ বিষয়ে দর্শকদের আমি নিশ্চিত করতে পারি।
প্রসঙ্গত, ওপার বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি ‘সা রে গা মা পা’য় একের পর এক ধামাকা পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে ২০১৮ সালে বেশ আলোচনায় আসেন মাইনুল আহসান নোবেল। এরপর কবি নজরুলের কারার ঐ লৌহকপাট, নগর বাউল জেমসের মা ও আইয়ুব বাচ্চুর এই রুপালি গিটার ততদিনে কলকাতার মানুষের কাছে তাকে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। নোবেল এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নিজের মৌলিক গান প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে ‘অভিনয়’, ‘তোমার মনের ভেতর’, ‘মেহেরবান’ ও ‘অপরাধ’ উল্লেখযোগ্য। শিল্পীর এমন ফিরে আসার খবরে এরই মধ্যে শ্রোতাদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বাংরাদেশ জার্নাল/কেএইচ