ভুয়া পরিচয়ে দেড় বছর ধরে ঢাবি থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছে তরুণ
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯
রাজশাহীর ছেলে মেহেদী হাসান। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) ২০২২-২৩ সেশনের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা মহলে পরিচিত। আবার কেউ কেউ তাকে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী হিসেবেও জানে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই না।
গত দেড় বছর ধরে উপরে ঢাবি শিক্ষার্থী পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব,সংগঠন এবং পরিবহন সুবিধা ভোগ করে আসছে মেহেদী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও শিক্ষার্থী হিসেবে নানা মহলে পরিচিত হয়ে গেছে সে। স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হলে অবস্থান করতো সে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোতে খোঁজ নিলে তার ছাত্রত্বের সত্যতা মিলেনি।
ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল এবং আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মেহেদীর শিক্ষার্থী না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী মেহেদীর প্রচারিত পরিচয়টি ভুয়া। তার প্রচারিত দুই বিভাগের কোনোটিতেই শিক্ষার্থী হিসেবে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে মেহেদী বলে,'ভর্তি পরীক্ষায় আমি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছি। কিন্তু ভর্তি হইনি। আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে ফরাসি ভাষায় কোর্স করছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দেয়া তথ্যের কথা বলা হলে সে আর কথা বলে না। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস (বিএনসিসি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব,ঢাকা ইউনিভার্সিটি রানার্স কমিউনিটি, রাজশাহী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ(রাসা) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব এবং সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাকে বিভিন্ন সময় দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চৈতালী বাসে নিয়মিত যাতায়াতসহ চৈতালি বাসে যাতায়াতকারীদের সংগঠন চৈতালী কমিউনিটির বিভিন্ন প্রোগ্রামেও তাকে একাধিকবার দেখা যায়।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস (বিএনসিসি) এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্নটিজেন্টের আর্মি উইংয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে এক বছর ধরে অংশগ্রহণ করে আসছে মেহেদী।
এবিষয়ে বিএনসিসি আর্মি উইংয়ের ক্যাডেট ইয়াছিন বিজয় বলেন, নকল পে- ইন-স্লিপ জমা দিয়ে মেহেদী বিএনসিসির বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে তার ছাত্রত্বের সত্যতা পাইনি। আমরা তার বিষয়ে শীঘ্রই প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রাজশাহীর শিক্ষার্থী সংগঠন 'রাসার' নানা প্রোগ্রামে মেহেদীকে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্ত নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে সংগঠনের পক্ষ থেকে নবীনবরণও নিয়েছিল সে।
এবিষয়ে রাজশাহীর শিক্ষার্থীদের সংগঠন রাসার সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ মাহমুদ বলেন,'মেহেদীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী হিসেবে জানতাম। ভুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে কখনো সন্দেহ হয়নি। অবহিত করার পর লিখিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাকে সংগঠন থেকে বয়কট করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী পরিচয়ে বিভিন্ন ক্লাব,সংগঠনে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বাসে যাতায়াতসহ নানা সুযোগ -সুবিধা গ্রহণ করে সে।
এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদকে জানালে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ