ঢাকা, রোববার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছাপা শুরু হয়নি, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাবে কখন

  প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৯  
আপডেট :
 ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮

ছাপা শুরু হয়নি, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাবে কখন
ছবি: সংগৃহীত

বিগত বছরগুলোতে বছরের প্রথম মাসেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার যে প্রচলন ছিল তাতে এবার ছেদ পড়তে পারে। শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন, কাগজ সংকট, পাণ্ডুলিপি দেরিতে পাওয়াসহ নানা কারণে এমনটা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এমন খবর পাওয়া গেছে।

ছাপাখানা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ফেব্রুয়ারির আগে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেয়া যাবে না বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

এদিকে, পাঠ্যবই মুদ্রণ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগামী বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেয়ার ‘আশার বাণী’ শোনালেও সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

সংস্থাটি এখন বলছে, ৪০ কোটি ১৬ লাখ বইয়ের সবগুলো জানুয়ারির শেষ দিকে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

ছাপাখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির আগে বই সব শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া কঠিন হবে। এজন্য শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন, পাণ্ডুলিপি দেরিতে পাওয়াসহ নানা কারণ তুলে ধরেন তারা।

এতে করে বছরের প্রথম মাসেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার যে প্রচলন ছিল বিগত বছরগুলোতে তাতে এবার ছেদ পড়তে যাচ্ছে।

বই পরিমার্জন হয়ে ছাপাখানায় যেতেই পাঁচ মাস দেরি হয়েছে এবার। রাজধানীর কয়েকটি ছাপাখানা ঘুরে নিশ্চিত হওয়া গেছে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ চললেও মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ শুরুই হয়নি।

এমন প্রেক্ষাপটে বছরের শুরতেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে স্বীকার করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসানও।

তিনি বলেন, “বই পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হলেও তা ফেব্রুয়ারিতে যাবে না। আশা করছি, ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।”

নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে পুরনো শিক্ষাক্রমে ফেরার ঘোষণা আসে গত সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন। এনসিটিবি বলেছিল, ২০১২ শিক্ষাক্রমের বইগুলো পরিমার্জন শেষে ছাপানো হবে এবং রীতি অনুযায়ী জানুয়ারির শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।

সাধারণত জুনে নতুন বছরের বইগুলোর পাণ্ডুলিপি ছাপাখানায় পাঠানো হয়। কিন্তু ৫ অগাস্টের পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৩ সালে বাস্তবায়ন শুরু হওয়া ‘অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষাক্রম’ বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে ঘোষণা দেয়। ফলে এক যুগ আগে ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের বই ‘ঘষে-মেজে’ নভেম্বরে প্রেসে পাঠানো শুরু হয়।

গত কয়েক বছর পাঠ্যবইয়ের একাংশ ভারতেও ছাপা হত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরের বাস্তবতায় এবার শুধু দেশি ছাপাখানাগুলো বই ছাপার কাজ করছে।

ছাপাখানা মালিকদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, মাধ্যমিকের বইয়ের কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে তদারকি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পেতেই দেরি হয়েছে। এরপর কাগজ সংকট, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ব্যাংক ঋণ না পাওয়াসহ কয়েকটি কারণে ছাপার কাজে অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, “আমরা এখনও তদারকি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাধ্যমিকের বই ছাপার অনুমোদন নিতে পারিনি।

“কাজ যে করব সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না। রাতের দিকে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। আমরা ব্যাংক লোন নিয়ে কাজ করি। কিন্তু এবার লোন পেতেও ভোগান্তি হচ্ছে। এরপর রয়েছে কাগজ সংকট। মাধ্যমিকের বইয়ের কাজ সবগুলো প্রেস একসঙ্গে শুরু করতে চাচ্ছে। তাই এ কাজের জন্য যে কাগজ দিতে হবে সেটির সংকট দেখা দিয়েছে।”

কবে নাগাদ সব বইয়ের কাজ শেষ হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আসলে থিউরিটিক্যালি জানুয়ারিতে কাজ শেষ হবে বলা গেলেও বাস্তবতা কঠিন। সব বইয়ের কাজ শেষ হতে জানুয়ারি মাস চলে যাবে। তাই ফেব্রুয়ারির আগে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।”

তিনটি বইয়ের কাজ অগ্রাধিকারভিত্তিতে শেষ করতে বলার তথ্য দিয়ে আনোয়ার হোসাইন বলেন, “মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই আগে শেষ করতে বলেছে এনসিটিবি। আমরা সে বইগুলোর কাজ আগে শেষ করে পাঠিয়ে দেব।”

‘লেটার এন কালার’ নামের একটি ছাপাখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সিরাজ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ চলছে। মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজ শুরুই করা যায়নি। কারণ হিসেবে তিনি এখনও তদারকি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না পাওয়ার কথা বললেন।

কবে নাগাদ বই ছাপার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সব কাজ শেষে হতে ফেব্রুয়ারি মাস চলে আসবে। এর আগে বইয়ের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।”

পাঠ্যবই মুদ্রণের মান তদারকিতে এনসিটিবি ও ছাপাখানাগুলোর মধ্যে একটি তৃতীয় তদারকি কোম্পানি কাজ করে। এনসিটিবি নিয়োজিত দুটি কোম্পানি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই ছাপতে ছাপাখানাগুলোতে ব্যবহৃত কাগজ ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি ‘মানসম্মত’ কি না তা যাচাই করে দেখে। তাদের অনুমোদন পাওয়ার পরে ছাপার কাজ শুরু করে ছাপাখানাগুলো।

চলতি বছর ‘ব্যুরো ভেরিটাস’ নামের একটি কোম্পানিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই তদারকির দায়িত্ব দিয়েছে এনসিটিবি। প্রাথমিক পর্যায়ের বই তদারকির দায়িত্ব পেয়েছিল ‘ফিনিক্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

বই ছাপার কাগজ ও আনুষঙ্গিক অনুমোদন কবে থেকে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে ব্যুরো ভেরিটাসের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আফজাল কবির ভূঁইয়া বলেন, “রোববার আমরা এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সোমবার বিজয় দিবসের ছুটি। তাই মঙ্গলবার থেকে কাগজ আসবে। তারপর অনুমোদনের কাজ শুরু করতে পারব আমরা।”

পাঠ্যবই পরিমার্জন তদারকির জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গঠন করা হলেও নানা বিতর্কের জেরে ২৮ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বাতিল হয়।

পরে বিষয়ভিত্তিক বেশ কয়েকটি কমিটি করে দেওয়া হয় এবং ওই কমিটিগুলোর সদস্যরা বই পরিমার্জন করেছেন।

মাধ্যমিকের বইয়ে যত পরিবর্তন

মাধ্যমিক পর্যায়ের বইগুলোর পেছনের মলাট থেকে শেখ হাসিনার বাণী বাদ দিয়ে সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।

আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থান ও জুলাই-অগাস্ট শহীদের বীরত্বগাথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বইতে জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থান ও এসময়ের শহীদের বীরত্বগাথা নিয়ে আটটি কনটেন্ট যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে থাকার পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ঘোষণা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর তাকে দেওয়া বঙ্গবন্ধু উপাধির বিষয়গুলো বইতে থাকবে। এর সঙ্গে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত হবে। ২৬ ও ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে ঘোষণাগুলোও পাঠবইতে অন্তর্ভুক্ত হবে।

ইতিহাসের এসব বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বইয়ের পাণ্ডুলিপিতে আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত